সাম্প্রতিক সময়ে ‘জামায়াত-শিবির ও বিএনপি কর্মীদের হামলায়’ গুরুতর আহতদের দেখতে বুধবার ন্যাশনাল অর্থোপেডিক হাসপাতালে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বলব, উনার (খালেদা জিয়া) লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসী বাহিনীকে উনি যেন সামলান। উনার সন্ত্রাসী বাহিনীকে উনার সামলাতে হবে। ”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রত্যেক মানুষের একটা জীবন আছে। কারো জীবনযাত্রায় বাধা দেয়ার অধিকার কারো নাই।
সকলেরই শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করার অধিকার আছে। সে অধিকার রক্ষায় যা যা পদক্ষেপ নেয়ার আমরা নেব। ”
নির্বাচন ঘিরে ১৯ দলের ২৯ হাজার ২৬২ জনকে গ্রেপ্তারের যে অভিযোগ খালেদা জিয়া করেছেন, তারও জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দাবি করেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে এক মাসে বিরোধী জোটের ৩০০ নেতা-কর্মীকে হত্যা অথবা গুম করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “উনার নেতা-কর্মীরা কী ঘটনা ঘটাচ্ছে- তা কী উনি দেখতে পাচ্ছেন? উনি যে তালিকা পড়লেন- চিহ্নিত করা গেছে, তারা সবাই তো সন্ত্রাসী।
”
শেখ হাসিনা বলেন, “উনার দলের লোক যদি সন্ত্রাসী হয়- তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। মায়াকান্না করে তো লাভ নেই। ওই মায়া কান্না করে উনার লাভ হবে না। উনাকে বলব, উনার ওই সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে উনি যে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছেন- তা উনার ভুল। ”
হাসপাতালে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী কানসাটের আওয়ামী লীগ নেত্রী ও শিবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য নূরজাহান বেগমকে দেখতে যান।
গত ২২ জানুযারি কানসাটের কলাবাড়িতে বাস থেকে নামিয়ে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি কর্মীরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।
নূরজাহান বেগম সাংবাদিকদের বলেন, “২২ জানুয়ারি বিকাল ৫টায় বিএনপি ও জামাত-শিবিরের লোকজন আমার ওপর হামলা করে। আমার চার হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। আমার বুকে ছোরা মারে। কোমরেও কোপ দেয়।
”
শেখ হাসিনাকে দেখেই নূরজাহান বেগম বলেন, “আমি কি অপরাধ করেছি?”
প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “এভাবে একজন ভদ্র মহিলাকে মারবে!”
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের কাছ থেকে নূরজাহানের চিকিৎসার খোজ-খবর নেন।
এরপর তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরের নূরজাহান বেগমকে দেখতে যান। মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী নূরজাহান ও তার তিন মেয়ের ওপর ১৬ জানুয়ারি দুপুরে হামলা চালায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
ষাটোর্ধ্ব নূরজাহান বেগমের মাথার পেছনে চাপাতি দিয়ে আঘাত করা হয় এবং ভেঙে দেয়া হয় ডান হাঁটু।
নূরজাহানের বড় মেয়ে স্থানীয় পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের পরিবার কল্যাণ সহকারী শামসুন্নাহার শাহীনের দুই পায়ের রগ কেটে দেয়ার পাশাপশি পা ও ডান হাতের হাড় ভেঙে দেয়া হয়।
এছাড়া শাহীনের অন্য দুই বোনের মধ্যে মাসতুরা জাহান তুহিনের দুই হাত ভেঙে দেয়া হয়, কেটে দেয়া হয় কানন জাহানের বাম পায়ের রগ।
প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা দেখেছেন। আমার সাথে ছিলেন। কি নৃশংস হতে পারে মানুষ। বিশেষ করে মহিলাদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে।
একজন ইউনিয়ন কাউন্সিলর সদস্যের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। বুকে ছুরি মেরেছে। তার পিঠে কোমরে, এমনকি বুকে ছুরি মেরেছে। ”
প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “আমি জানি না তারা কী মায়ের পেটের সন্তান? যে মায়ের পেটে বড় হয়, যে মায়ের দুধ খেয়ে বড় হয়, মায়ের জাত- তার ওপর কীভাবে এরকম আক্রমণ করে?”
বিএনপি নেত্রীর ‘নির্দেশে ও মদদে’ বিএনপি ও জামাত-শিবির কর্মীরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নূরজাহান বেগমের ওপর হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি নেতার নির্দেশে তার হাত-পা ও ব্রেস্ট কেটে ফেলা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে কি আমরা ব্যবস্থা নেব না? অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। ”
জামায়াতে ইসলামের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের হামলায় মারাত্মক আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাজ্জাদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক জালাল আহমদকেও দেখতে যান প্রধানমন্ত্রী।
গত বছরের আট অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইটে সাদ্দামের ওপর হামলা করে শিবির। প্রথমেই শিবিরকর্মীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে আঘাত করে বলে অভিযোগ করেন সাদ্দাম। এরপর তার বাঁ হাতের হাড় ভেঙে দিয়ে রগ কেটে দেয়া হয়।
বাঁ পায়ের রগও কেটে দেয় শিবিরকর্মীরা; ডান পায়ে চাপাতি দিয়ে দেয়া হয় আটটি কোপ।
সাদ্দাম বলেন, “পরে তারা আমাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। ”
সিলেটের নাইওরপুলে গত ১১ জানুয়ারি হামলার শিকার হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক জালাল আহমদ। তিনিও এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জালালকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে মাথায় হাতুড়ি পিটিয়ে ফুসফুসে ধারালো অস্ত্রের আঘাত করা হয়।
তার হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়ার পাশাপাশি বাঁ পায়ে কোপানো হয়।
রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “রাজশাহীতে তো ছাত্রলীগের ১৬/১৭ জন সদসদের হত্যা করেছে।
“জেলায় জেলায় জামায়াত-শিবির ও বিএনপি এই ধরনের হামলা চালাচ্ছে। তাদের আন্দোলনই হচ্ছে মানুষ খুন করা। ”
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার তো ব্যবস্থা নিচ্ছে।
আমরা যখন যেখানে যাকে পাব তাকে ধরব। আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ”
বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য কলে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি নেত্রীকে বলব, উনি তো সন্ত্রাসী ছাড়া কিছুই বোঝে না। তার কাজই তো সন্ত্রাস করা আর মানুষ হত্যা করা।
… উনি অনুসরণ করেন রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধীদের। তারাই তার লোক। ”
সরকার এগুলো ‘বরদাশত’ করবেন না বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসব হামলার ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ছিল কিনা- এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রশাসন নিষ্ক্রিয় না। আচমকা হামলা করা হচ্ছে।
যথন যেখানে যা ঘটছে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। ”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।