আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন অনুধাবন করা চেষ্টা করি মাযহাব মানা কি ফরজ?

আিম তুচ্ছ মানব

ইমাম আবু হানীফা কি যা বলেছেন তাই মানতে হবে? আল ক্বোরআন ও সহীহ হাদীসের সাথে কি মিলানোর কোন দরকার নেই? উনি কি ভুলের উর্দ্ধে কোন স্বর্গীয় মানব? আলেম ওলামারা সাধারণত বলে থাকেনঃ তোমাদের অত ডিপে যাওয়ার দরকার নেই; আবু হানীফা ছিলেন অনেক বিদ্বান লোক তাঁর দেওয়া ফতোয়ার কোন বিকল্প নেই সুতরাং বেশি বুঝতে যেও না। ফেকাহ শাস্ত্রের বাইরে গেলে ইসলাম থেকে তোমরা খারিজ হয়ে যাবে। আসুন জেনে নেই কি এই ফেকাহশাস্ত্র কোথা থেকে এল, কারা এর প্রনেতা এবং মাযহাবের ইতিহাস কিঃ ক্বোরআনের আয়াত সসূহ নাজেল হওয়ার সংগে সংগেই তা মুখস্থ করা ও যথারিতী লিপিবদ্ধ করিয়া সংরণ করা হইয়া ছিল। কিন্তু রসুলুল্লার (সাঃ) সমস্ত হাদীস সংগে সংগেই লিপিবদ্ধ করা হয় নাই। বিশেষ বিশেষ হাদীস রাসুলুল্লার (সাঃ) এর নির্দেশ ক্রমে অবশ্য লিখে রাখা হইতো।

সব হাদীসই সাহাবাগণ মুখস্থ করিয়া রাখতেন। রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর পরেও বহুদিন অনুরূপ ভাবে হাদীস মুখস্ত রাখার রীতি চালু ছিল। ১০১ হিঃ সনে দামেস্কের খলীফা ওমার ইবনে আঃ আজিজের নির্দেশে মক্কা, মদিনা সহ মুসলীম জাহানের সবত্র হাদীস সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করার ধুম পড়ে। সংগৃহিত হাদীসগুলি গণনা করিয়া দেখা যায় উহার সংখ্যা প্রায় ১২ ল ছিল। দুষ্টু লোকেরা অসংখ্য মিথ্যা ও জাল হাদীস তৈরী করিয়া রসুলুল্লাহর হাদীস বলিয়া চালাইয়া দেয়।

১০১ হিঃ হইতে ২২০ হিঃ পর্যন্ত ফেকা শাস্ত্রবিদ ১০/১২ জন আলেম বা ইমামগণ ঐ প্রমানহীন হাদীস সমূহের উপর নির্ভর করিয়াই নিজ নিজ ফেকা তৈরী করেন। ইমাম সাহেবদের মৃত্যুর পরে তাঁদের ভক্ত অনুাক্তগণ নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন মসলা ও ফতোয়া লইয়া আপোষে দলা দলীর সূত্র পাত করে। ফলে, পরবর্তী কালে ইসলামের শত্র“দের প্ররোচনায় ভিন্ন ভিন্ন নামে এই মাজহাব আত্মপ্রকাশ করে। মাযহাবী ঝগড়াই যে মুসলিম সমাজের পতনের আসল কারণ একথার ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে। মাযহাবের অনুসারীগণ অস্বীকার করলেও ইতিহাস কোন দিন তা অস্বীকার করবে না।

এই মাযহাব পন্থীদের গোঁড়ামি, ঝগড়া-বিবাদ আর হঠকারিতার ফলেই যে তাতারীরা সুযোগ পেয়ে মুসলিম সম্রাজ্য ধবংশ করেছিল, নিযামিয়া ইউনিভারসিটি ভেঙ্গে চুরমার করেছিল, সাড়ে পাঁচশত বছরের সঞ্চিত দূর্লভ গ্রন্থরাজী জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল, চল্লিশ ল মুসলমান নর-নারীকে কতল করেছিল-একথা ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে। রাসায়েলে কুবরার ২য় খন্ডের ৩৫২ পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছেঃ পূর্বদেশগুলোয় তাতারীদের যে প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার কারণ হলো মাযহাব নিয়ে ফির্কা পরস্তদের অতি মাত্রায় গন্ডগোল। ইমাম শাফেয়ীর সাথে যারা সম্পর্ক রাখে তারা যারা ইমাম আবু হানিফার সাথে সম্পর্ক রাখে তাদের উপর ভীষনভাবে বিদ্বেষ পরায়ণ, এতদূর পর্যন্ত যে তারা হানাফীদেরকে ইসলাম থেকেই খারিজ করে রেখেছে। আমার হানাফীরাও নিজেদের মাযহাবের অন্ধ গোঁড়ামির দরুন শাফেয়ীর প্রতি বিদ্বেষ পরায়ণ। এমনকি তাদেরকেও হানাফীরা ইসলাম থেকে খারিজ করে রেখেছে।

