আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লেখালেখির ভুত

নিজেকে সাধারণ ভাবতেই আমার বেশি ভাল লাগে। সকল সাধারণের প্রতি আমার আকর্ষণ প্রবল। অসাধারণ সব কিছুকে আমি এড়িয়ে চলি। ক্লাস ফোর কি ফাইভে পড়ি তখন। ঐ সময়টাতে খুব বেশি তিন গোয়েন্দার বই পড়া হত।

ক্লাসের পড়া না পড়ে সারাদিন তিন গোয়েন্দার বই নিয়ে পড়ে থাকতাম। পড়তে পড়তে একটা সময় তিন গোয়েন্দার প্রতি নেশা ধরে গিয়েছিল। যেখানে সন্ধার সময় আমার আম্মা আমাকে পিটিয়েও পড়ার টেবিলে বসাতে পারতেন না সেখানে দেখা গেল আমি মাগরিবের পরপরই পড়তে বসে যাচ্ছি। আম্মা কিছুতেই ব্যাপারটা ধরতে পারলেন না। অনেক গবেষণার পর একদিন তিনি আবিষ্কার করলেন যে আমি পাঠ্য বইয়ের মাঝখানটায় তিন গোয়েন্দার বই রেখে পড়ছি।

তারপরের ঘটনা আর নাই বা বললাম। এরপর থেকে শুরু হল স্কুলে তিন গোয়েন্দার বই নিয়ে গিয়ে পড়া। স্যার যখন ব্ল্যাক বোর্ডে ব্যস্ত থাকতেন ঠিক তখনই কিছু নেশাগ্রস্থ বালক ব্যাগের ভেতর থেকে তিন গোয়েন্দার বই বের করে গোগ্রাসে গিলতে থাকত। আমিও তাদেরই একজন ছিলাম। এজন্য প্রায়ই স্যারের হাতে মার খেতে হত।

এই তিন গোয়েন্দার বই পড়তে পড়তেই একসময় মাথার মধ্যে গোয়েন্দা কাহিনী লিখার ভুত চেপেছিল। আমার একার না। আমার বন্ধু মিতুল আর আনন্দেরও। আমরা তিন জনেই প্রতিদিন বাসা থেকে কিছু না কিছু লিখে আনতাম। এনে একজন আরেকজনকে দেখাতাম।

তারপর মন ভরে একজন আরেকজনের লেখার ভুল ধরতাম। তিন জনেই বুঝাতে চাইতাম যে নিজের লেখাটা বেশি ভাল হয়েছে। এভাবে চলত আমাদের লেখালেখি। একদিন মিতুলের লেখা গল্প পড়তে গিয়ে কেন যেন মনে হল গল্পটা আগেও কোথাও পড়েছি। ভাল করে পড়ে যা বুঝলাম, লেখাটা তিন গোয়েন্দার বই থেকে কপি করা।

তখন আমি আর আনন্দ মিলে মিতুলের চৌদ্দ গুষ্ঠিকে উদ্ধার করলাম। সেসব ঘটনা মনে পড়লে আজও অনেক হাসি পায়। আমার ঐ সময়কার লেখালেখির কিছু কিছু এখনো আমার কাছে আছে। সময় পেলে খাতার পাতা উল্টে পাল্টে দেখি আর আনমনে হাসি। সবই ছিল অর্থহীন লেখালেখি।

কিন্তু ছেলেবেলায় এসব অর্থহীন কাজকর্মের মাঝেও কেমন যেন একটা অর্থ খুঁজে পেতাম। তখন দু'চারটা লাইন লিখতে পারলেই গর্বে বুকটা ফুলে উঠতো। এখন আর তেমন কিছু অনুভব করি না। তবে ছেলেবেলার সেই সময় গুলোকে খুব মিস করি। সেই সময় মাথায় লেখালেখির ভুত চেপেছিল বলেই আজ দু'চারটা লাইন গুছিয়ে লিখতে পারি।

আমার অন্য দুই বন্ধু এখন লেখালেখি করে কিনা জানিনা। তবে আমি এখনো সমানে লেখালেখি করি। মাঝে মাঝে বুঝে, আবার মাঝে মাঝে না বুঝে। কখন যে কি লিখি নিজেও জানিনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.