আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনীতির কৌশল, নিঃস্বার্থ রাষ্ট্রসেবা



রাজনীতির কৌশল, নিঃস্বার্থ রাষ্ট্রসেবা
ফকির ইলিয়াস
=====================================
না, বিএনপি জামাতকে ত্যাগ করছে না। করবেও না। খালেদা জিয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে সমাবেশ করেছেন, তাতে জামাতের হাজার হাজার লোক ছিল। নেতা না থাকলে কী হবে! এটা বিএনপির একটা কৌশল। অন্যদিকে খালেদা জিয়া ভারতকে জড়িয়ে কথা বলে সেই পুরোনো ‘ইন্ডিয়া বিরোধী’ মানসিকতাই প্রকাশ করেছেন।

আর লবিং করছেন ভারতের কৃপা পাবার জন্য।
কিন্তু তারপরও একটা বিশ্বাস নিয়েই এই প্রজন্ম চলছে। তা হচ্ছে, ঘুরে দাঁড়াবেই বাংলাদেশ। আমরা এর প্রমাণ দেখছি। গোটা দেশজুড়ে অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে মানুষ।

ঠাকুরগাঁওয়ে যে জনসমাবেশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ, তা ছিল লাখো মানুষের ঢল। ‘সাম্প্রদায়িক হামলা, রুখে দাঁড়াও বাংলা’ সেøাগানে তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রোববার ৩টায় গোপালপুর গ্রামে পৌঁছান গণজাগরণ মঞ্চের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। গোপালপুর ইসকন মন্দির প্রাঙ্গণে সমাবেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রোধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করে আলাদা আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয়।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, ’৪৭ সাল থেকে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সব ঘটনায় জামাত জড়িত। তবুও এ দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা জামাত-শিবিরকে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে অভিহিত করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, সারা দেশে যেসব মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দাঁড়িয়েছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে রয়েছেন, তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ালেই এ দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও তাদের ম“দাতা জামাত-শিবির এ দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
ইমরান এইচ সরকার কর্ণাই গ্রামের হিন্দু সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর উদ্দেশে বলেন, এই দেশে স্বাধীনতাবিরোধী জামাত-শিবিরের কোনো ঠাঁই নেই। ঐক্যবদ্ধ থেকে বুকে মুক্তিযুদ্ধের সাহস নিয়ে তাদের প্রতিহত করতে হবে। একটি কথা খুবই স্পষ্ট, কোনো ন্যায়ভিত্তিক আন্দোলনই বিফলে যায় না। আরো একটি সংবাদের দিকে আমরা চোখ বুলাতে পারি।

আমরা ইতোমধ্যেই খবরে জেনেছি, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করবে না পাকিস্তান। জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ খান সম্প্রতি বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেনকে এ কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মানবতাবিরোধী অপরাধে জামাত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করে। এরপর ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার আফ্রাসিয়াব মেহদি হাশমিকে তলব করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার তীব্র প্রতিবাদ জানায়।


পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ওই নিন্দা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে বিক্ষুব্ধ জনগণ পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করারও দাবি ওঠে।
পাকিস্তান, বাংলাদেশে ৭১ সালে যে গণহত্যা করেছিলÑ এর জন্য তারা এখনো ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। বরং তারা এখনো বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ আইনি শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। আর এদের বাহবা দিচ্ছে বাংলাদেশেরই কিছু মৌলবাদী রাজনৈতিক দল।


এদিকে হঠাৎ করেই কিছুটা পাল্টে গেছে জামাতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক। গেলো সোমবারের গণসমাবেশে দেখা গেছে জামাতে ইসলামীর শীর্ষ নেতার নির্ধারিত আসনে স্থান পেয়েছেন কাজী জাফর আহমদ। এ অবস্থায় সমাবেশে আসা ১৮ দলের শরিক নেতা ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে জামাত থাকবে কি-না তা নিয়ে চলছে কানাঘুষা। জোটের বিগত সব কর্মসূচিতে দেখা গেছে- মঞ্চে খালেদা জিয়ার পরের আসনটি এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অব. অলি আহমেদের জন্য নির্ধারিত থাকতো।

এরপরের আসনটি থাকতো জামাতে ইসলামীর শীর্ষ নেতার জন্য। তবে আজকে এর ব্যতিক্রম চোখে পড়েছে। কারণ জামাত সমাবেশে যোগ দেবে নাÑ এ কারণে গণসমাবেশে জামাত নেতার নির্ধারিত আসনে জায়গা পেয়েছেন জাতীয় পার্টি একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ।
১৮ দলের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা মিডিয়াকে বলেছেন, ‘আজকের সমাবেশে ১৮ দলের অন্যতম শরিক জামাতে ইসলামীর জন্য মঞ্চে কোনো আসন রাখা হয়নি। তাদের স্থানে যুক্ত হয়েছে কাজী জাফর আহমদ।