আবার ইমাম আহমদের সাথে যারা সম্পর্ক রাখে তারাও মুসলমানদের অন্যান্য মাযহাবের উপর ভীষন চটা। ঐরূপ পশ্চিম দেশগুলোর ইমাম মালেকের সাধে যারা সম্পর্ক রাখে তারাও নিজেদের মাযহাবের অন্ধ গোঁড়ামির দরুন অন্যান্য মাযহাবের লোকদের প্রতি বিদ্বেষ-পরায়ণ, আর অন্যান্য মাযহাবপন্থিদের মালেকীদের উপারও কম নয়। (রাসায়েলে কুবরা ২য় খন্ড ৩৫২পৃঃ) শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী তাঁর ইযালাতুল খাফা গ্রন্থে লিখেছেনঃ বনী উমাইয়াদের শাসনের অবসানকাল (১৫০ হিঃ) পর্যন্ত কোন মুসলমান নিজেকে হানাফী শাফেয়ী বলতেন না। স্ব-স্ব গুরুজনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যা করতেন। আব্বাসী খলিফাদের শাসন যুগের মধ্য ভাগে প্রত্যেকেই নিজের জন্য একটি করে নাম নির্দিষ্ট করে বাছাই করে নিলেন।

আর আপন গুরুজনের কথা না পাওয়া পর্যন্ত কুরআন ও হাদীসের নির্দেশ পালন করার নীতি বাদ দিয়ে দিলেন। কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা নিয়ে যে মতভেদ দেখা দিয়েছিল, এখন সেই মতভেদ মাযহাবের বুনিয়াদে পরিনত হলো। আরব রাজত্বের অবসানের পর (৬৫৬হিঃ) সুললমানগণ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেন, প্রত্যেক নিজ নিজ মাযহাবের যতটুকু খেয়াল রাখতে পেরেছিলেন-তাকেই ভিত্তিরূপে গ্রহণ করলেন। আর যা পূর্ববর্তীদের কথার দ্বারা পরিকল্পিত হয়েছিল, এখন তা আসল সুন্নারূপে গৃহীত হলো। এদের বিদ্যা হচ্ছে এক অনুমানের উপার আর এক অনুমান, এক পরিকল্পনার উপর আর এক পরিকল্পনা।

আবার সেই অনুমানকে গ্রহণ করে আর এক অনুমান। এদের রাজত্ব অগ্নিপূজকদের ন্যায়, তফাৎ শুধু এটুকু যে, এরা নামায পড়ে, কলেমা উচ্চারণ করে। ২২০হিঃ হইতে ন্যূন্যাবিধ ৩০০হিঃ পর্যন্ত উক্ত সংগৃহিত হাদীস মসূহকে যাচাই বাছাই করিয়া রসূলুল্লাহর খাঁটি হাদীসগুলি বাহির করিয়া সংরণ করার উদ্যোগ চরম জোরদার হয়। ফলে সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, আবুদাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ ও ইবনে মাজা এই ছয়খানা ছহিহ হাদীসের কেতাব যথারীতি লিপিবদ্ধ হইয়া রসূলূল্লাহর রেখে যাওয়া সহি হাদীসগুলি সুসংরণের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু দুঃখের ভিষয় পূর্বে সৃষ্ট দল বা মাযহাবগুলি এই সহি হাদীসের প্রতি আকৃষ্ট না হইয়া তাহাদের নিজ দলের প্রাধান্য বৃদ্ধির কাজে লিপ্ত থাকে।

পরবর্তী কালে মালেকী ও হানাফী মাযহাবের লোকদের মধ্যে মাযহাবী কোন্দল লইয়া বাগদাদেও অনরূপ ভিন্ন ভিন্ন মাযহাব পন্থিদের মধ্যে বহু স্থানে রক্তয়ী সংঘর্ষ হয়। অতঃপর ৮০৯ হিজরিতে কাবার ইব্রাহিমী মুসাল্লাতে দাঁড়াই ইমামতি লইয়া ১০/১১টি মাযহাবী দলের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ বাঁধে। তাহাতে বহু মুসলমান হতাহত হয়। জাহল বাদশা ফারহা ইবনে বয়কুফ সংঘর্ষ মিটাবার উদ্দেশ্যে বিবাদরত দলগুলির মধ্যে হইতে চারটি দলকে কাবার চার পার্শ্বে খাড়া করিয়া দিলেন। অন্যান্য দল এই চার মাযহাবের মধ্যে মিশিয়া গেল।

ফলে কাবাঘরের চার কোণে চার মাযহাবের চারখানা ভিন্ন ভিন্ন মুসাল্লাহ তৈরী হইল। প্রতি ওয়াক্তে চার মাজহাবের চার ইমাম চার মুসাল্লায় দাড়াইয়া পর্যায়ক্রমে নামাজ আদায় করিতে থাকেন। এই নিয়ম প্রায় ৫০০ বৎসর পর্যন্ত চালু থাকে। এই ভাবে এক ইসলামের মধ্যে জাহেলিয়াত ঢুকিয়া নুতন চার মাযহাবের সৃষ্টি করে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।