আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাহারার আন্তরিকতা ? নাকি প্রতারনা !

বহুল আলোচিত ভারতীয় সাহারা গ্রুপ বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে । করতেই পারে অবাক হওয়ার কিছু নেই । যে কোন বিদেশী কোম্পানী বাংলাদেশের আইন-কানুন মেনে এদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। তবে ভারতীয় কোম্পানী হলে একটু বেশী সুযোগ সুবিধা অফার করা হয় । অনেকটা ট্রানজিটের মত।

যেমন ট্রানজিটের নেয়ার পূর্বে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি রূপি ঋন দেয়া হবে । বলা হয় সহজ শর্তে ঋন । বাঙ্গালী ১০০ কোটি রুপির কথা শুনে তাৎক্ষনিক তাথৈ তাথৈ করে নেচে উঠেছিল । পরে আসল ঘটনা জানতে পারা গেল । আসল ঘটনা কি ? এ নিয়েও পত্র-পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখী হয় - “ঢাকার টাকায় দিল্লীর বানিজ্য” শিরোনামে ।

ঋন পাওয়ার পর তা ঋন গ্রহীতার নিজের টাকা বলেই গন্য হয় । তবে শর্ত হলো এই যে - এ টাকা দিয়ে কিছু বাস , রেলের যন্ত্রপাতি আমদানী করতে হবে ভারত থেকে । বাকী টাকা ব্যয় হবে ট্রানজিটের জন্য সড়ক তৈরী ও মেরামতের কাজে । ভালইতো বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। না মশায় - অতটা গদগদ হবেননা ।

এ বড় রাস্তা আপনার জন্য নয় ! এমনকি ভারতীয় হেভীওয়েট ট্রাকের ধাক্কায় বাংলাদেশী ছোট ট্র্রাকও উঠতেই পারবেনা বড় রাস্তায় । তার উপর কোন দূর্ঘটনা হলে দোষ যারই হোক ভারতীয় ট্রাক ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশী গাড়ি রেকারে ধরে থানায় নিয়ে যাবে হাইওয়ে পুলিশ । ইতিমধ্যে তিতাসের বুকে বাধ দিয়ে ভারতীয় ট্রানজিট ট্রাক চলার ব্যবস্থা করে দেয়া হয় ! অবাক হবেননা । এটা কল্পনা নয় সত্যি । যারা ফারাক্কা ও টিপাইমুখ বাধ নিয়ে লাফ-ঝাপ করছেন তাদের মুখে চুনকালী মেখে দিয়ে তিতাসের বুকে তৈরী হয়েছে বাধ ।

সুতরাং ফারাক্কা ও টিপাইমুখ বাধ নিয়ে লাফ-ঝাপ না করে প্রদীপের নীচের অন্ধকার দেখতে তিতাস পাড়ে যেতে বলছি । যারা স্বশরীরে যেতে পারবেননা তারা http://www.ajkerbangladesh.net/ এ গিয়ে ভিডিও টি দেখে নিন । অনেকে হয়তো ভাবছেন থাক না হয় একটু সমস্যা হলোই । ট্রানজিট ফি তো পাব । এ থেকে বাংলাদেশ ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে ।

“ দুধ দেয়া গরুর লাথিও ভাল !” জ্বী হ্যাঁ - লাথি আপনার জন্য হলেও দুধ আপনার জন্য নয় । কারন সরকার বলে দিয়েছে কোন ফি ই চাইবেনা । সরকারের বক্তব্য হল ট্রানজিট ফি চাওয়া অসভ্যতা ! এখন আপনিই বলুন - বীঁরের জাতি কি অসভ্যতা করতে পারে ? তিরিশ লক্ষ লোক কি এজন্যই রক্ত দিয়েছিল ? তাই ভারত খাবে কলাটা আর বাংলাদেশ ………….. শত হলেও বন্ধু রাষ্ট্র । সাহারার লোগোতে লেখা আছে মাতৃভুমি উন্নয়ন তার মানে হচ্ছে সাহারা বাংলাদেশে জন্ম গ্রহন করেছে এতদিন পর তাই মমত্ববোধ জেগে উঠেছে আর বাংলাদেশকে এবার উন্নয়নে ভাসিয়ে দেবে । অথচ আমরা জানি সাহারা বিদেশী কোম্পানী ।

