আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কমান্ডো ছবি, হাতিঝিলের অপরিপক্ক প্রেমের ঝাঁপ ও সাঁতার শেখার গুরুত্ব



কিছুদিন আগে একটা ছবি দেখেছিলাম। ছবিটির নাম ছিল ‘কমান্ডো’। সে ছবির কাহিনীতে প্রেমিকযুগলকে পানিতে ঝাঁপ দিতে দেখেছি। কাহিনীটি ছিল এরকম যে, নায়িকার বিয়ে ঠিক হয়েছে এক গুন্ডার সাথে। গুন্ডাটিকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে নায়িকার মোটেও পছন্দ না।

তাই নায়িকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবে। পালিয়ে যেতে পথে গুন্ডা বাহিনী যখন নায়িকাকে অপহরণ করে তখন ঐ নায়কটি গুন্ডা বাহিনীর হাত থেকে নায়িকাকে রক্ষা করে। এরপর নায়িকাটি আর নায়কের সঙ্গ ছাড়ে না। নায়কের সাথে সাথে চলতে নায়িকা। নায়ক-নায়িকা একসঙ্গে পথ চলছে।

একসাথে একটা বাসে গিয়ে উঠে দুজন। কিন্তু গুন্ডাবাহিনী নাছোড় বান্দা। সে তার লস্কর বাহিনী নিয়ে নায়িকার পিছু নেয়। নায়িকাকে অপহরণ করতে গুন্ডাবাহিনী যখন নায়ক-নায়িকার পিছু ধাওয়া করে। তখন নায়ক (কমান্ডো) প্রধান গুন্ডাকে মেরে নায়িকাকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়।

কমান্ডো ছবির নায়ক-নায়িকা কেউ মরেনি। তারা দুজনই ভালো সাঁতার জানতো তাই তারা সাঁতরিয়ে কুলে উঠে যায়। এরপর এক গহীন জঙ্গলে তারা গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানেই তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল। এদিকে গুন্ডাবাহিনী কিছুতেই তাদের পিছু ছাড়ছে না।

যে করেই হোক নায়িকাটিকে তার চাই-ই চাই-ই। তাই প্রশাসনকে হাতে নিয়ে ঐ গুন্ডাবাহিনীর সর্দার চতুর্দিকে তাদের খোঁজে ভাড়াটিয়া বাহিনী লেলিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত নায়ককে পাকড়াও করতে সক্ষম হয় গুন্ডা বাহিনীর লোকেরা। নায়িকাকে ধরে এনে জোর করে বিবাহের পিড়িতে বসায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঐ গুন্ডা নায়িকাকে বিয়ে করতে পারেনি।

বিয়ে ঠিকই ভালবাসার মানুষের (কমান্ডোর) সাথেই হয়েছিল। যদিও ছবিতে বিয়ের অনুষ্ঠান দেখানো হয়নি। তবে শেষ দৃশ্যে তারই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এভাবেই কমান্ডো ছবির দৃশ্যের পরিসমাপ্তি ঘটে।
আর গতকাল হাতিরঝিলের রামপুরা এক নম্বর ব্রিজ থেকে এক প্রেমিক যুগল ঝাঁপ দিয়েছিল।

প্রথমে ছেলেটি ঝাঁপ দেয় এরপর মেয়েটি ঝাঁপ দেয়। ছেলেটির নাম এহসানুল হক তন্ময়। বয়স ১৬। মেয়েটির নাম শেহরীন রহমান মীম। বয়স-১৬।

তারা দুজনই মগবাজার প্রভাতী বিদ্যা নিকেতনের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তারা দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে। মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় আত্নহত্যা করার। ঝাঁপ দেয়ার পর শুধুমাত্র ছেলেটিই মারা যায়।

আর বিধিবাম মেয়েটি মরতে মরতেই বেঁচে গেল। তাদের দুজনেরই মারা যাবার কথা ছিল। কিন্তু কি নির্মম খেলা চিন্তা করে দেখুন, মেয়েটিকে এক ভ্যানচালক ব্রিজের উপর থেকে দড়ি ফেলে প্রাণে বাঁচতে সহযোগিতা করে।
আমার কাছে কনে হয় মেয়েটি যখন পানিতে হাবুডুবু খেয়ে মারা যাচ্ছিল তখন ছেলেটির কথা একদমই ভুলেই গিয়েছিল। তখন মেয়েটি শুধুমাত্র মরণ যন্ত্রণায় ছটপট করতে লাগল।

