আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানুষ কেন কম্পিউটার তৈরী করেছে এবং আল্লাহ কেন মানুষ তৈরী করেছেন ।

আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল । আল্লাহ জীবন ও মরণ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য যে কে কে তার কর্মে সর্বাপেক্ষা উত্তম । মানুষতো বর্তমানে ধর্মীয় বই অপেক্ষা বিজ্ঞানের কথা বেশী বিশ্বাস করে । বিজ্ঞানই এখন বলছে যে মৃত্যু মানেই জীবনের শেষ নয় ।

জীবন ও মৃত্যু হলো মানুষের দুটো অবস্হা । মৃত্যুর সময় মানুষের আত্না স্হায়ীভাবে দেহ ছেড়ে চলে যায় । এছাড়া ঘুমের সময় চলে গেলেও তা আবার ফিরে আসে । মৃত্যুর পর আত্না এই জগৎ ছেড়ে অন্য জগতে চলে যায় । মানুষের দেহটা পচে গলে যায় ।

কিন্তু আত্না ঠিকই অস্তিত্ববান থাকে । মানুষ মৃত্যুর সময় তার অন্তরের যে বিশ্বাস নিয়ে দেহত্যাগ করে , সে তার সেই বিশ্বাস নিয়েই আবার নতুন দেহ নিয়ে জেগে ওঠে । কুরআন ও হাদীসের কথা হলো অদৃশ্যের উপর বিশ্বাস - অর্থাৎ যা কিছু চোখে দেখা যায় না । স্রষ্টা, বেহেশ্ত, দোযখ সবই বর্তমানে অদৃশ্য । মৃত্যুর পর আমাদের সবার বর্তমান চোখের পর্দা খুলে যাবে ।

আমরা তখন সব কিছু দেখতে পাব । এখন আমাদের সামনে এক পর্দা রয়েছে । আমরা জানি আমাদের মৃত্যু হবে কিন্তু দুনিয়ার এই অস্হায়ী বস্তু তথা জীবন, সম্পদ এবং নফসের ধোকায় আমরা সব ভূলে আছি । এগুলো সবই হলো পরীক্ষার বস্তু । আল্লাহ যুগে যুগে নবী রাসুল পাঠিয়েছেন মানুষকে এসব সম্মন্ধে সতর্ক করার জন্য যে মানুষের এই জীবনের পরে আরেক জীবন আছে ।

তার এই জীবনের স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস এবং কর্মের উপরই ভিত্তি করে আরেক জীবন গড়ে ওঠবে । যারা বুদ্ধিমান এবং চিন্তা ফিকির করে । তারা অন্ধের মত জীবন যাপন করে না । তারা দুনিয়ার জীবন এবং পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করে এবং স্রষ্টাকে সন্ধান করে । স্রষ্টা আপনা আপনি এসে ধরা দেন না ।

মানুষকে তিনি উনার সৃষ্টির নিদর্শনের মাধ্যমে খুজতে বলেছেন এবং মানুষকে যে অনর্থক সৃষ্টি করেন নি তা বুঝতে বলেছেন । তিনি আমাদের জ্ঞান দান করেছেন । আমরা উনার প্রদত্ত জ্ঞান দ্বারা এই জীবনে উন্নত করে চলেছি এবং বিভিন্ন বস্ত্ত নিজের প্রয়োজনে তৈরী করছি । যেমনঃ কম্পিউটার মানুষের অন্যতম বিস্ময়কর আবিস্কার । কিন্তু মানুষ এটা তৈরী করেছে নিজের সুবিধার জন্য ।

এখন এই কম্পিউটার যদি মানুষের প্রয়োজন পুরা না করে অর্থাৎ যেজন্য তৈরী করা হয়েছে সেই কাজে না লাগে মানুষকি কম্পিউটার ব্যবহার করবে ? করবেনা । আবার মানুষ তার প্রয়োজন অনুসারে কম্পিউটারের উন্নত সংস্করণ তৈরী করছে । সে তার প্রথম আবিস্কার মেইনফ্রেম তথা বিশালাকায় কম্পিউটার নিয়েই বসে নেই । সে তার সুবিধামত কম্পিউটারের উন্নত সংস্করণ লেপটপ, নোটপ্যাড আর ট্যাবলেট তৈরী করছে । অনুরূপ ভাবে আল্লাহ সুবহানাতায়ালাও মানুষকে অনর্থক সৃষ্টি করেন নি ।

তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সে যেন তার ইবাদত করে । তার পবিত্রতা ও প্রশংসা-গুণকীর্তন করে । এখানে মানুষের আর কোন পছন্দ নাই যে সে তার খেয়াল খূশীমত জীবন যাপন করবে । স্রষ্টার সৃষ্টি হিসেবে তাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে তাই করতে হবে । এই দুনিয়ার জীবনে যদি সে স্রষ্টাকে স্মরণ করে উত্তম জীবন যাপন করে তাহলে সে মৃত্যুর পর নতুন জীবনে চিরস্হায়ী আয়ু এবং আনন্দময় জীবন পাবে ।

আর তা না হলে তাকে শাস্তি পেতে হবে । দুনিয়ার জীবনেও তিনি কিছু শাস্তির আস্বাদন করান যাতে আখেরাতের ভয়াবহ শাস্তি থেকে কিছুটা নাজাত পাওয়া যায় । সমস্ত কুরআনে আল্লাহ উপরোক্ত সতর্কবাণী বার উল্লেখ করেছেন । আমরা দুনিয়া নিয়ে - এই স্বল্প দিনের জীবন নিয়ে এতই ব্যস্ত যে মৃত্যু পরবর্তী জীবন, স্রষ্টার নিদর্শন সম্মন্ধে অসচেতন হয়ে রয়েছি । আল্লাহ কুরআনে বলেছেন যে, তিনি ইচ্ছা করলে মানুষের পরিবর্তে অন্য সৃষ্টি তৈরী করতে পারেন বা মানুষকে যেকোন সময় দুনিয়ার জীবন থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারেন ।