বাংলাদেশে রেজিষ্ট্রেশন নেয়া হয় সাহারা মাতৃভুমি উন্নয়ন কর্পোরেশন নামে । এটাও একটা চালাকী । কারন বাঙ্গালী মাতৃভুমির উন্নয়নের কথা শুনলেই আবেগে গদগদ হয়ে যায় -যেমনটা গদগদ হয়েছিল “১০ টাকা কেজি চাল - ঘরে ঘরে চাকুরীর কথা শুনে” । পেয়েছে কি ? পায়নী । অথচ নাচতে নাচতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকায় ভোট দিয়েছে ।

সুধু একা দেয়নি আত্বীয়-স্বজন , বন্ধু-বান্ধব , পাড়া-প্রতিবেশীদেরকেও জোড় করে ভোট দিইয়েছে । এত ভোট যে নৌকা ভরে উপচে পড়ে সেই ভোট । সওরের সাধারন নির্বাচন ছাড়া বাংলার ইতিহাসে এত ভোট কোন দল কখনো পায়নী । এমনকি কোথাও কোথাও মোট ভোটারের চাইতেও নৌকায় বেশী ভোট পড়েছে ! বোঝেন বাঙ্গালী কেমন পারে ! এত ভোট নিয়ে নৌকাতো আর চলেনা । ডুবে যায় যায় অবস্থা ।

কারন নৌকার যা ধারন ক্ষমতা এবং ইঞ্জিনের যতটুকু সাধ্য তার বেশী হয়ে গেলে নৌকা চলবে কি করে ? তাই ৪ বছরে নৌকা যতদূর যাওয়ার কথা তার অর্ধেকও যেতে পারেনী বাকী ১ বছরে পারবেও না । ইতিমধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত নৌকার তলা ফুটো করে দিল বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আর দেশ প্রেমিক আবুল হোসেন । ফুটা এত বড়ো যে তা ঠিক করার কোন সুযোগ মাঝি আর পাবেনা । অবশ্য অর্থ মন্ত্রী তাজরীন গার্মেন্টসের শ্রমিকদের মতো বুঝিয়ে যাচ্ছেন বা বোঝানোর চেষ্ঠা করছেন সমস্যা এতটা জটিল নয় / মহড়া চলছে /এটা উন্নয়নের জোয়াড় ! ইত্যাদি ইত্যাদি । শেষ রক্ষা হবে তো ? নৌকার যাত্রীরা অর্থাৎ জনগন বাচবে তো ? না হলে এখনই তালা খুলে দেন জণগন পালিয়ে বাচুক নয়তো শেষে তাজরীন গার্মেন্টসের নিরাপত্তা প্রহরীর মতো তালা খুলতেও যেতে পারবেননা ।

নিজের প্রান বাচাঁতে চাবি নিয়েই পালাবেন আর আরোহীরা ডুবে মরবে । এটা অবশ্য নৌকার দোষ না । দোষ আমার ! অনেকটা ধান বানতে শিবের গীতের মতো । এক প্রসঙ্গ ছেড়ে অন্য প্রসঙ্গে ! কি করবো কথা প্রসঙ্গে কথা উঠলে যে না বলে পারিনা । বাংলাদেশে বিনিয়োগ হলে তা আমাদের জন্য ভালই হয় তবে দেশীয় উদ্যোক্তাদের কথাও মাথায় রাখতে হবে।

সাহারার অন্যতম টার্গেট বাংলাদেশের আবাসন সেক্টর । সরকারের কোনপ্রকার সহযোগীতা ছাড়া এ সেক্টরে বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা যে সফলতা দেখিয়েছেন তা ঈর্ষনীয় । তবে নানাবিধ সমস্যার কারনে দেশীয় উদ্যোক্তারা অতটা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না অথচ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বাংলাদেশে এ সেক্টরকে সরকারী পৃষ্টপোষকতা দেয়া সময়ের দাবী । কিন্তু ঘটছে তার উল্টো । বরং বাড়তি সুযোগ সুবিধা দিয়ে ডেকে আনা হল সাহারাকে ।

