আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাযহাব অনুসরণ করা ফরয? (দলীল ভিত্তিক ধারাবাহিক ---৭মপর্ব)

জালিমের ফাঁসি হোক, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হোক, রাজাকারদের ফাঁসি হোক

শরীয়ত অনুযায়ী মাযহাব পালন করা ফরয কিনা তা এক লাইনে লেখা সম্ভব নয়। দলীল সহ বিস্তারিত লিখা হলে সহজে ‍বুঝা যাবে। তাই অনেকগুলো পর্ব হবে। সবগুলো পর্ব পড়ে মন্তব্য করবেন আশা করি।

৬ষ্ঠ পর্বের পর....................


মাযহাব না মানার অর্থ হচ্ছে শরীয়তের দু’টি দলীল- ইজমা ও ক্বিয়াস অস্বীকার করা।


আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো, শরীয়তের কোন বিষয়ের মীমাংসা বা ফায়সালা করতে হলে তা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতেই করতে হবে । এর বাইরে কোন কথা বা কাজ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় । কেননা, শরীয়তের ভিত্তি বা দলীলই হলো উপরোক্ত চারটি ।
এ প্রসঙ্গে উছূলের কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “মূলতঃ শরীয়তের ভিত্তি হলো তিনটি । কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা এবং চতুর্থ হলো- ক্বিয়াস ।

” (নুরুল আনোয়ার)

ইজমাঃ
~~~~
যে বিষয়ে কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে স্পষ্ট কোন কিছু বলা হয়নি, সে বিষয়ে কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ-এর দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ হুকুম সাবিত করতে হবে । অবস্থার প্রেক্ষিতে ও প্রয়োজনীয়তায় এধরণের ইজতিহাদ করা আল্লাহ্ পাক ও রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরই নির্দেশ । যেমন- কালামে পাকে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
فا عتبروا يا اولى الابصار
“হে চক্ষুস্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা গবেষণা কর । ” (সূরা হাশর-২)
আর সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ইয়েমেনের গভর্নর করে পাঠানোর প্রাক্কালে বলেছিলেন- “হে মুয়ায, তোমার নিকট কোন মুকাদ্দমা আসলে কিভাবে তা ফায়সালা করবে? হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আল্লাহ্ পাক-এর কিতাবের দ্বারা । যদি ওটাতে না পাও তাহলে? আল্লাহ্ পাক-এর রসূলের সুন্নাহ্ দ্বারা ।

অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, যদি ওটাতেও না পাও তাহলে? আমি কিতাব ও সুন্নাহর ভিত্তিতে ইজতিহাদ করে রায় দেবো । এ উত্তর শুনে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহ্ পাক-এর, যিনি উনার রসূলের দূতকে এ যোগ্যতা দান করেছেন, যাতে উনার রসূল সন্তুষ্ট হন । ” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী)
সুতরাং স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, মুসলমানদের কল্যানার্থে ও ইসলামী অনুশাসনে কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফেরই নির্দেশ ।
আর উক্ত ইজতিহাদকৃত মাসয়ালার মধ্যে যেগুলোর উপর সকল মুজতাহীদগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন, শরীয়তে তাকেই ‘ইজমা’ বলা হয় । আর যে ইজতিহাদকৃত মাসয়ালা এককভাবে রয়েছে, সেটাকে বলা হয় ‘ক্বিয়াস’ ।



“ইজমা” শব্দের লোগাতী অর্থ হলো “ঐক্যমত”।
আর শরীয়তী বিধান অনুযায়ী ইজমার অর্থ হলো- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতের সালেহ্ মুজতাহিদহণের একই সময়ে কোন কথা বা কাজের মধ্যে ঐক্যমত পোষণ করাই হলো ইজমা । ” (নূরুল আনোয়ার ফি শরহিল মানার)

ইজমা-এর দলীল সম্পর্কে শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল আইম্মা, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “কুরআন শরীফ থেকে ইজমার দলীল বের করার উদ্দেশ্যে আমি তিন দিনে নয় বার কুরআন শরীফ খতম করি । ” অন্য বর্ণনায় এসেছে, “তিনশ’বার কুরআন শরীফ খতম করি । অতঃপর আমি নিশ্চিত হই যে, নিম্নোক্ত আয়াত শরীফখানাই ‘ইজমা-এর দলীল ।

’ যেমন, ইরশাদ হয়েছে, “কারো নিকট হিদায়েত বিকশিত হওয়ার পরও যদি সে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করে, আর মু’মিনগণের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথের অনুসরণ করে, আমি তাকে সে দিকেই ফিরাবো, যে দিকে সে ফিরেছে । ” (সূরা নিসা-১১৫)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ইজমা শরীয়তের অকাট্য দলীল এবং তা অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলাম নর-নারীর জন্য অবশ্যই কর্তব্য।

ইজমা-এর প্রকারভেদ ও আহকাম
~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ইজমার প্রকারভেদ ও আহকাম সম্পর্কে প্রখ্যাত আলিমে দ্বীন, ইমামুল উছূলিয়্যীন হযরত আবূ সাঈদ মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাবে “নূরুল আনওয়ারে” লিখেন, “ইজমা” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ঐক্যমত ।
আর শরীয়তে “ইজমা” বলা হয়, এক যামানায় উম্মতে মুহম্মদীর সকল নেককার মুজতাহিদগণের কোন ক্বওল (কথা) ফে’ল (কাজ)-এর উপর ঐক্যমত পোষণ করাকে । “ইজমা” দু’প্রকার (১) ইজমায়ে আযীমত, (২) ইজমায়ে রুখছত ।



১. ইজমায়ে আযীমতঃ
~~~~~~~~~~~~
ইজমায়ে আযীমত হলো- মুজতাহিদ ইজতিহাদ করার পর উনার যুগের কেউ যদি যে কথা বা কাজের উপর ইজতিহাদ করা হয়েছে সে বিষয়ে কোন দ্বিমত পোষণ না করে, অর্থাৎ সকলেই তা শরীয়তের হুকুম হিসেবে মেনে নেয় । যেমন- এটা বলে যে, আমরা সকলেই এটা মেনে নিলাম, অথবা ওটা যদি “ফে’লী” হয়, তাহলে সকলেই ঐ কাজ করতে শুরু করে দেয় । এ প্রকার ইজমার মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী হলো হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজমা । এটার হুকুম কুরআন শরীফ-এর আয়াত ও মুতাওয়াতির হাদীস শরীফ-এর মতই হুজ্জত । কেউ যদি এ ধরণের ইজমাকে অর্থাৎ ইজমায়ে আযীমতকে অস্বীকার করে, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে ।

