আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রম্যগল্পঃ সম্ভাব্য বউ যখন মামী, হতবাক এই আমি !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!

-আমি চেষ্টা করে দেখি ?
মেয়েটি আমার দিকে ফিরে তাকালো ! এমন একটা ভাব যেন আমাকে এই মাত্র দেখলো !
ফাজিল মেয়ের একটা ফাপ্পর লাগানো দরকার !
ছি: কি ভাবছি !
নিজেকে বুঝালাম !
সাবধান ! এই মেয়ে সামনে তোমার সম্ভাব্য বউ সুতরাং কুনো খারাপ কথা নহে !
মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-অনেকক্ষন ধরে চেষ্টা করছি ! জানলাটা মনে হয় জ্যাম হয়ে আছে !
-হুম ! তাই তো মনে হচ্ছে ! আমি চেষ্টা করবো ?
-প্লিজ !

বাসের জানালাটা আসলেই একটু জ্যাম মনে হল । খুলতে একটু বেগ পেতে হল তবে খুলে ফেললাম ! না খুললে আবার মান সম্মান থাকতো না ! সম্ভাব্য বউয়ের জন্য যদি সামান্য একটা বাসের জানালাই খুলতে না পারলাম তাহলে কেমন করে হবে !

-থেঙ্কিউ !
-মাই প্লেজার !

মেয়েটা আর কিছু বলল না ! খোলা জানালা দিয়ে প্রবল বেগে বাতাস আসছে । মেয়েটি সেই বাতাসে নিজের চুল টুকু আরো একটু খুলে দিল ! বাতাসে চুল উড়তে লাগলো ! আমি অবাক হয়ে মেয়েটিকে দেখতে লাগলাম !
এই মেয়েটি আসলেই কি আমার বউ হতে যাচ্ছে ?
অবশ্য এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না ! মেয়ে দেখা মানেই কিন্তু বিয়ে হাওয়া না !


ঘটনা আজকের সকালের ! বাসায় কদিন থেকে একাই ছিলাম ! মা আর বোন গেছে গ্রামের বাসায় ! আমি একাই পরে আছি অফিসের কাজে ! প্রতিদিনকার মত আজকেও অফিসে গেছি ! বারোটার দিকে মার ফোন !
-জাদীদ তুই কই এখন ?
-মা ! তুমি জানো না আমি এখন কোথায় থাকি ! অফিসে !
-শোন ! এখনই অফিস থেকে বের হ ! সোজা চুয়াডাঙ্গায় চলে আস !

আমার ভয় হল কি না হল আবার । নানীর শরীর আমি যতদুর জানি বেশ ভাল ! তাহলে কি সমস্যা !
অন্য কারো শরীর খারাপ নাকি ?
কিন্তু মায়ের কন্ঠস্বর তো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে ! তার মানে খুব একটা বিপদের কথা না !
কিন্তু তাহলে এতো জরুরী তলব কেন ?
আমি মাকে বলল
-মা ! আমি অফিস ছেড়ে কেমন করে আসবো ?
-আমি কিন্তু শুনতে চাইনা ! যদি বস ছুটি না দেয় তাহলে চাকরী ছেড়ে দিয়ে আয় !
মানে কি ! আমি আর কিছু বললাম না । মনে হল জরুরী কিছু ! আর মায়ের কথার অবাধ্য কেমনে হই ? মাকে বললাম
-আচ্ছা আমি আসতেছি !

একটু অবশ্য বিরক্ত লাগছিল ! দুপুরে একটা মিটিং ছিল ! হল না ! বসের কাছ থেকে ছুটি পেতেও বেশ বেগ পেতে হল ।

যাই হোক যখন চুয়াডাঙ্গার বাসে উঠলাম তখন বাজে দুইটা !
আমাদের ছোট মফস্বল এলাকা ! ঢাকা থেকে কেবল একটা কোম্পানির এসি বাস ছাড়ে ! দিনে দুইটা মাত্র ! একটা সকাল আটটার সময় আর একটা বেলা দুইটা !

