আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার লেখালেখির উৎসাহ

আমি কখনোই বই পড়ুয়া স্বভাবের ছিলাম না। কৈশোরে শান্ত এবং কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ছিলাম কিন্তু ভিতরটা ছিল অস্থির। আমি কোথাও বসে বসে বই পড়ব এটা আমার পক্ষে ভাবাও অসম্ভব ছিল। সারাক্ষণ লাফালাফি-ঝাপাঝাপি আর খেলাধুলা নিয়ে ছিলাম। সেই আমি কিভাবে কিভাবে যেন বই পড়া শুরু করলাম।

সে সময় আমরা আমাদের প্রেসিডেন্ট রোডের বাড়িতে থাকি, কমার্সিয়াল এলাকায়। আশে পাশে সময় কাটানোর কোন জায়গা ছিল না, কেউ ছিল না। সময় কাটানোর জন্য তখন বই পড়তাম। এস এস সির পর পড়াটা বাড়ল। এক লেখকের জীবনীতে পড়লাম সে তালিকা করে প্রায় দশ হাজারের মত বই পড়ে ফেলেছে।

ব্যপারটা মাথায় ঢুকে গেল। মনে হল কোন কিছু করলে সেটা অসাধারণ ভাবেই করা উচিত। আমি একটা ডায়েরী নিলাম। একটা করে বই পড়ি আর নম্বার দিয়ে ডায়েরীতে লিখে রাখি। বড় বড় লেখকদের সব বই পড়া শেষ হয়ে যেতে লাগল।

আগে আমার রিডিং খুব স্লো ছিল। এক মিনিটে দুই পৃষ্ঠা পড়ার প্রাকটিস শুরু করলাম। সুধীজন পাঠাগার থেকে দুইটা তিনটা করে বই আনি আর শেষ হয়ে যায়। তখন বই পড়া ছাড়া অন্য কিছুতেই মন নেই। দেখতে দেখতে বিখ্যাত সব লেখকদের একেকজনের আড়াইশ তিনশ’ করে বই পড়া শেষ হয়ে গেল।

পড়তে পড়তেই খেয়াল করলাম যে লেখকরা তাদের কথগুলো কী সুন্দর করে লিখে প্রকাশ করছে। আমার পে যে সেরকম লিখে ফেলা অসম্ভব সেটা জানতাম। তারপরও ডায়েরী লেখা শুরু করলাম। প্রথম দিকে ডায়েরীর লেখা গুলো হত গৎবাঁধা। অনেকটা ‘মাই ডেইলি লাইফ’ কম্পোজিশন এর মত।

এর চেয়ে ফালতু কিছু যে আর হয় না সেটা নিজেই বুঝতাম। তখন নতুন ভাবে ডায়েরী লেখা শুরু করলাম। প্রতিদিনের যে কোন একটা বিশেষ ঘটনা সাজিয়ে লেখা। এভাবে গাইতে গাইতে গায়েন হওয়ার মত একসময় দেখলাম যে আমার ডায়েরীর কিছু ঘটনার বর্ণনা আমার নিজের ভাল লাগছে। অন্যদের কাছে কেমন লাগবে সেটা জানি না তবে আমার কাছে ভাল লাগছে।

ডায়েরীতে ছোট ছোট ঘটনাগুলো সাজিয়ে লিখতে পারছি কিন্তু কোন গল্প লেখার সময় লেখা বাড়তে থাকলে তখন আর পারছি না। অসংলগ্ন কিছু লাইন দাঁড়াচ্ছে। নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হওয়া শুরু হল। আমার একটা গল্প লেখার মতা নেই। কত ভাবে চেষ্টা করেছি, হয়নি।

এভাবে দীর্ঘদিন অক্ষমতার কষ্ট বয়ে বেড়িয়েছি। একদিন একটা ঘটনা আমার ভিতরে খুব দাগ কাটল। মনটাও কিছুটা বিষন্ন ছিল। ভাবছিলাম গল্প লেখার মতা থাকলে নিশ্চয়ই ব্যপারটা নিয়ে একটা গল্প লিখে ফেলা যেত। তখনই ল্য করলাম মাথার ভিতরে অটোম্যাটিক ঘটনাটি গল্পের মত তৈরী হয়ে যাচ্ছে।

আমি হাত বাড়িয়ে খাতা-কলম নিয়ে লেখা শুরু করলাম। যে জিনিস বছর ধরে চেষ্টা করেও পারিনি ঘন্টা খানেকের মধ্যেই স্ইে বিষ্ময়কর ঘটনা ঘটে গেল। একটা সম্পূর্ণ গল্প লেখা হল -‘মেঘে মেঘান্তর’। এবং সেই গল্প পড়ে আমার ভাল লাগছে (অন্যদের কেমন লাগবে জানি না)। নিজের প্রতি নিজের গর্ব বোধ হচ্ছিল - ‘ আরে করেছ কী! এই গল্প তুমি লিখেছ? বাহ্, বাহ্ ’।

আমার কাছে সেটিই আমার লেখা প্রথম সফল গল্প। লেখাটি আমার নিজের কাছে খুবই ভাল লেগেছিল। লেখাটি আমার ভিতর একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছিল। লেখালেখি কিছুর দাবি আছে, যেমনঃ চর্চা, বই পড়া। এসব দাবি পূরণ করতে পারলে নিশ্বয়ই আমার পক্ষেও হয়তবা ভাল লেখা সম্ভব - এই সাহসটি সঞ্চারিত হয়েছিল।

তবে আমাকে লেখালেখির ব্যপারটা প্রথম ধরিয়ে দিয়েছিলেন পলাশ ভাই। ক্লাস সেভেনে তখন পলাশ ভাই ব্যাচে ইংরেজী পড়াতেন। আমার কাছাকাছি পাওয়া খুবই ইন্টেলেকচুয়াল একজন মানুষ। একদিন কী মনে করে পলাশ ভাই ইংরেজী পড়া বন্ধ করে দিয়ে বললেন - ‘আজকে আর পড়াব না। তোমরা নিজের ইচ্ছামত যে কোন বিষয়ে কিছু লেখ।

দেখি কার লেখাটা ভাল হয়। ’ তখন আমার পাঠ্য বইয়ের বাইরে ঠাকুরমার ঝুলি ছাড়া তেমন কোন বই পড়ার অভিজ্ঞতা নেই, লেখালেখি তো দূরের কথা। আমি পলাশ ভাইয়ের কথামত নিজের মনে যা এসেছে তা-ই লিখেছি। সবার লেখা পড়া শেষে পলাশ ভাই বললেন - ‘সোনিয়ার লেখাটা সবচেয়ে ভাল হয়েছে। কিন্তু তাজুলকে কিছু কথা বলব।

’ আমি ঢোক গিললাম। আল্লাহ্ই জানে কী লিখতে কী লিখেছি। মানইজ্জত না আবার যায়। ‘ একজন লেখকের মধ্যে যে ভাবনাটা দরকার তাজুলের লেখার মধ্যে সেই ভাবনাটি আছে। সে যদি চেষ্টা করে তাহলে ভাল লিখতে পারবে।

’ তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশংসাটি ভাল লেগেছিল। লেখালেখির ব্যপারটি বুঝতে পারিনি। পরে যতটুকুই লেখালেখি করেছি তার সবটুকু উৎসাহ-ই এসেছে পলাশ ভাইয়ের সেই কথা থেকে, সর্বক্ষণ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.