আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শূন্য দশমিক শূন্য ডট ডট ডট

শেষ নির্বাচনের রিপোর্ট এখনও ওয়েবসাইটে আসেনি। কাজেই ২০০৮ সাল পর্যন্ত তথ্য নিয়েই এই লেখা। আমি হিসেব করে দেখলাম স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কমপক্ষে বাইশটি বামপন্থী দল পেয়েছি। তাদের বেশির ভাগের মধ্যে একটি মিল আছে। সেটি হল প্রতি নির্বাচনেই তাদের ভোট মোট দেয়া ভোটের যে শতাংশ হয় সেটি সাধারণত: একটি ভগ্নাংশ।

খুব কমই দেখা যায় এটি এক শতাংশের বেশি। দেশ তো স্বাধীন হয়েছে কয়েক দশক হয়ে গেল। দলগুলোও তো কম পুরোনো না। তাহলে এখনও তাদের ভোটের ভাগ শূন্য দশমিক কিছু একটা বা টেনে টুনে এক দশমিক কিছু একটা কেন?
যে প্রশ্নটি করলাম সেটি কি ভুল প্রশ্ন নাকি সঠিক প্রশ্ন? আমি ভয় পাচ্ছি গতকাল মাত্র যে তরুণটি পৃথিবী পাল্টে দেয়ার স্বপ্ন আর বিশ্বাস নিয়ে কোন একটি বামদলে যোগ দিয়েছি সে আবার ভাববে না তো আমি তার দলকে ছোট করে দেখছি? আমি আসলে ছোট করে দেখছি না। আমার প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যের যে বিশাল দূরত্ব সেটি নিয়ে আমি কিছুটা হতাশ।


একটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আমি কি চাই? আমার কোন নির্দিষ্ট ফর্মুলা নেই, কাজেই এই মুহুর্তে মাথায় যা আসছে তা বলি। আওয়ামী লীগের কাছে আমার চাওয়া খুব কম - কাগজে কলমে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও তারা অনেক সময় কাজে সেটি ভুলে যায় এই ব্যাপারটি দ্রুত কমিয়ে আনা আর বাঙালী জাতীয়তাবাদ বলতে তারা কি বুঝায় সেটি সমতল আর পাহাড়ের ভিন্নভাষী আদিবাসীদের কাছে পরিষ্কার করে বুঝানো। বিএনপির কাছে আমার চাওয়া আরো কম - তাদের কাজ পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নেই, কাগজে কলমে আর ওয়েবসাইটে মতাদর্শের নামে তারা যেসব আবর্জনা লিখে রেখেছে সেটি বাদ দিয়ে বাহাত্তরের সংবিধানের চারটি মূলনীতি আগে বুঝা তারপর সেটির ভিত্তিতে তাদের মতাদর্শ ঠিক করা। বামপন্থী দলগুলোর কাছে আমার চাওয়া হল তারা আমাদের একটু পরিষ্কার ধারণা দিক যে তারা আসলে কি চায় - গত ৪২ বছরে তাদের অর্জন কি আর আগামী ৪২ বছরে তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো কি কি? তাদের অর্জনের মূল্যায়ন আমরা ভোট প্রাপ্তি দিয়ে করবে কিনা? না করলে কেন নয়?
একটি ছেলে বা মেয়ে যখন পাশ করে চাকরীর ইন্টারভিউ দেয় তখন তাকে সবসময় জিজ্ঞেস করা হয়, আগামী ৫ ও ১০ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চাও? আমার বামদলগুলোকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছে আগামী ৫টি বা ১০টি নির্বাচনে আপনারা নিজেদের কোথায় দেখতে চান? সেই অবস্থানে যাওয়ার পথটিতে ঝুঁকিগুলো কি কি?
নিচের সারণীতে এখন পর্যন্ত বামদলগুলো কোন নির্বাচনে কে কত শতাংশ ভোট পেয়েছে সেটি দিলাম।

এবার একটু দেখি তাদের ভোটের ভাগ সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে না কমছে।