কিন্তু বাসে উঠেই মেজাজটা একটু খারাপ হল ! আমার পাশের সিটে একটা মেয়ে বসে আছে ! কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনছে !

পারতপক্ষে বাসে পাশে সিটে কোন মেয়ে বসলে যে কোন ছেলেই খুশি হবে কিন্তু লং জার্নিতে মেয়েরা পাশে বসলে আরাম করে বসা যায় না !
মেয়েদের জন্য সবসমসয় একটা এটেনশান ভাব করে থাকতে হয়, পাছে আবার কি হয় ! নিজের মান ইজ্জত বাঁচানোর জন্য ঠিক মত আরাম করে ঘুমানো যায় না যদি মেয়েটার কাধে মাথা নুইয়ে পরে ! হাত পা ছড়িয়ে বসাও যায় না এই ভয়ে যে যদি মেয়েটার মেয়েটার পায়ের সাথে পা লেগে যায় ! মেয়েটার আবার তখন কি মনে করবে ! ইত্যাদি ইত্যাদি !


আমি মুখটা বিরক্ত হয়েই বসে পড়লাম ! বসতে বসতেই ফোন বেজে উটলো ! বোন ফোন দিয়েছে !
-জাদীদ কই তুই !
-এই তো ! বাসে উঠেছি !
-শোন ভাল কাপড় এসেছিস তো ?
-এইটা আবার কি ধরনের কথা হল ?
-আরে খেপিস কেন ? এমনি বললাম ! শোন নীল রংয়ের ঐ শার্ট টা আছে না ? ঐ শার্ট টা এনেছিস তো ?
-হুম ! কেন ?
-ঐটা তে তোকে দারুন লাগে ! আর চুল টা কাটিয়েছিস ?
-এমন ভাবে কথা বলছো যেন আমাকে মেয়েরা দেখতে আসবে !

আমার এই কথা বলতেই ও হেসে উঠলো ! হাসতেই হাসতেই ফোন রেখে দিল !
আমার তখনই মনে হল আচ্ছা এমন কিছু না তো আবার ?
আম্মা আমাকে মেয়ে দেখতে ডেকেছে !
হতে পারে !! মা চাকরী পাওয়ার পর থেকেই আমাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে !
আমার মনে এই সব চিন্তা ভাবনা খেলছে তখনই পিলু মামার ফোন এসে হাজির !
পিলু মামার ফোন পেয়ে আমি মোটামুটি শিওর হয়ে গেলাম যে আমার বিয়ের ব্যাপারে কিছু একটা ! কারন পিলু মামা আমার পারিবারিক ঘটক হিসাবে পরিচিত ! নিজে এখনও বিয়ে করে নাই কিন্তু পরিবারে যখনই কারো বিয়ের বিষয়ে কোন কথা হবে তখন সবার আগে পিলু মামা হাজির !


-মামা কই তুমি ?
মামার সাথে আমার বয়সের পার্থক্য খুব একটা বেশি নাই ! আজকে মামার কন্ঠও দেখি বেশ আনন্দ আনন্দ ভাব !
আমি মামাকে বললাম
-মামা এই বাসে উঠেছি ।
-হুম ! ভাল ! এসে পড় ! জলদি এসে পড় !
-মামা !
-বল !
-বলতো কি ব্যাপার ? বিয়ে শাদীর ব্যাপার না তো ?
-আরে এতো টেনশন কেন নিচ্ছিস ?
-বল না মামা ?
-হুম !
-সত্যি !
-হুম !
-মেয়ে কোথাকার ?
-এই যে আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামে ! কিন্তু মেয়ে থাকে ঢাকায় !
-তাই নাকি ?
-হুম ! মেয়েও মনে হয় আসতেছে !
-মানে কি ?
-আমি খোজ নিয়ে জেনেছি ! মেয়েও তোর মত জানে না ! তাকেও জরুরী ভিত্তিতে বাসায় আনা হচ্ছে ! মেয়ে ঢাবিতে পড়ে । জীব বিজ্ঞানে মনে হয় !