এটার উদাহরণ হলো, যেমন- হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতের ব্যাপারে সমস্ত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজমা এবং জুময়ার সানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সামনে দেওয়ার হুকুমের ব্যাপারে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের সর্ব সম্মতি রায় বা ইজমা ।

২. ইজমায়ে রোখসতঃ
~~~~~~~~~~~~
ইজমায়ে রোখসত হলো- ইজতিহাদের বিষয় নিয়ে মুজতাহিদগণের মধ্যে ইখতিলাফ তথা মতানৈক্য হওয়া । হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের কোন বিষয়ে ইমামগণের মধ্যে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হওয়া । কোন মুজতাহিদ কোন বিষয়ে মত প্রকাশের পর অন্য কোন মুজতাহিদ সে বিষয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করা বা না করা অথবা চুপ করে থাকা । সংবাদ পৌছার তিন দিনের মধ্যে প্রতিবাদ করেনি ।

এরূপ ইজমাকেই “ইজমায়ে রুখছত বলে। এর অপর নাম হচ্ছে “সুকুতী” । (নূরুল আনওয়ার মাআ আযহুরিল আযহার ৩১৬ পৃষ্ঠা)

ইজমা-এর আহকামঃ
~~~~~~~~~~~
মূলতঃ ইজমা অস্বীকার করা, কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ অস্বীকার করারই নামান্তর।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
و من يشاقق الرسول من بعد ماتبين له الهدى
و يتبع غير سبيل المز منين بوله ماتولى الخ
“যে কারো নিকট হিদায়েত বিকশিত হওয়ার পর, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধাচরণ করবে, আর মোমেনদের পথ থেকে ভিন্ন পথের অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেদিকেই ফিরাবো, যেদিকে সে ফিরেছে । ”
শায়খ আহমদ ইবনে আবূ সাঈদ মোল্লা জিয়ূন রহমতুল্লাহী আলাইহি এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে উল্লেখ করেছেন- “এ আয়াত শরীফে মোমেনদের বিরোধীতাকে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধীতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে ।


