আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রক্তাক্ত রাজপথ:বিপযস্ত মানবতা

বিশ্বজিতের রক্তাপ্লুত শাট আর বেঁচে থাকার করুণ আকুতির দৃশ্যগুলো কিছুতেই ভুলতে পারছিনা। মানুষের জীবনের সফলতা ও র্ব্যথতা আসলে কি? দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারার ভিন্নতার কারণে সবার কাছে জীবনের মানেটা একই রুপে বিবেচিত হয়না। ভীত সন্ত্রস্ত মানুষের করুণ আর্তনাদ শুনে, যন্ত্রণায় দগ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ার ফল নয়নের জল দর্শনে কারো ঠোটে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠে। কোন পশুও তার সমগোত্রীয় পশুকে মেরে ফেলেনা কিন্তু মানুষ কতটা নিমম ও নিষ্ঠুর হলে আরেকজন মানুষকে পৈশাচিক ও ববরোচিত কায়দায় কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করতে পারে। মানুষ পশুর চেয়েও যে নিকৃষ্ট-কুরআনের এই বক্তব্যটা স্পষ্ট বোধগম্য হতে দৃষ্টান্তটি কাযকর।

বড়ই অমানবিক যে, নির্যাতিতদের দুঃখে অগ্রাসীদের বিজয়ানন্দের বেগকে তীব্রতর করে। অর্থ-বিত্ত, যশ-খ্যাতি, বিত্ত-বৈভবে কেউ শান্তিসুখে উদ্বেলিত হয়, কেউবা নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে বঞ্চিত মানবতার আহাজারি বন্ধ করে। কেউ দুঃখী জনের মুখে হাসি দেখে হৃদয়ে দারুণ প্রশান্তি লাভ করলেই মহাত্মা গান্ধী,নেলসন ম্যান্ডেলা কিংবা আব্রাহাম লিংকন হয়ে যাবেন এমনটি বলা না গেলেও ত্যাগ স্বীকার ও বিসর্জনের মাধ্যমে সফলতা খুঁজে পাওয়া হৃদয় নমরুদ, ফেরাউন, হিটলার,হালাকু খান, চেঙ্গিস খান-হবেন না এই নিশ্চয়তা দেয়া যায়। অর্থাৎ একই বিষয় একজনের কাছে আনন্দের আরেকজনের কাছে বেদনার, কারো জন্য যা ব্যর্থতা তাই আবার কারো জন্য সফলতা, এটাই হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা রুচিবোধগত ভিন্নতা। দৈহিক বা জৈবিক বৈশিষ্ট দ্বারা নয় বরং এসব বৈশিষ্ট্যই একের সাথে অপরের মধ্যকার পার্থক্যের দেয়াল নির্মাণ করে।

যারা নিরপরাদ বিশ্বজিতকে অসহায় পেয়ে মেরেছেন তার মায়ের বুককে খালি করে চিরদু:খী বানিযেছেন সেসমস্ত পাপিষ্টকে মানুষ ভাবলে গোটা মানবতারই অপমান হবে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ, লাশের উপরে নৃত্য- একবার যিনি টিভিতে দেখেছেন তার পক্ষে কখনও ভুলা অসম্ভব। যারা শহীদ হয়েছেন তারা পরকালীন মুক্তিতেই জীবনের চুড়ান্ত সফলতা খুজেঁ পেতেন। ফলে তাদের ব্যাক্তিত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছিল স্রষ্টার সন্তোষ অর্জনের মানসিকতাকে ঘীরে। দুনিয়ার জীবনটাকে কেন্দ্র করেই যার সমস্ত আয়োজন তার ব্যাক্তিত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি হবে ভিন্ন রকম।

তাই বলে যুক্তির কষ্টিপাথরে বিচার করলে, যৌক্তিক মানদন্ডে বিশ্লেষণ করলে আদশিক ও মতাদশগত ভিন্নতা প্রতিপক্ষের প্রতি সকল অসভ্যতা ও ববরতাকে বৈধতা দিতে পারেনা। মানবিকতা ও মনুষত্ববোধতো থাকতে হবে। রাজপথকে রক্তে রঞ্জিত করে,লাশের মিছিল দীঘ করে, শোকাহতদের ব্যথিত হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বাড়িয়ে আর যাই হোক দেশ ও জাতির উন্নয়ন অগ্রগতি হবে না। এটা ঠিক যে, সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে দুনিয়ার মায়ারজাল ছিন্ন করে। জন্মিলে মরিতে হয়, অমর কে কোথা রয়? প্রত্যেক প্রাণী মরণশীল-কথাটা বাস্তব ও চিরন্তন সত্য।