ফোন রাখার পরে আমি একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম ! পাশের মেয়েটি তখন আপন মনে গান শুনতেছে ! তাহলে সত্যি সত্যি আজকে মেয়ে দেখতে যাচ্ছি ! গলায় দড়ি পরার সময় হয়ে এসেছে ?
আমার মনযোগ মেয়েটার দিকে যেত না, যদি না মেয়েটার একটা ফোন আসতো !
মেয়েটার কোন বন্ধু কিংবা ক্লাসমেইট ফোন দিয়েছে মনে হল ! কারন পুরোটা সময় মেয়েটা একটা ল্যাব আর প্রাক্টিক্যাল নিয়ে কথা বলছিল !
কয়েকট শব্দ শোনার পরেই আমার কানটা খাড়া হয়ে গেল ! মেয়েটা যে শব্দ গুলো ব্যবহার করছিল আমার মনে হল মেয়েটা জীব বিজ্ঞান প্রাক্টিক্যাল নিয়ে কথা বলছে ! জরুরী কাজে মেয়েটাকে বাসায় যেতে হচ্ছে ! দুতিন দিনের ভিতরেই ফিরে আসবে !


আমার দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে একটু দেরি হল না ! আমাদের এলাকায় এই একটাই ভাল গাড়ী । অন্তত কোন মেয়ে অবশ্যই এই গাড়িতে যেতে চাইবে যদি সে একা একা যেতে চায় !
তার উপর মেয়েটাকে জরূরী কাজে বাসায় যেতে হচ্ছে এবং মেয়েটা জীব বিজ্ঞানে পড়ে !
তিনটা তিনটা পুয়েন্ট মিলে যাচ্ছে !
তাহলে কি দাড়াচ্ছে ?
এই মেয়েটাকেই দেখতে যাচ্ছি ?
এই মেয়েটাই কি আমার সম্ভাব্য বউ হতে যাচ্ছে !

যাকে দেখে একটু আগে বিরক্ত লাগছিল তাকে দেখেই এখন একটা অন্য রকম ভাল লাগা শুরু হল ! এতোক্ষন পরে মেয়েটাকে একটু ভাল করে লক্ষ্য করলাম !
মেয়েটার বলতে গেলে ফর্সা ! নাকটা একটু বুচা তবে ঠিক আছে ! ঠোটের ঠিক বাঁ কোনায় একটা ছোট্ট তিল আছে !
বাহ !
তিল ওয়ালা সুন্দরী !


-আপনি জুওলজিতে পড়েন ?
-আমি ?
-হুম !
-হ্যা ! কিভাবে বুঝলেন ?
-না একটু আগে মনে হয় আপনি কারো সাথে কথা বলছিলেন প্রাক্টিক্যাল নিয়ে ! শুনে মনে হল !
-ও ! তাহলে আপনি আমার কথা শুনছিলেন ?
-বলতে পারেন ! সুন্দরী মেয়েদের দিকে সবারই একটু ........।
আমি কথাটা শেষ করলাম না !
তবে প্রসংশা মনে হল মেয়েটির ভাল লেগেছে !
-আমি আহমেদ জাদীদ ! আপনি ?
-আমি মিলি !
-ঢাবিতে পড়েন ?
-জি ! আপনি ?
-আমি পড়তাম এক সমসয় ! এখন একটা জব করি !
-ও !

এই ভাবে কথা চলতে থাকে ! আস্তে আস্তে মিলির সম্পর্কে আরো জানতে শুরু করি ! মেয়েটার বাড়ি আসলেই আমাদের পাশের গ্রামে ! ওকে কি কারনে বাসায় ডাকা হয়েছে এটা ও এখনও জানে না ! সকালের বাস টা মিস করেছে তাই এখান দুইটার গাড়িতে বাসায় যাচ্ছে !
আমি আরেকটু বাসের ভিতরেও তাকিয়ে দেখেছি ! মিলি ছাড়াও আরো তিনটা মেয়ে যাচ্ছে গাড়িতে কিন্তু একটারও মনে হয় না আমার ওদের কে আমি দেখতে যাচ্ছি !!