তখন মেয়েটি তার সামনে মরণ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেল না। মরণ যন্ত্রণা যে কত কঠিন মেয়েটি হাড়েহাড়ে তা টের পেল। তখন তার চোখের সামনে কেবলই অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের কথা আর নিষিদ্ধ প্রেমের স্মৃতি ভাসতে লাগল। তখন সে সৃষ্টিকর্তার সামনে তওবা করতে করতে বলতে লাগল হে সৃষ্টিকর্তা, আমাকে তুমি প্রাণে বাঁচাও আমি আর এ রকম অবৈধ সম্পর্কে নিজেকে জড়াব না। তাই হয়তো সৃষ্টিকর্তা মেয়েটির প্রতি সদয় হয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখলেন।

দয়াময় আল্লাহ তাঁয়ালার জন্য সকল অসম্ভবই সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আমার দৃষ্টিতে মেয়েটি সফল হয়েছে। আর ছেলেটি অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে। কেননা ছেলেটি মনে করেছিল। ভালবাসা কখনো মরে না।

আজীবন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তাই ছেলেটি মেয়েটিকে নিয়ে একসাথে মরতে চেয়েচিল। একসাথেই পানিতে লাফ দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিতে চেয়েছিল। ছেলেটি মনে করেছিল মৃত্যুর পর তারা আবার মিলিত হতে পারবে পর জগতে।
কিন্তু পর জগতে মিলিত হবার ক্ষেত্রে সে সব শর্ত আছে তার সবই ঐ প্রেমিকযুগল ভঙ্গ করেছে পৃথিবীতে।

প্রথমত তারা ছিল দুজনই একটা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল। দ্বিতীয়ত তারা আত্নহত্যার মত এক ভয়ংকর পাপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ দুটোই আমাদের সমাজে ও ধর্মে নীতি গর্হিত কাজ হিসেবে স্বীকৃত।
ইসলাম ধর্মে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরকালে বেহেশতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিলিত হবার ব্যবস্থা করার ওয়াদা করেছেন। কিছুদিন আগে আব্দুল কাদের মোল্লা তার স্ত্রীকে শেষ চিঠিতে লিখেছেন।

পরিবারের কাজ শেষে তুমি তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে এসো। কাদের মোল্লা ছিলেন একটি ইসলামী দলের শীর্ষ স্থানীয় পর্যায়ের নেতা। ইসলাম সম্পর্কে তার যে অগাধ পান্ডিত্য রয়েছে এতে সন্দেহ নাই। কাদের মোল্লার চাওয়া সৃষ্টিকর্তা পূরণ করলেও করতে পারেন। তবে এই প্রেমিকযুগলের অতৃপ্ত বাসনা কে মিটাবে।

ধর্ম নাকি রাষ্ট্র। যদি ধর্মের কথা বলি তাহলে বলতে হয়, ধর্ম কখনো আত্নহত্যাকে সাপোর্ট করেনা। আর যদি বলি রাষ্ট্রের কথা, তাহলে বলতে হয় রাষ্ট্র কোনদিনই এসব অপরিপক্ক প্রেমের লাফকে সমর্থন করে না। আর তারা যে কাজটি করেছে তা সর্ব মহলেই নিন্দনীয়।
আমার জানা মতে পৃথিবীর এমন কোন ধর্ম নেই, সমাজ নেই, দেশ নেই যেখানে আত্নহত্যাকে সমর্থন করে।

পৃথিবীর কোন দেশ, কোন ধর্মই আত্নহত্যার মত এ অপকর্মকে কখনো সমর্থন করেনি, করতে পারে না ভবিষ্যতেও করবে বলে মনে হয় না। শুধুমাত্র ভারতে সতীদাহ প্রথা ছাড়া।
এই অপরিণত প্রেমিকযুগলের অপরিপক্ক লাফের নিউজটি পড়ার পর থেকে আমি কেবলই একটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছি। বারবার আমার মাথায় কেবলই একটি চিন্তা উদয় হতে লাগল। বলতে পারেন একটা নতুন আইডিয়া আমার মাথায় ভর করলো।

তা হল আমাদের সকলেরই সাঁতার শিখে নেয়া জরুরি। সাঁতার না শিখে আমাদের কারোরই প্রেমের মত স্পর্শকাতর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া মোটেই ঠিক হবে না। তার জন্য বোকামির দন্ড দিতে হবে শেষে। এবং কি সাঁতার না শিখে লাফ দিতে গিয়ে শেষে প্রাণে বেঁচে যাবে আপনার প্রেমিকা। আপনি হয়তো ধারণা করছেন আপনার মত আপনার প্রেমিকাও সাঁতার জানেনা।

