আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কঙ্কাল হ্রদ

এই হৃদটি অন্য আট-দশটি হ্রদের মতো নয় একদমই। এই হ্রদটির উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ঠিক যে সময় থেকে এই হৃদটি পৃথিবীর মানুষের কাছে পরিচিত হলো, তখন থেকেই এর সঙ্গে রহস্যের ব্যাপারটি একেবারে মিলেমিশে গেছে। ভারতে অবস্থিত এই হৃদটিকে মানুষজন রূপকুণ্ডের রহস্যময় অভিশপ্ত কঙ্কাল হ্রদ হিসেবেই চেনে।

হৃদের মূল ইতিহাস হয়তো পুরনো।

কিন্তু পৃথিবীবাসীর সামনে এর আবির্ভাব খুব বেশি দিন আগে নয়। ১৯৪২ সালের ঘটনা। অবিভক্ত ভারতের ব্রিটিশ গার্ডরা ভারতের রূপকুণ্ডে ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া একটি হ্রদের সন্ধান পায়। এ হ্রদটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ মাইল উঁচুতে অবস্থিত। এর আশপাশের এলাকাও ছিল অতিরিক্ত ঠাণ্ডা।

এতদিন পর্যন্ত কেউই এখানকার এই হ্রদটির কথা জানত না। কারও বর্ণনাতেই এই হৃদের কথা পাওয়া যায়নি।

এ রকম একটি স্থানে অনাবিষ্কৃত এই হ্রদের অবস্থান ব্রিটিশ গার্ডদের অবাক করে দিয়েছিল। কিন্তু তাদের অবাক হওয়ার পালা তখনো বাকি ছিল। হ্রদের আশপাশে ঘুরতে গিয়ে তারা যা দেখল তাতে চক্ষু চড়ক গাছ হওয়ার জোগাড়।

চারদিকে শত শত মানুষের কঙ্কাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এমন দৃশ্য দেখে ভয়ে গার্ডদেরই জমে যাওয়ার অবস্থা হলো। তখন শীতকাল ছিল বলে খুব বেশি বীভৎসতা চোখে পড়েনি। কিন্তু গ্রীষ্ম আসার সঙ্গে সঙ্গে আরও ভয়াবহ দৃশ্যের সৃষ্টি হলো। হ্রদের জমে যাওয়া পানি গলে গিয়ে হ্রদ যত স্বাভাবিক হয়ে আসতে লাগল, ততই হ্রদের পানির নিচে চাপা পড়ে থাকা মানুষের কঙ্কালগুলো ভেসে উঠতে লাগল।

আর সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হ্রদের তীরে এসে সেসব কঙ্কালগুলো জমতে শুরু করল।

১৯৪২ সালে বিশ্বজুড়ে বাজছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। এমন সময় এতগুলো কঙ্কাল একসঙ্গে দেখে অনেকেই ভাবল এগুলো হয়তো মৃত জাপানি সৈন্যদের, যারা লুকিয়ে ভারতে পালিয়ে এসেছিল। এ কঙ্কালের রহস্য উন্মোচনের জন্য ব্রিটিশ সরকার অবিলম্বে একটি প্রতিনিধি দল পাঠায় ভারতে। কিন্তু কঙ্কালগুলো আসলে জাপানি সৈন্যদের ছিল না।

কারণ এসব কঙ্কালের বয়স আরও বেশি বলে মনে হলো। তাহলে কোথা থেকে এলো এত এত মানবকঙ্কাল। এই প্রশ্নের কোনো উত্তর মিলল না। তবে তখন থেকেই এই হ্রদের নাম দেওয়া হয় 'কঙ্কাল হ্রদ'।

একই জায়গায় এতগুলো কঙ্কাল কীভাবে এলো সেটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা কম হয়নি।

কারও মতে ভূমিধস, কেউ বলেছেন মহামারী আবার অনেকের কাছে ধর্মীয় রীতির মাধ্যমে আত্দাহুতি বা উৎসর্গের ফলে এই বীভৎস ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। রূপকুণ্ড নামের এ স্থানটিতে পাথর আর বরফের বিরাট স্তূপ এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, কনৌজের রাজা যশধাভাল, তার রানী ও পরিষদবর্গসহ নন্দী দেবীর মন্দিরে তীর্থযাত্রার জন্য গিয়েছিলেন। আজও প্রতি ১২ বছর পরপর রূপকুণ্ডে নন্দী দেবীর মন্দিরে তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। তবে কোনো কিংবদন্তিতেই অদ্ভুতুড়ে এই হ্রদের কথা উল্লেখ নেই।

স্থানীয় আদিবাসী তো বটেই গোটা বিশ্ববাসীর কাছেই রূপকুণ্ড একটি মৃত্যু বিভীষিকার নাম।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।