মানুষের জীবনে একটা যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী ধ্বংস নিয়ে আসতে পারে , পৃথিবীকে নিয়ে আসতে পারে একটা বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে । যুদ্ধের লেলিয়ান শিখায় পুড়ে যেতে পারে অসংখ্য মানুষের জীবন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এমনি করে এই পৃথিবীর তখনকার মানুষগুলোর ওপর নিয়ে এসেছিল অভিশাপের বার্তা । মানবতা যেখানে ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল কামান-বন্ধুকের কাছে , যেখানে রেহাই পাইনি বৃদ্ধ থেকে শুরু করে কোলের শিশুও । যেন রক্তের নেয়ার উৎসব চলছিল যুদ্ধের সেইসব দিনগুলিতে ।
এমনি কাহিনীগুলোকে অনেক পরিচালক তাদের ছবির মাধ্যমে সারা পৃথিবীবাসীকে দেখিয়েছে , কি নৃশংস ছিল সেইসব দিনরাত্রিগুলি । ঠিক তেমনি রোমান পোলানস্কিও বাদ যাননি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ছবি তৈরি করার ক্ষেত্রে । তিনি তার "The pianist" ছবির মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এক পিয়ানিস্ট এর জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা তার এই অসম্ভব সুন্দর ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন ।
একজন মেধাবী পিয়ানিস্ট যে কিনা পোলিশ এবং ইহুদী , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনেক ইহুদী পরিবারের মত তার পরিবারের ওপর যুদ্ধের খড়গ এসে পরে । জার্মান নাৎসি বাহিনীর হাতে একে একে অনেক ইহুদী মারা যেতে থাকে , আবার কখনও ইহুদীদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয় ।
পিয়ানিস্ট এর পরিবারের সদস্যরাও এর থেকে রেহাই পায় না । নাৎসি বাহিনী তাদের ওপরও অত্যাচার করতে থাকে । ফলে তারাও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয় । অবরুদ্ধময় সেই জীবনের সাথে যুদ্ধ এবং বেঁচে থাকার চেষ্টায় তাদের প্রাণপণ চেষ্টা চলতে থাকে । কখনও খাদ্যের জন্যে হাহাকার আবার কখনও অল্প একটু খাদ্যই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাগাভাগি করে খাওয়া ।
যুদ্ধ যেন তাদের জীবনকে আরও নিজেদের কাছে নিয়ে আসে প্রত্যেককে । কিন্তু এক সময় পিয়ানিস্ট তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে । শুরু হয় নতুন বেঁচে থাকার চেষ্টা । যুদ্ধ আসলেই অনেকটুকু পরিবর্তন করে দেয় একজন মানুষের জীবনকে । শেষ পর্যন্ত কি সেই পিয়ানিস্ট বেঁচে থাকবে ? আর তার পরিবার, যাদেরকে সে হারিয়ে ফেলেছে যুদ্ধের ঢামাতলে, তাদের সাথে কি আর দেখা হবে ? শেষ পর্যন্ত কি পরিণতি হবে এ পিয়ানিস্ট এর ।
এমনি অনেক প্রশ্নকে সামনে এনে ছবিকে দারুনভাবে বাঁক দিয়েছেন ছবির পরিচালক রোমান পোলানস্কি ।
ছবিতে অভিনয় করেছেন - আদ্রিয়ান ব্রডি , থমাস ক্রিসম্যান্স, ফ্রাংক ফিনলে সহ আরও অনেকে । ছবিটিতে প্রত্যেক অভিনেতা- অভিনেত্রীর অভিনয় ছিল চোখ ধাঁধানো । তারা যেন যুদ্ধের আসল প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছিল তাদের অভিনয়ে ও মুখের অবয়বে । অসম্ভব ভালো কাজ করেছেন এক একজন অভিনেতা- অভিনেত্রী ।
সকল অভিনেতা-অভিনেত্রীই এ ছবিতে প্রশংসার দাবিদার । আর বিশেষ করে আদ্রিয়ান ব্রডি পিয়ানিস্ট চরিত্রে দারুণভাবে নিজেকে তুলে ধরেছেন এবং প্রতিটি দৃশ্যের সাথে দারুণভাবে মিশে গেছেন ।
ছবির যে বিষয়গুলো আমার মনে খুব নাড়া দিয়েছে তা না বললেই না । পরিবারের সবাইকে নিয়ে পিয়ানিস্টের ভাগাভাগি করে খাওয়া , নিজের পরিবারকে খুঁজে বেড়ানো । বেঁচে থাকার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করা , তার জন্যে পালিয়ে পালিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় আশ্রয় নেয়া ।
আর সেই যে নাৎসি অফিসার , যিনি কিনা বিভিন্ন সময় খাবার দিতেন লুকিয়ে থাকা পিয়ানিস্টকে । আর নাৎসি বাহিনী চলে যাবার সময় সেই অফিসার তার নিজের ওভারকোটটা দিয়ে যান পিয়ানিস্টকে । আর সেই ওভারকোটটার জন্য পিয়ানিস্ট এর জীবনে কী বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল , যার জন্যে তাকে প্রায় জীবনটাই দিতে হচ্ছিল । এই বিষয়গুলো যে কাউকে দারুণভাবে আবেগাতাড়িত করবে , যেমনটা আমার করেছিল ।
রোমান পোলানস্কি এর মত পরিচালক যুগে যুগে আসবেনা , হয়ত হবেনা তৈরি তার ছবির মত এমন মনকাড়া ছবি , যা মানুষকে যুদ্ধের মাঝে জীবনের কথা এত দারুনভাবে ফুটিয়ে তুলবে ।
ছবিটির প্রতিক্ষণ টান টান উত্তেজনা যে কাউকে অনেক টানবে । ছবির সেট ,যুদ্ধের সময় মানুষের কষ্টকর মুহূর্তগুলো , ছবির ক্যামেরা ওয়ার্ক , যুদ্ধের দৃশ্য থেকে শুরু করে প্রতিটি সিনে চোখ ধাঁধানো কাজ দেখিয়েছেন সফল পরিচালক রোমান পোলানস্কি ।
imdb রেটিং - ৮.৫
উইকি -http://en.wikipedia.org/wiki/The_Pianist_(2002_film)
ছবি-দ্য পিয়ানিস্ট
অভিনয়ে -আদ্রিয়ান ব্রডি , থমাস ক্রিসম্যান্স, ফ্রাংক ফিনলে সহ আরও অনেকে
লেখক -রোনাল্ড হারউড
ছবির ব্যাপ্তিকাল-১৫০ মিনিট
মুক্তির সাল -২০০২
পরিচালক- রোমান পোলানস্কি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।