অতএব, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফের মত উনাদের ইজমাও অকাট্য ও প্রামান্য দলীল বলে পরিগণিত হবে । ” (নুরুল আনোয়ার)
সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ে ইজমার প্রয়োজনীয়তা ছিলনা । ইজমার প্রচলন ও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনাহুগণের যুগে ।
মহান আল্লাহ্ পাক বলেন-
كذالكجعلناكم
امة وسصا لتكنوا شهدا. على الناس.
“একইভাবে তোমাদেরকে আমি ন্যায়পরায়ণ (মধ্যস্ততাকারী) উম্মত হিসেবে সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা (ক্বিয়ামত দিবসে) অন্যান্য উম্মতের সাক্ষী হতে পার । ”
ইমাম ইবনুছ সালাহ্ রহমতুল্লাহী আলাইহি ‘মুকাদ্দিমায়ে ইবনুছ সালাহ্’ কিতাবে এবং মোল্লা জিয়ূন রহমতুল্লাহী আলাইহি ‘নুরুল আনোয়ার’ কিতাবে এটা দ্বারা হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজমা সাবেত করেছেন ।


সুতরাং খোলাফা-ই-রাশেদীন অর্থাৎ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের উদ্ভাবিত কোন বিষয় অনুসরণ করা আমাদের জন্য সর্বতোভাবেই ওয়াজিব । যেমনিভাবে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করা ওয়াজিব । করণ হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فعليكم بسنتى وسنة خلفاء الرا شدين الهدين
“তোমরা আমার ও আমার হিদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফা-ই-রাশেদীন-এর (উদ্ভাবিত) সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধর । ”
অনুরূপ হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের পরবর্তী উম্মতে সালেহগণের ইজমাও হুজ্জত (শরীয়তের দলীল) যেমন- মাযহাব মানা ও মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে পরবর্তী উম্মতের ইজমা ।
হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে যে, “আমার উম্মত কখনো গোমরাহীর মধ্যে একমত হবে না ।

” (মিশকাত শরীফ)
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা বড় দলের অনুসরণ কর । ” (মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা অবশ্যই প্রমাণিত হয় যে, ইজমার অনুসরণ করা প্রত্যেকের জন্য অবশ্যই কর্তব্য । যে ব্যক্তি উক্ত ইজমাকে অস্বীকার করলো, সে কুফরী করলো ।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
فيكون الا جماع
حجة يكفر جاحده كالكتاب والسنة (تفسيراحمدى)
“ইজমায়ে আযীমত কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ-এর মতই একটি অকাট্য দলীল, যে ওটাকে অস্বীকার করলো, মূলতঃ সে কুফরী করলো । ” (তাফসীরে আহমদী)

এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে, মুজতাহিদ অর্থাৎ যিনি ইজতিহাদ করবেন তাকে অবশ্যই ছালিহীনগণের অন্তর্ভূক্ত হতে হবে, আদিল হতে হবে, সুন্নতের পূর্ণ পাবন্দ হতে হবে, ছগীরাহ্ গুণাহ্ও তাকে পরহেয করতে হবে ।

কোন বিদয়াতী ও হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তির ইজতাহিদ শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয় ।

যেমন, বর্তমানে অনেক ওলামায়ে “ছূ” বা দুনিয়াদার, তথাকথিত মাওলানারা আধুনিকতার দোহাই দিয়ে ছবি তোলার কাজে লিপ্ত । অথচ শরীয়তে ছবি তোলা সম্পূর্ণ হারাম ।
তারা ইসলামী হুকুমত জারী করার দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলন, নির্বাচন, ভোট, বে-পর্দা, হরতাল, কুশপুত্তলিকাদাহসহ আরো বহু কাজে জড়িত । অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সমস্ত কাজগুলো সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়েয ।



সুতরাং এ ধরণের কোন তথাকথিত মাওলানা বাহ্যিক দৃষ্টিতে যতই ইলমের দাবীদার হোক না কেন, হাক্বীক্বতে সে মুজতাহিদ হওয়ার আদৌ উপযুক্ত নয় । এরূপ ব্যক্তির দ্বারা ইজতিহাদের প্রশ্নই উঠেনা । তা সত্ত্বেও যদি সে মুজতাহিদ দাবী করে বা কোন প্রকার ইজতিহাদ করে তবে তার মেছাল হবে ইবলীসের মতই । কারণ ইবলীসই সর্ব প্রথম মনগড়া ও গোমরাহীমূলক ইজতিহাদ করেছিল । যার ফলে সে চির লা’নতী ও জাহান্নামী হয়ে যায় ।