সূরা মূলকে আল্লাহ তায়ালা উপরোক্ত কথাগুলো সুন্দরভাবে তুরে ধরেছেন । ১. পূণ্যময় তিনি, যার হাতে রাজত্ব । তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান । ২. যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবণ , যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন - কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ । তিনি পরাক্রমশালী , ক্ষমাময় ।

৩. তিনি সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন । তুমি করুণাময় আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন তফাৎ দেখতে পাবে না । আবার দৃষ্টি ফিরাও কোন ফাটল দেখতে পাওকি ? ৪. অতঃপর তুমি বার বার তাকিয়ে দেখ - তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে । ৫. আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জ্বিত করেছি ; সেগুলোকে শয়তানদের জন্য ক্ষেপনাস্ত্র করেছি এবং প্রস্তুস্ত করে রেখেছি তাদের জন্য জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি । ৬. যারা তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি ।

সেটা কত নিকৃষ্ট স্হান । ৭. যখন তারা তথায় নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে । ৮.ক্রোধে জাহান্নাম ফেটে পড়বে । যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে , তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞেস করবেঃ তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমণ করেনি? ৯. তারা বলবেঃ হ্যা , আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমণ করেছিলো । অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ কোন কিছু নাযিল করেন নি ।

তোমরা মহা বিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ । ১০. তারা আরো বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম বা বুদ্ধি খাটাতাম , তবে আমরা জাহান্নাম বাসীদের মধ্যে থাকতাম না । ১১. অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে । জাহান্নাম বাসীরা দূর হোক । ১২. নিশ্চয়ই যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার ।

১৩. তোমরা তোমাদের কথা গোপনে বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত । ১৪. যিনি সৃষ্টি করেছেন , তিনি কি করে জানবেন না ? তিনি সূক্ষ জ্ঞানী , সম্যক জ্ঞাত । ১৫. তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন, তোমরা তার কাধে বিচরণ কর এবং তার দেয়া রিযিক আহার কর । তারই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে । ১৬. তোমরা কি ভাবনা মুক্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন , তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলিন করে দেবেন , অতঃপর তা কাপতে থাকবে ।

১৭. না, তোমরা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন , অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিলো আমার সতর্কবাণী । ১৮. তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছিলো , অতঃপর কত কঠোর হয়েছিলো আমার অস্বীকৃতি । ১৯. তারা কি লক্ষ্য করে না - তাদের মাথার উপর উড়ন্ত পক্ষীকূলের প্রতি - পাখা বিস্তারকারী ও পাখা সংকোচনকারী ? রহমান আল্লাহই তাদের স্হির রাখেন । তিনি সর্ববিষয় দেখেন । ২০. রহমান আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন সৈন্য আছে কি , যে তোমাদের সাহায্য করবে ? কাফিররা বিভ্রান্তিতেই পতিত আছে ।

২১. তিনি যদি রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে আছে, যে তোমাদের রিযিক দেবে ? বরং তারা অবধ্যতা ও বিমূখতায় ডুবে রয়েছে । ২২. যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখে ভর দিয়ে চলে, সে-ই কি সৎ পথে চলে , না সেই ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরল পথে চলে ? ২৩. বলুন, তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর । তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর । ২৪.বলুন, তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করেছেন এবং তারই কাছে তোমরা সমবেত হবে । ২৫. কাফিররা বলেঃ এই প্রতিশ্রুতি কবে হবে , যদি তোমরা সত্যবাদী হও ? ২৬. বলুন, এর জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই আছে ।

আমি তো কেবল প্রকাশ্য সতর্ককারী । ২৭. যখন তারা সেই প্রতিশ্রুতিকে আসন্ন দেখবে তখন কাফিরদের মূখমন্ডল মলিন হয়ে পড়বে এবং বলা হবেঃ এটাই তো তোমরা চাইতে । ২৮. বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে - যদি আল্লাহ আমাকে এবং আমার সঙ্গীদেরকে ধ্বংস করেন অথবা আমাদের প্রতি দয়া করেন তবে কাফেরদেরকে কে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে ? ২৯. বলুন, তিনি পরম করুণাময় , আমরা তাতে বিশ্বাস রাখি এবং তারই উপর ভরসা করি । সত্বরই তোমরা জানতে পারবে কে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় আছে । ৩০. বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি - যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায় তবে কে তোমাদের সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা ? সূত্রঃ মারেফূল কুরআন, মূফতি শাফী উসমানিয়া (রহঃ) সুতরাং আমাদের উচিত আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে জীবন যাপন করা এবং উনাকে স্মরণ করা ।

এই দুনিয়াতে আমরা কেউই স্হায়ী নয় । মৃত্যুর পর আমাদেরকে আমাদের কাজের হিসাব দিতে হবে । সেখানে কেউ কারো উপকারে আসতে পারবেনা । প্রত্যেকেই তার কর্ম ফল দেখতে পাবে । সময় থাকতে সতর্ক না হলে পরে হাজার আফসুসেও কোন কাজ হবে না ।

ধন্যবাদ । Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.