দুজনই প্রেমের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছেন। আপনাদের সলিল সমাধি হবে পানিতে। কিন্তু আপনি জানবেনও না যে আপনার অঁগোচরে কখন যে আপনার প্রেমিকাটি সাঁতার নামক অসম্ভব কর্মটি শিখে নিয়েছে।
সাঁতার না শিখে লাফ দিলে আপনি মরেও চ্যাকা খাবেন। আপনার প্রেমিকা মরতে মরতে বেঁচে যাবে।

বেঁচে গিয়ে সে অন্য কোন ছেলের সাথে প্রেম করবে, মজা করবে বা বিয়ে করে ঘর সংসার করবে তখন আপনার মৃত আত্না আপনার জীবিত প্রেমিকার আশপাশে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করবে। আপনার প্রেমিকা যখন স্বামীর সাথে আনন্দ ফূর্তি করবে, হানিমুন করবে, কক্সবাজার, সুন্দরবন, বান্দরবান, সিলেটের চা বাগানে ঘুরে বেড়াবে তখন আপনার মৃত আত্না কেবলই ক্রন্দন করবে।
তাই বাংলাদেশের সকল প্রেমিকের কাছে আমার একটা অনুরোধ, প্রেম করবেন তো আগে সাঁতার শিখে নিন। সাঁতার শিখে তারপর প্রেম করুন। সাঁতার শিখে প্রেম করলে দুইটা লাভ।


এক. আপনি যখন কোনো মেয়েকে ভালবাসবেন বা কারো সাথে ভালবাসার মম্পর্কে জড়াবেন তখন আপনাদের মধ্যে মাঝে মধ্যে মন কষাকষি হতেই পারে। তখন সাঁতার ঔষধের মত কাজ দিবে। আপনি যখন সাঁতার জানবেন বীর পুরুষের মত আপনি হাতিরঝিলে ব্রিজের উপর গিয়ে আপনার প্রেমিকাকে বলবেন এই আমি ঝাঁপ দিলাম। তুমি যদি আমার কথা না শোন তাহলে এই লাফ দিলাম আমি আর বাঁচব না। আমার এ জীবন রেখে কি লাভ।

এসব বলে আপনি যখন লাফ দিতে প্রস্তুত হবেন তখন দেখবেন আপনার প্রেমিকাটি (সত্যিই যদি আপনাকে ভালবাসে)আপনার হাতটি ধরে বলবে ‘সোনা আমি আজ থেকে তোমার কথার অবাধ্য হবনা, তুমি যা বলবা তাই শুনব। এভাবে আপনার প্রেমিকা নিজেকে সংশোধন করে নিবে। আপনি পাবেন আপনার পছন্দমত প্রেমিকা। বিশ্বস্ত একজন জীবনসঙ্গী।
দুই. আপনি উপরের কথাগুলো বলেও যখন আপনার প্রেমিকার মন গলাতে পারবেন না।

তখন কি আর করা আপনাকে সত্যি সত্যিই পানিতে, পুকুরে কিংবা লেকে ঝাঁপ দিতে হতে পারে। এতে আপনার কোনেই সমস্যা হবে না। কেননা আপনি সাঁতার জানেন। লাফ দিলে আপনি মরবেন না। এতে আপনার এক ধরণের লাভ হবে তা হলো আপনার প্রেমিকাটি সত্যিই আপনাকে পছন্দ করে কিনা তা যাছাই করে নিতে পারবেন।

লাফ দিলেও আপনি অন্তত প্রাণে মরবেন না। সাঁতরিয়ে কিনারে উঠতে পারবেন।
তাই সকল বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল প্রেমিকের উদ্দেশে আমার একটি পরামর্শ সাঁতার না শিখে কেউ প্রেম করবেন না। সাঁতার না শিখে ঝাঁপ দিলে আপনি মরবেন ঠিকই আর আপনার প্রেমিকা ঘর করবে পর পুরুষের সাথে। আর আপনার আত্না সারাক্ষণ ক্রন্দন করবে।

তাই সময় থাকতে সাবধান হলেই বা ক্ষতি কি। তাই আর দেরি না করে আজই সাঁতার শিখে নিন।

সুহৃদ আকবর

সংবাদকর্মী

ইমেইল:



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.