সব মুত্যুই প্রিয়জনের চোখে সৃষ্টি করে অশ্রুরবান। হৃদয়ে জাগায় কষ্টের তুফান। মওতের শরবত সকলেইে পান করতে হবে। দুনিয়াতে আগমনে আনন্দ উল্লাস, বিয়োগ যন্ত্রণা। তবে স্বাভাবিক মৃত্যু আর অযত্নে, অবহেলায়, অনাদরে, দুঘটনায় আঘাতে অস্বাভাবিক মৃত্যু এক কথা নয়।

সরকারি কিংবা বিরোধীদল সবারই মনে রাখা দরকার যে, সময় গতিশীল। ঘড়ির কাঁটা যেমন ঘুরেই চলছে ঠিক তেমনি সময় নদীর স্রোতের মত বয়েই চলছে। নশ্বর এই পৃথিবীতে মানুষ জন্মগ্রহন করে আবার একটি নির্দিষ্ট সময় পর তাকে দুনিয়া ছেড়ে পরজগতে পাড়ি জমাতে হয়। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে মানুষ স্থায়ী করতে পারবেনা। ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ার জীবন শেষে মানুষ চলে যায়, কিন্তু থেকে যায় তার কর্ম এবং কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকে মানুষটি।

মানুষ পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করে সর্বাগ্রে যে বিষয়টি নিশ্চিত করে তার নাম মৃত্যু। কোন মানুষ জন্ম হবে কিনা এট নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনা। কিন্তু যে মানুষ জন্ম নিয়েছে তার মৃত্যু অবধারিত। ফলে জন্ম মানেই মৃত্যু। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু মানুষকে প্রচন্ড নাড়া দেয়।

মৃত্যু যন্ত্রণা বহন করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই মৃত্যুর শীতলতা মানুষকে কাঁদায়। ক্ষমতার মোহ কিংবা স্বাথের লোভে যা ইচ্ছা তাই করতে চাওয়াটা মোটই সুখকর নয়। জুলুম নিযাতন, জোর জবরদস্তি করে মানুষের হৃদয় জয় করা যায়না্। যেই বিকৃতি ও বিভ্রান্তির পথে হেটেছে, নৃশংসতা ও অশান্তি বাড়িয়েছে ইতিহাস তাকে ক্ষমা করেনি। প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে এবং মহান আল্লাহর দিকে সবাইকে ফিরে যেতে হবে।

এটাই চিরন্তন সত্যকথা। কিন্তু কিছু আকস্মিক মৃত্যুর সংবাদে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত হই। অন্তরে বয়ে যায় বেদনার ঝড়। যাই দু:খের সাগরে ডুবে। নি:সন্দেহে,পৃথিবীর ভিতরে মন্দের অস্তিত্বহীন মানুষ নেই।

কিন্তু সফল সেই ব্যক্তি যার মধ্যে মন্দের চেয়ে ভালোর পরিমাণ বেশী। যিনি নিহত হয়েছেন তিনি বিশ্বজিতের মতো পথচারিই হোক,কোন দলের নেতা কিংবা কমী হোক-তার সাথে আর পৃথিবীতে কারো দেখা হবে না। কী বেদনাদায়ক এই চলে যাওয়া। ভুলা যায় না। বিশ্বাস করতে মন চায় না।

গভীর শোকের ছায়ার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলো। একজন হৃদয়বান মানুষের পক্ষে বেদনাবিধুরভাবে কারো অস্বাভাবিক চলে যাওয়া মেনে নেয়া বড়ই কষ্টকর। আত্মীয় স্বজনেরা হয় নিঃস্ব, দুঃখ কষ্টে ভারাক্রান্ত ছাড়পত্রহীন মানুষ। অনেকের হৃদয়েই যে ক্রন্দন ধ্বনির সুত্রপাত হয় তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। বিশ্বজিত আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অনেক দূরে।

তার মুখচ্ছবি মনে পড়লে ভেসে উঠে একটি মানুষের বেচে থাকার কি করুণ আকুতি। তার মৃত্যু সংবাদটি তার পরিবারের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই মনে হয়েছে, হতবাক হয়ে পড়েছে, মৃত্যুটা বিশ্বাস করতে পারেনি। আমারও বড়ই কষ্ট হয়েছে, বার বার অশ্রু সজল হয়ে পড়ছি। তাহলে তার হঠাৎ চলে যাওয়ার ব্যাথা তার প্রিয়জনদের ভুলে যাওয়া খুবই কঠিন,অসম্ভব। আমরা চাই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হোক ।

রাজনীতিবিদরা দলীয় স্বাথের চেয়ে দেশের স্বাথ, দশের স্বাথকে প্রাধান্য দিক। জাতির অগ্রগতি ও উন্নতির দিকেই তারা মনোযোগী হোক, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে, বোকা বানিয়ে, ধোকা - প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অমানবিক কাজকে বৈধতা দান ও স্বাথহাসিলের খেলা বন্ধ করুক-এটাই প্রত্যাশা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।