আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি একজন সংখ্যালঘু

ছাপোষা মধ্যবিত্ত আমি একজন সংখ্যালঘু, আমি আওয়ামীলীগ করিনা, বিএনপি করিনা, জামাত তো প্রশ্নই উঠেনা----মিছিল দেখলে দুরু দুরু বুক কাপে,কারো হাতে লাঠি দেখলেই মাথা ঘুরায়, চাপাতি জিনিস টাকে বড্ড ভয়,কখন কসাইখানা ছেড়ে আমার কাধে নেমে আসে.... বাজারে ব্যাগ নিয়ে যাই না...কারণ ওটা ভরে বাজার করার সামর্থ আমার নেই...যখন কোন বিপদে পড়ি...উপদেশের অভাব হয়না...সাহায্য করার জন্য কাউকে পাইনা...ইজ্জতের ভয় ভিক্ষাও করতে পারিনা... কোন অফিসে গেলে সবাই আমার কাছে ঘুষ চায়, আমার কাছে কেউ এলে আমি ও হাত বাড়াই... সবাই তখন নীতিবান হতে বলে... লজ্জায় কানগুলো লাল হয়ে উঠে... নিজেকে খুব ছোট মনে হয়... সংখ্যালঘু মনে হয়... শখ করে মহসিন মার্কেট থেকে কেনা ফুলতোলা পাঞ্জাবীটা পরি না... পাছে আবার বিশ্বজিৎ না হয়ে যাই... কোথাও গেলে নিজ পেশার পরিচয়টা দিইনা... লোকে আবার কসাই বলে গালি দেয়...লোকে বলে সরকার আমাকে মানুষ বানানর জন্য নাকি কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে...হবে হয়ত... দেশের অন্য সবাই নিজেদের টাকায়ে মানুষ হয়েছে...নিজেকে তখন সংখ্যালঘু মনে হয়... রাত দশটা বাজলেই মনের ভিতর অজানা একটা ভয় দাপিয়ে বেড়ায়...কর্মস্থল থেকে নিরাপদে বাসায় যেতে পারব ত ? কেউ দরজায় নক করলে...মনে হয় অপর পাশে ফয়সাল দাঁড়িয়ে আছে......দরজা খুললেই উন্মত্ত কোন এক শরীর আমার উপর ঝাপিয়ে পড়বে... ব্যর্থ হয়ে গলা টিপে মারবে...... পরের দিন মতিউররা কাগজে কোন এক রসালো খবর বানিয়ে ছেপে দিবে,আরো অপ্রতিরুধ্য অন্য এক ফয়সাল,টিভির টকশোতে বসে আমার চরিত্র নিয়ে মিষ্টি মিষ্টি আলোচনা চালিয়ে যাবে......শুনেছি,পাশের দেশে নাকি রাজপথে চলন্ত বাসের মধ্যে প্যারামেডিক ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে জনগণ......কারাগারের ক্ষুব্ধ কয়েদিরা রাম সিং,মুকেশকে পিটিয়েছেন...... আমিও অনেক আশা নিয়ে রাজপথে চলন্ত বাসের মধ্যে চোরা চোখে আশেপাশে তাকাই...নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করি......এই সমাজ আমার...এই মাটি আমার... এরাই আমাকে নিরাপদে রাখবে... ছোটবেলায় শীতকাল এলেই বাবাকে এড়িয়ে চলতাম, আর মোটা মোটা কাপড় পরতাম কারণ একটাই...শীতকালের মারে ব্যথা বেশি লাগে।সেই অভ্যাসটা এখনো রয়ে গেছে, শীতকাল এলে মোটা মোটা কাপড় পড়ি আর অসুস্থ মানুষ এলে মেধা-মননের সব টুকু নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ি তাকে সুস্থ করে তোলার আশায়। কখনো-সখনো পারি...আর না পারলে মোটা পোশাক তো আছেই...খুব বেশি সমস্যা হয়না... চুয়াডাঙ্গা সদরের বেচারা মশিউর রহমান সেদিন হয়ত মোটা পোশাক পরে ছিলেননা, থাকলে ,এখন আইসিউতে ভর্তি হতে হত না...