যেমন, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে, “আর যখন আপনার রব (ইবলীসসহ) সকল ফেরেশতাদের প্রতি হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করার নির্দেশ দিলেন; তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই উনাকে সিজদা করলো । ” (সূরা বাক্বারা-৩৪)
হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা না করার কারণে মহান আল্লাহ্ পাক ইবলীসকে জিজ্ঞাসা করলেন, “(হে ইবলীস)! আমি আদেশ করার পর কোন জিনিস (আদম আলাইহিস সালামকে) সিজদা করা থেকে তোকে বিরত রাখলো?” (সূরা আ’রাফ-১২)
ইবলীস তখন (মনগড়া) ইজতিহাদ করে বললো, “(আয় আল্লাহ্ পাক)! আমি উনার থেকে উত্তম । কারণ আপনি আমাকে আগুন থেকে তৈরী করেছেন, আর উনাকে আদম (আদম আলাইহিস সালামকে) মাটি থেকে তৈরী করেছেন । ” (সূরা আ’রাফ-১২)
কাজেই, আগুনের স্বভাব হলো উপরে থাকা, আর মাটির স্বভাব হলো নীচে থাকা, তাই আমি আগুন হয়ে মাটিকে সিজদা করতে পারিনা । ”
উল্লেখ্য, ইবলীসের উক্ত ইজতিহাদ ছিল মনগড়া ও মহান আল্লাহ্ পাক-এর হুকুমের সম্পূর্ণ খিলাফ ।

যার ফলে তার সে ইজতিহাদই তাকে চির জাহান্নামী, লা’নতী ও চরম গোমরাহীতে নিপতিত করেছে ।
যে সম্পর্কে কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে, “(ইবলীস) সিজদা করতে অস্বীকার করলো এবং অহংকার করে (মনগড়া ইজতিহাদ করলো) তাই সে কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল । ” (সূরা বাক্বারা-৩৪)

তদ্রুপ বলতে হয়, যারা শরীয়তের খিলাফ প্রকাশ্য হারামগুলোকে মনগড়া ও শরীয়ত বিরোধী ইজতিহাদ করতঃ হালাল করতে চায়, তারাও ইবলীসের খাছ অনুসারী এবং গোমরাহ্ রূপেই সাব্যস্ত ।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হারাম বিষয়গুলোকে মা’জুর হিসেবে গণ্য করার কোন অবকাশ নেই । আর মা’জুরের ক্ষেত্রে নতুন করে ইজতিহাদ করারও কোন সুযোগ নেই ।

কারণ এ সম্পর্কিত ইজতিহাদ পূর্ব থেকেই হয়ে আছে ।

সুতরাং مجتهدين صالحين (মুজতাহিদীনা ছলিহীনা) “নেককার মুজতাহিদ” বাক্য দ্বারা বিদয়াতী ও ফাসিক তথা ওলামায়ে “ছূ”দের মনগড়া ইজতিহাদ বাতিল বলে গণ্য ।
অতএব, কোন বেশরা, বিদয়াতী ও গোমরাহ লোক যারা বিদয়াত, বেশরা, কুফরী, শেরেকী, বেদ্বীনী, বদদ্বীনি, বেশরা ইত্যাদি হারাম কাজে মশগুল । যেমন, বর্তমানে যারা ছবি তোলে, বেপর্দা হয়, ইসলামের নামে গণতন্ত্র করে, ভোট চায় ও নির্বাচন করে, হরতাল করে, লংমার্চ করে, ব্লাসফেমী আইন তলব করে, মৌলবাদী দাবী করে, নারী নেতৃত্ব সমর্থন করে- এই শ্রেণীর বাতিল আক্বীদা ও বদ মাযহাবের লোকদের ইজমা ও ক্বিয়াস শরীয়তে কখনই গ্রহণযোগ্য নয় ।


৬ষ্ঠ পর্ব।



৫ম পর্ব।

৪র্থ পর্ব।

৩য় পর্ব।

২য় পর্ব।

১ম পর্ব।


---------------------------------------(ইনশাআল্লাহ চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.