আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবনা টেক্সটাইল কলেজ

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প তৈরি পোশাক। বর্তমানে এ খাত থেকেই সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এ শিল্প বিশ্ববাজারে সুনাম অর্জনের পাশাপাশি লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান দিয়েছে। মোট কথা, বাংলাদেশের রফতানি শিল্পে এটি একটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বস্ত্র প্রকৌশলবিদ্যার উন্নতি।

বিশ্ববাজারে প্রকৌশলবিদ্যার কাতারে বস্ত্র প্রকৌশলবিদ্যা এখন একটি উজ্জ্বল নাম। বর্তমান সময়ে এ বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে চাকরির ক্ষেত্রে যে কেউ সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছতে পারে। মূলত উন্নতি আর সাফল্য নির্ভর করে কর্মক্ষেত্র নির্বাচন ও যথাযথ প্রয়োগের ওপর। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন মেধা, মনন ও দক্ষতা। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বে যে কয়েকটি শিল্প মাধ্যম দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে, তার মধ্যে টেঙ্টাইল শিল্প অন্যতম।

টেঙ্টাইল শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ২০০৬ সালে পাবনা টেঙ্টাইল ইনস্টিটিউটকে বিএসসি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে রূপান্তরিত করা হয়। পাবনা টেঙ্টাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস অনেক সুদীর্ঘ। ১৯১৫ সালে উইভিং স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু। পরবর্তীতে এতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কোর্স চালু করা হয় এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্ননের লল্যে এর ল্যাব ও অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়ন চলতে থাকে। আধুনিক জটিল প্রযুক্তির যুগে চাহিদার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সরকার ২০০৬ সালে এখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চার বৎসর মেয়াদি বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি চালু করেন।

বর্তমানে এটি সাফল্যের সঙ্গে এর শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিভিন্ন ল্যাবের উন্নত মেশিনারিজ এবং লাইব্রেরি টেঙ্টাইল সম্পর্কিত আধুনিক বইসমূহ ছাত্রছাত্রীদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্ঞান অর্জনে ব্যাপকভাবে সহায়তা করছে। পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বর্ষভিত্তিকভাবে কোর্স পরিক্রমা চলছে। প্রথম বর্ষে মূলত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর বেসিক ধারণাসহ পিওর সায়েন্সর বিষয়গুলো পড়ান হয়। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীদের বৃহৎ পরিসরে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর তত্ত্বীয় ও ব্যাবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে হয় যা ছাত্রছাত্রীদের কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত করতে থাকে।

তৃতীয় বর্ষে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর আরও বিশদ পড়াশোনার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইকোলজি ও ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পড়তে হয় এবং চতুর্থ বর্ষে ছাত্রছাত্রীদেরকে মেধার ভিত্তিতে স্পেশালাইজেশনের জন্য বিষয় নির্বাচন করতে হয়। বিষয়গুলো হচ্ছে স্পেশালাইজেশন অব ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং, স্পেশালাইজেশন অব ফেব্রিঙ্ ম্যানুফ্যাকচারিং, স্পেশালাইজেশন অব ওয়েট প্রসেসিং, স্পেশালাইজেশন অব গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং। এ ছাড়াও সব বিষয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রোডাকশন প্ল্যানিং বিষয়ে পড়তে হয় এবং পরিশেষে নিজ নিজ বিষয়ের উপর বিভিন্ন টেঙ্টাইল মিলে ইন্টার্নির জন্য পাঠান হয়। টেঙ্টাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্রও অনেক বৃহৎ। তাদের দক্ষতা ও জ্ঞান বিভিন্ন টেঙ্টাইল ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে খুবই মূল্যবান।

ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রোডাকশন মানেজমেন্ট, ডিজাইনে, টেক্সটাইল টেস্টিং ও কোয়ালিটি নিরুপণে, বায়িং হাউস ইত্যাদি ক্ষেত্রে একজন সুদক্ষ বস্ত্র প্রকৌশলী তার দক্ষতা ও জ্ঞান কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে সফলভাবে অংশ নিচ্ছে ।

পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়টুকু কাটে সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান চর্চা নিয়ে। সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান চর্চার জন্য পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আছে সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠন 'অমুকা' ও 'অঙ্কুরিত মুখরিত কাণ্ডারি'। নবীনদের মুখরিত কাণ্ডারি রূপে বিকশিত করাই অমুকার উদ্দেশ্য। কখনো গান, কখনো নাচ, কখনো কাব্যচর্চা, কখনো বা বিতর্ক আবার কখনো বিজ্ঞান প্রজেক্ট এসব নিয়েই চলে আমুকা।

তবে বিভিন্ন সমস্যাও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। কলেজের ছাত্রদের জন্য নিজস্ব আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করছেন। প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের নানা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিনতাই ও খোয়া যাচ্ছে। পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রকল্প পরিচালক মহসিনুল আলম জানান, শিক্ষক কর্মকর্তা নিয়েগের বিষয়টি আমার এখতিয়ার বহির্ভূত। তবে কলেজটির একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুতগতিতে চলছে।

খুব শীঘ্রই এগুলো ব্যবহার উপযোগী হবে। বাংলাদেশের বস্ত্র আজ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। বর্তমানে এ শিল্পের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রয়োজনীয় দক্ষ ও শিক্ষিত জনশক্তি জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি সময়ের চাহিদা পূরণ করবে এটিই সকলের আশা।

*সৈকত আফরোজ আসাদ, পাবনা

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/index.php     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.