মানুষের ভালোবাসাই তো মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি,সফল হওয়ার পেছনে। "
১।
“এই তানিয়া, তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে। “
পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে সরাসরিই বলে ফেলে পলাশ। তানিয়া সবে ক্লাস এইটে পড়ে।
অনেক কচি একটা মন তাঁর। পলাশ এলাকার বখাটে ছেলেদের একজন। বখাটে হলেও এলাকায় অনেক ভদ্র থাকে। অনেক মানুষের উপকারও করেছে এলাকায়। তবে বাইরে পলাশের নামে অনেক অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়।
তানিয়া এলাকার বড়ভাই হিসেবেই পলাশকে সম্মান করতো। কিন্তু পলাশ খুব ভালো করেই জানে কীভাবে মেয়েদের কচি মনে আলোড়ন তুলতে হয়। তানিয়া স্বভাবে লাজুক। তাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় পলাশের কথায়। মনের যুদ্ধে হেরে যায় কচি আনাড়ি খেলোয়াড় তানিয়া।
অবচেতন মনেই ভালোবেসে ফেলে পলাশকে।
২।
“এই পলাশ, বল না দোস্ত, কবে টেস্ট করাবি তানিয়ারে?” অবলীলায় বলে উঠে তানিম।
পলাশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তানিম। সাথে সজিব আর দুলাল।
এই চারবন্ধু সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে গল্পে মেতে উঠে তানিয়ার উঠন্ত শরীর নিয়ে। অশ্লীলতার চূড়ান্ত অধ্যায় ছাড়িয়ে যায় তানিয়ার এক একটা অঙ্গ নিয়ে। “দোস্ত, আমি আগে কিন্তু...............!” বলে উঠে সজিব।
পলাশ বলে, “ ধীরে বন্ধু, ধীরে। চিরিয়া তো হাতের মুঠোয়ই আছে।
খালি একটু অপেক্ষা কর। “
৩।
ছয়মাস পর। তানিয়ার ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হয়ে সবে নাইনে উঠেছে। সেই সময়ের কোনো একদিন সন্ধ্যাবেলা।
অপরিণত ভালোবাসার টানে তানিয়া পলাশের সাথে হাঁটতে হাঁটতে ওদের বাসায় যায়। পলাশদের বাসায় সবাই গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেছে ছুটিতে। অপ্রস্তুত তানিয়া সেদিন ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারে নাই তাঁর ভাগ্যে আজ কি ঘটতে যাচ্ছে। পলাশদের বাসায় এলাকার আরও তিন বড়ভাইদের দেখে অবাকের চেয়ে আতংকিতই হয় বেশি তানিয়া। তবে কি আজ তাঁর সতীত্ব হারিয়ে যাবে এদের কাছে?
ভয়ে মুখ দিয়ে চিৎকার বের হয় না তানিয়ার।
কেমন যেন ফ্যাঁকাসে আর রক্তশূন্য হয়ে যায় কচি মুখটা। গলা দিয়ে ফ্যাস ফ্যাস শব্দ বের হয়। যখন বুঝতে পারছে তাঁর ভাগ্যে কি ঘটছে তখন আর কিছুই করার নেই। চারজন রাক্ষস ছিঁড়ে খেয়ে ফেলে তানিয়ার কচি শরীরটা। গণধর্ষিতা হয় তানিয়া চার বখাটের কাছে।
কাজ শেষ হলে সে অর্ধ অচেতন অবস্থায় শুধু এটুকুই শোনে, “যদি কাউকে বলিস, তাহলে যে ভিডিও করে রেখেছি, ফ্লাশ করে দিবো। “
৪।
তিনমাস পর ধরা পড়ে তানিয়া প্রেগন্যান্ট। মেয়ের এই অবস্থায় উদ্ভ্রান্ত বাবা মা জানতে পারে চার পিশাচের ঘটনা। এতদিন ভয়ে কিছু বলে নাই তানিয়া।
সব শুনে মামলা করে দেয় ওই চার পিশাচের নামে।
পালিয়ে যায় চার পিশাচ। তবে ওদের বাবারা টাকা পয়সা দিয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলতে চাইলেও তানিয়ার বাবা মা রাজি হয় নাই।
শেষে বখাটেদের পরিবার তাঁদের অর্থ আর ক্ষমতার জোরে আইনকে কিনে নেয়। বিচার পায় না তানিয়া।
বরং পায় অভিশাপ আর তাচ্ছিল্য। এ সমাজে গনধর্ষিতা মেয়েকে সবাই আবার ধর্ষণ করতে ব্যস্ত হয়ে যায়, ধর্ষকদের কথা ভুলে যায়। তানিয়ার ভাগ্যেও তাই হয়েছিল। বিচার না পেয়ে আরও অপমান গ্রাস করে বসে তানিয়া। এতো অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজেদের বসতভিটা ছাড়তে বাধ্য হয় তানিয়ার পরিবার।
৫।
চার বখাটে এখন বহাল তবিয়তে আছে। একজন বাবার পাক্কা ব্যবসায়ী হয়ে গেছে। একজন পুলিশের হাবিলদার পদে আছে। একজন ঘরজামাই হয়ে শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছে।
আর একজন পুরো দ্বীনী এলেম হয়ে গেছে। শুনেছি স্থানীয় মসজিদে আজান দেয় সে এখন।
৬।
না, এখানেই শেষ নয়। তানিয়াও হাত ছাড়ে নি।
আত্মহত্যার পথকে না বেছে সে বেছে নিয়েছিল সংগ্রামী জীবন। তাঁর একাগ্র জীবনীশক্তি আর কঠিন মনোবলে নতুনভাবে জীবন সাঁজাতে পেরেছে সে। হাজার প্রতিকুলতাকে জয় করে সেও সাফল্য পেয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসিতে অনেক ভালো রেজাল্ট করেছিলো সে। এখন সে একটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে বিভাগে পড়ছে।
ভালো রেজাল্টও করছে সে। ভবিষ্যতে বড় হয়ে সে একজন আইনজীবী হতে চায়। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।