আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"স্মরণে স্যামসন এইচ চৌধুরীঃ ব্যাবসাকে যিনি রুপ দিয়েছিলেন শিল্পে এবং মানবসেবায়"

“বাংলাদেশের ব্যাবসায়িরা যখন হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, ব্যাংকের ঋণের খেলাপ এবং কর ফাকি দেয়ার এক অদৃশ্য রেইসে নেমেছেন সেইখানে এমন একজন মানুষ ছিল যে সময় এবং স্রোতের বিপরীতে চলেছেন”। “ব্যাবসায় মানে মুনাফা আর এই মুনাফা অর্জনের দৌড়ে সবাই যখন মুনাফা অর্জনমুখি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ব্যাস্ত তখন একজন ব্যক্তি যিনি তার ব্যাবসায় সম্প্রসারন করেছেন এমন সব খাতে যেখানে হয়ত মুনাফা কম হবে কিন্তু দেশের মানুষের কল্যাণ হবে”। আজকেই ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ওয়ালটনের সেলস ম্যানেজার এর সাথে কথা বলছিলাম এবং এটা আমার এক ধরনের স্বভাব বলা যায় ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করা তো তাদেরকে ধন্যবাদ জানালাম যে অন্তত আপনারা যাই করছেন ভাল করছেন এবং আরও এগিয়ে যান কেননা আমাদের আরও ওয়ালটন প্রয়োজন যা আমাদের আমদানির উপর নির্ভরতা কমাবে। আর এরকম কাজের শুরুটা হয়েছিল এই ব্যাক্তির হাত ধরে। তিনি রপ্তানিমুখি ব্যাবসা স্থাপনের চেয়ে চেয়েছিলেন আমদানি হ্রাস করা যায় এমন ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠা করতে।

প্রতিটি শিল্প কারখানা আর গার্মেন্টস যখন প্রতিদিন শ্রমিক বিদ্রোহে জর্জরিত তখন তার কারখানার শ্রমিকরা তাকে শ্রদ্ধা করত পিতৃতুল্য হিসেবে। তার সারা জীবনের উদ্দেশ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪৫০০০ হাজার কর্মচারীর কর্মসংস্থান ছিল । তার প্রতিষ্ঠানের একটি সুন্দর নিয়ম ছিল সেটি হল প্রতিষ্ঠানের সবাইর জন্য দুপুরের খাবারের ব্যাবস্থা এবং সেটি ডিরেক্টর থেকে শুরু করে সিকিউরিটি গার্ড পর্যন্ত একই। সর্বাধিক করদাতা হয়েছেন বহুবার, তার গার্মেন্টস নেই তবুও তার প্রতিষ্ঠান স্কয়ার আমাদেরকে এনে দিচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা এবং তার হসপিটাল যা তিনি মৃত্যুর কিছু সময় আগে স্থাপন করেছিলেন সেখানে তার প্রয়াস ছিল আর একজন মানুষকেও যেন যেতে না হয় বিদেশ হাজার হাজার ডলার ব্যয় করে। অর্থাৎ একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন মানুষটির সব কিছুর পিছনে উদ্দেশ্য ছিল যে গোটা দেশ যাতে সয়ংসম্পূর্ণ হয় তাইতো দেশের অর্থকে বিদেশ নিয়ে যেতে দেখলেই কোন পন্ন্যের বিপরীতে চেষ্টা করতেন যাতে সেইখানে বাধ সাধা যায় নিজে সেই পণ্য তৈরি করতে।

ঠিক যেই কাজটি করে এসেছে ভারতের “টাটা গ্রুপ”। সবাই যখন ভারতে গার্মেন্টস আর টেলিকম এর ব্যাবসা করে কামাচ্ছে কোটি টাকা আর তারা তখনো বানাচ্ছে বাস,ট্রাক আর গাড়ি শুধুমাত্র দেশের প্রতি ডেডিকেসন থেকেই। ঋণখেলাপিদের যুগেও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ আলাদা। অসামান্য দক্ষতায় এগিয়ে নিয়েছিলেন তার প্রতিষ্ঠানগুলিকে। বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পকে তুলে নিয়ে গিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়,বলা চলে পথ প্রদর্শক।

আজ স্যামসন এইচ চৌধুরী প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী, বাংলাদেশের আজকের এই সামগ্রিক ব্যাবসায়ের যেই প্রসার সেইখানে তার একটি বড় অবদান রয়েছে কেননা ঐযে বললাম তার ইচ্ছে ছিল দেশের তরে কিছু করার তাই যেকোনো রকম ব্যাবসায় হোক না কেন এবং ব্যাবসায়ি যেই হোক তাকে কোন প্রকার সাহায্য করতে তিনি কোন দিন কার্পণ্য করেননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এই ব্যাক্তিটি ব্যাপক অবদান রেখেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার প্রতিষ্ঠাননেও নেমে আসে সেই দমন-নিপীড়ন। তার এলাকা পাবনা এবং ঢাকায় সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধাদের তিনি বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন তিনি এবং বিভিন্ন দেশে নানা যায়গায় তিনি পাকিস্থানিদের অপকরমগুলিকে তুলে ধরেন। যদিও আমাদের রাষ্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছিলেন তার পরও তাকে আরও বড় সম্মাননা দেয়া প্রয়োজন ।

তবে সেটা তার জন্য নয় তাকে সম্মান দিতে হবে আমাদের জন্য কেননা এটি হতে পারে একটি অনুকরুনিয় দৃষ্টান্ত এই প্রজন্মের ব্যাবসায়িদের জন্য যে দেশের তরে কাজ করলে দেশ সম্মান দিতে কার্পণ্য করে না। তাই “স্বাধীনতা পুরস্কার” কিংবা এরকম মর্যাদার কোনও সম্মাননায় তাকে ভূষিত করা গেলে অবশ্যই একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত হবে তাতে কোন সন্দেহই নেই। লিখার ফেসবুক লিঙ্ক  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।