যেখানে দেখবেন শূন্যে নেমে গেছে ধরে নিবেন তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি অথবা নিলেও কোন ভোট পায় নি, অথবা সেই নির্বাচন পর্যন্ত দলটি টিকেই ছিল না।

নির্বাচনের ভোট হল মানুষের আস্থার বহি:প্রকাশ। ভোট কেনাবেচা হয়, মানুষ সচেতন না এগুলো কোন অজুহাত না। আর তাছাড়া যেকোন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারের নিজস্ব প্রায়োরিটি থাকে। সেটি সে বোকার মত ঠিক করে না, যথেষ্ট হিসেব করেই ঠিক করে।

কেউ যখন ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য ভোট দেয় সেটি তার হিসেবে আছে বলেই ঠিক দেয়, কেউ যখন আগের রাতে ৫০০ টাকা নিয়ে ভোট দেয় তখনও সেটি তার হিসেবের মধ্যে আছে বলেই ভেবে চিন্তে দেয়। সবার ভোট বিক্রির মূল্য বা কারেন্সি একই হওয়ার কথা না। সবার কারেন্সী বুঝে সে অনুযায়ী আস্থার জায়গা তৈরি করে নেয়াকেই বলে রাজনীতি।
৪০ বছর ধরে বামদলের নেতাকর্মীরা যা করছেন সেটিও রাজনীতি। কিন্তু ওনাদের রাজনীতিটি আমি কেন যেন ঠিক বুঝতে পারছি না।

ওনারা কেমন বাংলাদেশ চান? সেই বাংলাদেশের নীতি, সংবিধান, আইন, বিধি, বিধান কেমন হতে হবে? সংসদে যদি বসতেই না পারা যায় তাহলে সেই বাংলাদেশ কেমন করে হবে? নাকি তারা একটু ধীরগতিতে আগাচ্ছেন? সেটি হলে তা কতটুকু ধীর?
তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে তো সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দলদুটির একটি হতে হবে তো!‍ চলুন দেখি তারা তাদের সে লক্ষ্য থেকে কতটুকু দূরে আছেন? সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী লীগের ভোটটি উপরের গ্রাফে বসালে কেমন হয় দেখি?

বামদলগুলোর গ্রাফ আওয়ামী লীগের গ্রাফের গোঁড়ালিতে জড়াজড়ি করে পড়ে আছে। তাও এক দু বছর ধরে না, ৪২ বছর ধরে। এটি কি প্রত্যাশিত?
নিজের পছন্দমত নীতি, সংবিধান ও আইন করতে গেলে তো ৪০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। গড়ে এক শতাংশ ভোট পেতেই তো ওনাদের ৪২ বছর লেগে গেল। বাকি ৩৯ শতাংশ পেতে কত বছর লাগবে? ৪২ গুণ ৩৯ = ১৬৩৮ বছর? গত কাল যে তরুণটি কোন একটি বামদলে যোগ দিল তার দল কি তাকে তার জীবদ্দশায় পুথিবী পাল্টানোর সুযোগ দিতে পারবে?
আমি বলছি না যে একজন নেতা বা কর্মীর জীবদ্দশাতেই পৃথিবী বা নিদেনপক্ষে দেশ পাল্টাতে পারতে হবে।

তা ছাড়া পরিবর্তন নিজেই একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু সেই জায়গায় পৌঁছানোর একটি ধাপ তো জাতীয় নীতিগুলো সংশোধনের জন্য দরকারী ভোটগুলো পাওয়া। সেই ধাপটিতে কতদিনে পৌছানো যাবে তার কোন ধারণা কি বামদলগুলোর বড় বড় নেতাদের আছে? সেটি কি দেড় হাজার বছর?
আর ততদিন কি বাকি দলগুলো বসে থাকবে?
বামদলগুলোর নেতারা হয়তো ধর্মে বিশ্বাস করে না কিন্তু পৃথিবী যে একদিন ধ্বংস হবে সেটি কিন্তু বিজ্ঞানও বলে - কেয়ামত হোক বা না হোক। হাজার বছর একটু বেশিই দেরি হয়ে যাচ্ছে! ওনারা কিছু না করলেও পৃথিবী ততদিনে পাল্টে যাবে।


সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।