বলা হলো কম খরচে আবাসন সুবিধা পাবে বাংলাদেশ ! ভাল কথা । সাহারা পারলে বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা পারবেনা কেন ? বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের সমস্যা কোথায় ? সমস্যা আছে । বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের জমি কিনতে হয় নানা প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে । প্রথমত প্রকল্প এলাকার রাজনৈতিক নেতা,পাতি-নেতাদের ধাপ অনুযায়ী মাসিক ভিত্তিতে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় । জমি সরাসরি কেনা যায়না - দালালের মধ্যস্ততা ছাড়া ।

এখানেই চলে যায় সিংহ ভাগ । তাছাড়া জমির দাম নিয়মিত বাড়তে থাকে । প্রত্যক্ষ অনুসন্ধানে দেখা যায় রুপগঞ্জের জমির দাম বিগত ১০-১৫ বছরে বেড়ে দাড়িয়েছে শতগুন । শীতলক্ষার পূর্বপাড়ে বেস্টওয়ে জমিকেনা শুরু করে ১০ হাজার টাকা শতক হিসেবে। বছর দুয়েকের মধ্যে ঐ এলাকার জমির দাম বেড়ে দাড়ায় ক্ষেত্রভেদে ২-৩ লক্ষ টাকা শতক ।

বর্তমানে বেস্টওয়ের জমি ক্রয় বন্ধ রয়েছে । কারন ক্রমাগত অগ্নিমূল্যে হাপিয়ে উঠেছে বেস্টওয়ে । এমন অবস্থা প্রায় সব ডেভেলপারের ক্ষেত্রেই । এহেন পরিস্থিতিতে দেশীয় উদ্যোক্তারা যেখানে মারা যাচ্ছে সেখানে বাড়তি সুবিধা দিয়ে বিদেশী কোম্পানী আনার দরকার কি? বাড়তি সুবিধাটা কি ? তা হল সাহারা ঢাকা শহরের আশপাশে প্রায় ৪০ বর্গ কিলোমিটার ভুমি নিয়ে ৫ টি স্যাটেলাইট সিটি নির্মান করবে । জমি ও চিহ্নিত করা হয়েছে ।

আর সরকার তা অধিগ্রহন করে দেবে । সরকার অধিগ্রহন করলে জমির দাম হবে সরকারী রেট অনুযায়ী । আমরা জানি সরকারী রেট আর বাস্তব রেট আকাশ পাতাল পার্থক্য । তাছাড়া রেট যাই হোকনা কেন তা কখনোই বাড়বে না । যারা উচ্ছেদ হবে তারা প্রকৃত দাম পাবেনা ।

এমনই এক পরিস্থিতিতে রুপগঞ্জে সেনাবাহিনীর সাথে গ্রাম বাসীর সংঘর্ষ হয়েছিল তা সবারই জানা । শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীরই জয় হয়। সুতরাং সরকার চাইলেই জমি অধিগ্রহন করতে পারেনা বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের মারাক্তক ঘনবসতিপূর্ন এলাকায় । তাই সব জায়গায় প্রতিযোগীতা করা যায়না বিশেষ করে যেখানে দেশের বৃহৎ ক্ষতির আশঙ্কা থাকে । তবে আমি জোড় দিয়ে বলতে পারি সাহারাকে যে সুবিধা দেয়া হচ্ছে তা যদি বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের দেয়া হয় তবে তারা সাহারার চাইতে কম দামে আবাসন সুবিধা দিতে পারবে ।

সাহারা এদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসবে তাকে সাদুবাদ জানাই । আবাসন ছাড়াও দেশে প্রচুর অনগ্রসর সেক্টর আছে যেমন - যোগাযোগ । সাহারাকে বলব আপনি ঢাকা - চট্রগ্রাম মেট্রোরেল প্রকল্পে বিনিয়োগ করুন , ঢাকার গুরুত্ব পুর্ন স্থান মালিবাগ ও সায়েন্সল্যাবে আরো দুটি ফ্লাই ওভার করুন । পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করুন । আপনার প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা ১৬ কোটি মানুষ সহযোগীতা করব ।

আপনার বিনিয়োগের নিরাপত্তায় বিনিদ্র রজনী পাহাড়া দেব । যতদিন আপনার বিনিয়োগ লাভসহ উঠে না আসবে ততদিন আমরা টোলদেব । জানি সাহারা রাজী হবে কারন সাহারা চায় “মাতৃভুমি উন্নয়ন” ? ? ? সম্পাদক-দৈনিক আজকের বাংলাদেশ (অনলাইন) http://www.ajkerbangladesh.net/ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.