আমি মনে মনে হাসতে লাগলাম ! বারবার মনে হতে লাগল যে মিলির মনের অবস্থা কেমন হবে যখন ও আমাকে দেখবে ওকে দেখতে এসেছি !
-হাসছেন কেন ?
আমি মিলির কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম !
-জি !
-বলছি একা একা হাসছেন কেন ?
-এমনি হাসছি ! কিছু একটা মনে পরে গেল তো তাই হাসছি !
-কি মনে পরে গেল ?
-বলবো ! তবে এখন না ! আবার যখন দেখা হবে তখন !
-আবার দেখা হবে ?
-হতেও পারে ! একই এলাকায় যখন থাকি !!
আমি জানি মিলি কি বুঝলো তবে কিছু বুঝলো না !


বাস চলতে লাগলো দ্রুত গতিতে বাড়ির দিকে আমি ভাবতেছি সামনের দিন গুলোর কথা !


দুই সপ্তাহ পর !
মিলিকে আসলেই অনেক সুন্দর লাগছে ।

লাল বেনারশিতে ওকে দারুন মানিয়েছে ! আমি তাকিয়ে আছি ! আজকে আমাদের বাসায় বৌভাতের আয়োজন করা হয়েছে !
মিলি বসে আছে স্টেজে পেতে রাখা বড় চেয়ারটাতে !
-এই জাদীদ !
আমি চলে যাচ্ছিলাম ঘরের ভিতর তখনই পিলু মামার ডাক শুনতে পেলাম !
আমি কিছু না বলে তাকিয়ে আছি !
-এই দিকে আয় !
যাবো কি না ভাবছি কিন্তু না গিয়ে উপায়ও নাই ! মামা আবার কি মনে করবে ! আমি মামার কাছে হাজির হলাম !
-কি রে বিয়ের পর থেকে তুই একদম দুরে দুরে রয়েছিস ! আমার কাছে আসছিস না ব্যপার ক বলতো ! তোর মামী পছন্দ হয় নি !
আমি মিলির দিকে তাকালাম ! মিলিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে । চোখে দুস্টামির হাসি !
মিলি বলল
-তোমার ভাগিনার মনে হচ্ছে আমাকে পছন্দ করে নি ! তাই না ?
আমি বললাম
-আরে কি বলেন ! পছন্দ কেন হবে না মামা ? মামী তো ........
মামা বলল
-তাই না ! বস আমাদের মাঝ খানে ! এই কে আছিস ? একটা ছবি তোল তো !!
মামা আর নতুন মামীর মাঝ খানে বসে আমি ছবি তুললাম !


আসলে দোষটা আমারই ! আমি মনে করেছিলাম মেয়ে আমার কারনে দেখা হচ্ছে । কিন্তু আসলে মেয়ে দেখা হচ্ছিল মামার জন্য ! মামার সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভাল ছিল বিধায় সবাই আমাকে আসতে বলে জরুরী ভিত্তিতে ! মামা বলেছিল আমাকে ছাড়া সে কিছুতেই মেয়ে দেখতে যাবে না !
কিন্তু আমি কি বুঝেছি !!

হায় হায় যে মাইয়া হওয়ার কথা ছিল আমার সম্ভাব্য বউ সে হয়ে গেল আমার মামী !
আমার মিলি মামী !!
এইডা কিছু হইলো !!



আমার কথাঃ ব্লগডের আড্ডা শেষ করে সেদিন জাদীদ ভাইয়ের সাথে এক রিক্সা করে আসছিলাম । সেখানে জাদীদ ভাই নিজের জীবনের একটা গল্প বললেন আমাদের ! সেই গল্পের উপর ভিত্তি করে সমান্য একটা গল্প লিখে ফেললাম !

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।