’ জোট থেকে জামাতকে বাদ দেয়া হবে কিনাÑ জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। তবে আমি অবাক হয়েছি জামাতের আসনে জাতীয় পার্টিকে দেখে। ’ এটা বিএনপির কোনো নতুন চাল কিনাÑ তাও বুঝা যাচ্ছে না এখন পর্যন্ত। তবে জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করলে বিএনপিই লাভবান হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশে আবারো বইতে শুরু করেছে ভোটের হাওয়া।

এই ভোট উপজেলা নির্বাচনের। একটি তফসিল ঘোষিত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের ১০২টির তফসিল ঘোষণার একদিন পর গেলো সোমবার শেরেবাংলা নগরে নিজের কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চলতি ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চের শেষ সপ্তাহে দ্বিতীয় দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে এ সপ্তাহেই দ্বিতীয় তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ গেলো রোববার প্রথম দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
১০২টি উপজেলার পর দেশের ৪৮৭ উপজেলার বাকিগুলোতে ধাপে ধাপে ভোট করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

খবর বয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ অন্যান্য মেয়াদ শেষ হওয়া সিটিতেও নির্বাচন সম্পন্ন করবে ইসি। যে বিষয়টি দেখা যাচ্ছে, তা হলো বাংলাদেশ তার কার্যনির্বাহী ক্ষমতা নিয়েই এগোচ্ছে। এখানে মৌলবাদীরা কী বললো তাতে গণমানুষের কিছুই যাচ্ছে-আসছে না।
এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হু মু এরশাদ আবারো কিছুটা সক্রিয় হয়েছেন নিজ দলে। সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য ৯৬ জন মহিলা প্রার্থীর ইন্টারভিউ নিয়েছেন তিনি।

এর মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন ৬ জন। এটা সবাই জনেন, এরশাদ এখন ঐ আগের কায়দায়ই পতিত নেতা। তার সকল কাজকে কী ‘রাজনৈতিক উদ্ধার’ বলা যাবে? না যাবে না। তারপরও তিনি আছেন! থাকবেন! বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
বাংলাদেশের এই মুহূর্তে প্রধান সমস্যা হচ্ছে সন্ত্রাস।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সফর করেছেন। সাতক্ষীরার নাশকতা দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা সাতক্ষীরাকে রক্তাক্ত করেছে, যারা মানুষ খুন করেছে, তারা কেউ রেহাই পাবে না। প্রত্যেককে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সাতক্ষীরা আর রক্তাক্ত থাকবে না। তিনি সাতক্ষীরাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা (সাতক্ষীরাবাসী) নিজেরা শক্তি নিয়ে এ অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন।

আমরা আপনাদের পাশে আছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপনাদের পাশে আছে’।
যতোদিন সাতক্ষীরায় শান্তি ফিরে না আসবে, ততোদিন সেখানে যৌথবাহিনী থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে জামাত-শিবিরের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান তিনি। গোটা দেশে সন্ত্রাস দমনে সরকারকে আরো শক্ত হতে হবে। মনে রাখা দরকার, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি, জামাতও অংশ নেবে।

কারণ সেটা দলীয় নির্বাচন নয়। তাই দেশের প্রত্যন্ত এলাকা আবারো চরম অশান্ত করে তোলা হতে পারে। দেশে যতোক্ষণ শান্তি ফিরে না আসে ততোক্ষণ উন্নয়নের চরকা শক্তিশালী হবে না। আর সে প্রয়োজনেই প্রধান ভূমিকা নিতে হবে ক্ষমতাসীনদের। নবনির্বাচিত মন্ত্রীরা এখন নিজ নিজ এলাকায় সংবর্ধনা নিয়ে ব্যস্ত।

মনে রাখতে হবে মুখে অনেক আপ্তবাক্য বলে যে মন্ত্রীরা ক্ষমতায় এসেছেন, তারা যে তাদের কিছু পূর্বসূরির মতো চুপসে না যান। তারা যেন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি থেকে দূরে থাকেন।
কারণ আওয়ামী লীগ যে সুযোগ পেয়েছে তা কাজে লাগাতে ক্ষমতাসীনদের চাক্ষুস হতে হবে। যদি তাদের ভরাডুবি হয়, তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি কালের গহ্বরে তলিয়ে যেতে পারে।
বিএনপি রাজনীতিতে নতুন কৌশল খুঁজছে।

এই কৌশল মোকাবেলা করতে হলে আওয়ামী লীগকে মানুষের সেবার মাধ্যমেই জবাব দিতে হবে। এই সরকার দুই বছর থাকুক আর পাঁচ বছর থাকুক, আওয়ামী লীগের হারানো অর্জন, পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই কঠিন কাজটি করতে, দল ও সরকারকে হতে হবে আরো অনেক হিসেবি।
---------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥: শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৪

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.