আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রম্যগল্পঃ কিপটুস!!

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! আজ থেকে বহুদিন পর। আমি বিশাল ডাক্তার হয়েছি(!?!) কিন্তু নিজের বাড়ি গাড়ি কিছুই করতে পারি নি (আমার টাকা দিয়ে সব আমার বউ করেছে)। তো জুলাইতে ডিএমসিতে প্রফ নেবার জন্য এক্সটারনাল হিসেবে আমাকে ডাকা হল। পরীক্ষার দিন সকালে আমি মহাখালী থেকে ট্যাক্সিক্যাবে উঠলাম। ড্রাইভার ব্যাটা দেখি মিটারেই রাজি হয়ে গেল।

মহাখালী বাজারের কাছে এসে বাইরে তাকাতেই দেখি হাতে একটা বাজারের ব্যাগ নিয়ে একজন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কি যেন খুঁজছে। লোকটাকে কেমন চেনা চেনা মনে হল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ মনে করতে পারলাম না। মনের মধ্যে খচখচ করছিল। অগত্যা ড্রাইভারকে বললাম থামাতে।

লোকটার সামনে গিয়ে গাড়ি থামল। আমি মাথা বের করে ডাকলাম, এই ভাই, শুনছেন? লোকটা ফিরে তাকাল। তার ব্যাগ থেকে কচি ফুলকপি উঁকি দিচ্ছিল। লোকটা বলল, আমাকে বললেন? গলার স্বরটা শরীরে যেন কাঁপন ধরিয়ে দিল। এ গলা তো ... আরে, মনে পড়ছে না কেন? লোকটা বলল, কি হইছে ভাই? আমারে কিছু বলবেন? ধুত, মনে পড়ে না ক্যান? বললাম, ভাই আপনি কি ..., কোন নামই মাথায় আসল না।

আমি কি? মানে... আপনি কি... কি, আমি কি? মানে ভাই আপনি কি... এইবার লোকটা খেপে গেল। আরে দিন দুপুরে কি শুরু করসেন এইগুলা? আমারে চেনেন আপনি? ইস...নামটা প্রায় মুখের ডগায় চলে এসেছে। ইস...কি যেন...কি যেন... এবার দেখি লোকটাই এগিয়ে এল। কি ভাই, সমস্যাটা কি? ব্যাগের ভিতরে উঁকি দিলাম। দেখি দুএকটা ইলিশ মাছ উঁকি দিচ্ছে ভিতর থেকে।

কি হইছে ভাই? এই সময় একটা ভিক্ষুক এসে লোকটার কাছে ভিক্ষা চাইল, মামা, দুইটা টাকা দ্যান। সারাদিন কিছু খাই নাই। লোকটা বলল, টাকা নাই মামা। মাফ কর। এই কথাটাই যেন আমাকে ত্রিশ বছর আগে নিয়ে গেল।

এই একটা কথাই। 'মামা'। আরে এ তো আমাদের এককালের জনপ্রিয় দোস্ত মাম্মা কামরান! আমরা বলতাম কামরান সবাইকে কামড়ান। তারপর আমাদের দুই দোস্তের পরিচয়, কোলাকুলি, আরও হাবিজাবি অনেক কিছু হল। তারপর আমি বললাম, মাম্মা কই যাইবা? মাম্মা বলল বখশিবাজার যাবে, মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে।

আমি ভাবলাম, ভালই হল। আমি তো ঢাকা মেডিকেলে নেমে যাব। বললাম, মাম্মা, গাড়িতে ওঠো। মাম্মা তার বাজারের ব্যাগ আর মোটা শরীর নিয়ে গাড়িতে উঠল। তারপর আমরা ত্রিশ বছর আগের মত অশ্লীল বাক্যালাপে মেতে উঠলাম।

যে ব্যাটা ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছিল ও কম্মিনকালেও কল্পনা করতে পারবে না যে আমরা দুজনেই হাজার টাকা ভিজিটের ডাক্তার। কখন মেডিকেলে পৌঁছে গেলাম বুঝলাম না। মিটারে দেখি ৫৩ টাকা ২৫ পয়সা উঠেছে। আমি ভাবলাম, মাম্মা হয়তো আরেকটু দূর যাবে, হয়তো ৬০ টাকায় হয়ে যাবে। আমি পকেটে হাত দিতেই মাম্মা চিল্লাপাল্লা করে উঠল।

ধুর মামা কি কর কি কর... আমি ষাট টাকা ড্রাইভারকে দিয়েই ছুট লাগালাম, মাম্মা যদি আবার টাকাটা ফেরত দিতে চায়? ********************* তারপর যা ঘটল, তা তো আর আমার পক্ষে দেখা সম্ভব না। ঐ, ধরে নেন আপনিই দেখসেন। ঘটনা এরূপ... মাম্মা গন্তব্যে পৌঁছাল। মিটারে উঠল ৫৭ টাকা ৭৫ পয়সা। মাম্মা রাস্তায় নেমে ড্রাইভারকে বলল, ২ টাকা ২৫ পয়সা বের কর।

ড্রাইভার হা হয়ে গেল। মাম্মা তাড়া দিল, বের কর তাড়াতাড়ি। ড্রাইভার বিনাবাক্যব্যয়ে টাকা বের করে দিল। বিজয়ীর হাসি হেসে মাম্মা টাকা নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির দিকে পা বাড়াল! (সমাপ্ত) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।