আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্নি বাই মেমোরি (গল্প)

এই ব্লগের যাবতীয় কর্মকান্ড জুনায়েদ খানের অনুর্বর মস্তিষ্কের অহেতুক পাগলামি ! বৈ কিছু নয়।

একটু আগেই ঘুম থেকে উঠেছে অর্ক। এত সকালে সাধারণত ঘুম থেকে ওঠে না সে। রুমমেট অর্নবের খুঁটখাট শব্দ উঠতে বাধ্য করেছে অর্ককে। অর্নব নীল জিন্স আর অফ হোয়াইট পাঞ্জাবী পড়ে অর্কের অস্ট্রেলীয় খালার পাঠানো বডি স্প্রে টা খালি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আজ ভালোবাসা দিবস। অর্নব ঘুরতে যাবে। সাথে থাকবে গোল গাল চেহারার রক্তশূন্য মেয়েটি। কি যেন নাম মেয়েটার? অর্পিতা! মনে পড়েছে অর্কের। দু’বছরের রিলেশন ওদের।

গত বছরও ওরা ঠিক এভাবে ঘুরতে বেড়িয়েছিল। ব্রহ্মপুত্রের পাড় ধরে হেঁটে হেঁটে অনেক দূর গিয়েছিল। ‘আমার খাবার অফ করে দিস! গেলাম...’ মোবাইল টা চার্জ থেকে খুলে তড়িঘড়ি করে চলে যায় অর্নব। বকুলতলায় ওর জন্য অপেক্ষা করছে অর্পিতা।

অর্কও আজ ঘুরবে।

ঠিক গত বছরের মত। দরজাটা লাগিয়ে লকার থেকে ল্যাপটপ বের করে অর্ক। তারপর ওর লুকিয়ে রাখা সম্পদ গুলো বের করে। আর্কাইভ করে রাখা অনুর পাঠানো হাজার হাজার এসএমএস! প্রতিবার শেষ থেকেই ভ্রমণ শুরু করে অর্ক।

শেষ দিন (৩০ আগস্ট, ২০১০):

“কাল যাচ্ছি।



জানি। ভোরে যাবে।

তোমার কি খারাপ লাগছে?

না। আমি আনন্দে নৃত্য করছি

মন খারাপ করো না

কেন করব না?

করবে? তো করো!

করেই তো আছি

তোমাকে টেক্সট করাটা আর আমার উচিৎ হবে না

করিও না

বিয়ে কবে?

১৯ অক্টোবর

মনে হয় মিস করব

কি মিস করবে? বিয়ে নাকি আমাকে?

বিয়ে

তোমার সামনে ফাইনাল না?

হুম

কাল যেয়ে চোখ-কান বন্ধ করে পড়া শুরু করে দেবে। আমি আর বিরক্ত করব না।



তাই নাকি? আচ্ছা প্রথম টেক্সটা কি মনে করে করেছিলে?

তোমাকে মনে পড়ছিল তাই। কেন?

না এমনিতেই। বলছিলাম ব্যাপারটা কেমন যেন। এইযে তোমার সাথে আমার কোন যোগাযোগ ছিল না। হঠাৎ টেক্সট এল।

আস্তে আস্তে আমরা কত ক্লোজ হয়ে গেলাম। বিচ্ছেদের সময়টাও হঠাৎ করেই চলে এল। ডিউরেশনটা খুব কম তাই না?

হ্যা খুবি কম। তোমার কি আমার কথা কখনো মনে হয়েছিল?

সত্য বললে কষ্ট পাবে

সহ্য করতে পারব

আমার ড্রিম গার্লের কথা বলেছিলাম। মনে পরে? গার্ল টা তুমি ছিলে!

পরেছে

উত্তর পেয়েছো?

পেয়েছি

কি মনে হচ্ছে? সবাই একি রকম?

না

তবে?

কিছু না।

তোমার কথাগুলো কি ভুলে যাব?

শর্ত তো এমনই ছিল মনে হয়

গেলাম

আমার কুৎসিত পরিচয়টা তোমাকে জানিয়ে দিলাম। হঠাৎ কখনো মনে পরলেও আর যোগাযোগ করার ইচ্ছে করবে না।

যদি খুব বেশী মনে পরে তখন কি করব?

বেশী মনে পরার তো কোন কারণ দেখি না।

পৃথিবীতে কারণ ছাড়াও অনেক কিছু ঘটে অর্ক

আমাকে মাফ করতে পারবে নাকি পারবে না?

কেন?

অনুমতি না নিয়ে কারো হৃদয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা কি অপরাধ নয়?

এতদিন ছিল না তবে এখন অপরাধ

তুমি সত্যিই অনেক ভালো একটা মেয়ে। দেখিও তোমার বরও অনেক ভালো হবে।



থ্যাঙ্কস। তুমিও অনেক ভালো

মনে হয় না

বললাম আর বিশ্বাস হল না? এ জন্যই তো বলতে চাই না

আর বলারও সুযোগ পাবে না। তোমাকে অনেক মিস করব রে

আমি কাউকে মিস করব না

আমার গাইতে ইচ্ছে করছে- “চলে যদি যাবি দূরে স্বার্থপর... তবে কেন জোছনা দেখালি...??”

আমি তোমাকে জোছনা দেখাইনি

তবে টেক্সট করেছিলে কেন?

আমি কি জানতাম কুসুমেও কীট থাকে?

আরে এমনিতেই মজা করলাম। কে আগে বাই বলবে তুমি না আমি?

তুমি

শুরুটা তুমিই করেছিলে, শেষটাও তুমিই করবে

বিশ্বাস করো আমি এমন শেষ চাইনি অর্ক। পৃথিবী তোমার আমার ইচ্ছায় চলে না।

স্বার্থপরকে পারলে ক্ষমা করে দিও। সব কলি ফুল হয় না অর্ক। তবে কষ্টে কষ্টে কাটাকাটি হয়। ভালো থেকো... বাই ”

সেদিন শেষ বাই টা ইচ্ছে করেই বলেনি অর্ক। বাই মানে শেষ! কিন্তু অর্কের তো কিছু শেষ হয়ে যায় নি! অণু তো আর্কাইভে সেই আগের মতই আছে! আজো চোখ বন্ধ করলে সে অণুর ভেংচি কাটা মুখ দেখতে পায় সে।

না, অর্কের প্রথম পছন্দ, প্রথম ভালোলাগা হারিয়ে যায়নি। হয়তো একসাথে হাতে হাতে রেখে নদীর পাড় ধরে হাঁটার সৌভাগ্য তার কোন কালেই হবে না, কিন্তু সে তার নিজের সাজানো জগতে আজীবন সেই অনুর সাথেই ঘুরবে। সে মিছেমিছি বাই বলবে কেন?

পরের ফাইল ওপেন করে অর্ক। ২৯ আগস্ট, ২০১০ ইং: … … …

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।