ক’দিন আগে পেপারে দেখলাম, দু জনকে ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে আহত করে পুলিশে সোর্পদ... আঁতকে উঠি... জনগন যদি ভুলে যায় ডাকাত আর চিকিৎসকের পার্থক্য...তাহলে সুখী নীলগঞ্জের ইচ্ছেবাড়ি গোছাব কাদের নিয়ে? মৃত মধু মণ্ডল এর আত্মীয়রা বিচার নিজ হাতে তুলে নিয়ে মশিউরকে যেভাবে বেধড়ক পেটালেন...তাদের কাছে প্রশ্ন... মজাম্মেল,সালমান,ফালু, যারা লক্ষ মানুষকে পথে বসিয়ে নিজেরা আরাম কেদারায় গুমাচ্ছেন তাদেরকে তো কিছু করলেন না... নিজেকে যতই সংখ্যালঘু বলি না কেন ... আশা ছাড়িনা ...জানি এই মাটি, এই মানুষ, এরাই আমাকে রক্ষা করবে...কারন,আমি এদেরই সন্তান... বস্তির আধুনিক-পরিমার্জিত রুপ বর্তমানের মিরপুর থেকে পুরানো ঢাকায় অফিস করতে সকাল সাড়ে সাতটায় ৩৬ নম্বরের লাইনে দাঁড়ানো দিয়ে আমার দিন শুরু হয়। সংসারের সবচেয়ে কম আয়ের পার্সন হওয়ার দায় মেটাতেই হয়ত কারেন্ট -গ্যাস-ওয়াসা বিল নামের ফরমায়েশগুলো আমিই লাইনে দাড়িয়ে জমা দিয়ে থাকি। দুপুর তিন টা থেকে বিকেল পাঁচটা ,দু- ঘন্টা বাসে বসে থাকার বোকামি শেষে শাহবাগ থেকে হেটে কাওরান বাজারের কাছে এসে দেখলাম হাজারো মানুষ মনোযোগ দিয়ে বক্তৃতা শুনছে... দেশ সেবার দায়িত্ব এককভাবে কাধে থাকায় রাজনীতির খবরাখবর খুব একটা রাখতে পারিনা... এই সুযোগে পুরো বক্তৃতাটা শুনলাম... মন টা খারাপ হয়ে গেল...ক্ষমতাসীন দল নাকি সাপের থেকেও খারাপ...দেশের সকল বিখ্যাত লোকদের মামলা -জেল দেয়া হচ্ছে ...হাজার-হাজার কোটি টাকা নাকি সবাই হাতিয়ে নিচ্ছে... দেশ টাকে অন্য কোন দেশের কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে...দেশে আজকাল এত কিছু হচ্ছে? ভাবতে ভাবতে কখন বাসায় এসে পড়েছি...টের পাইনি। রাতে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখলাম। খাবার টেবিলের প্লেটে প্লেটে হাজার টাকার নোট থরে থরে সাজিয়ে রাখা;সবাই গোগ্রাসে সেই কাগুজে টাকাগুলো গিলছে...আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে যারা খাচ্ছে তাদের চেহারাগুলো দেখতে সব একই রকমের। হঠাৎ মাথার পিছনে থাপ্পড় দিয়ে কে যেন বললঃ কীরে খাচ্ছিস না যে.. চুপ করে শুধু খাওয়া দেখলে হবে? পরের দিন যথারীতি ঘুম ভাংগল এবং দিন কাটল একই রুটিন মেনে। অফিস শেষে একই পথে ফিরতে গিয়ে আবারো দু-ঘন্টা ট্রাফিক বিরতি... এবার আর বসে না থেকে একটু এগিয়ে দেখলাম গতকালের মত আজও হাজারো মানুষ মনোযোগ দিয়ে বক্তৃতা শুনছে... আয়োজন সাজসজ্জা একই রকমের কিন্তু বক্তা ভিন্ন । কৌতূহলবশত আজও পুরো বক্তৃতাটা মন দিয়ে শুনলাম...আবারো মন টা খারাপ হয়ে গেল... বিরোধীরা নাকি সাপের ঝাপি মাথায় নিয়ে চলে... দেশের উন্নয়নে তারা বাধা দিচ্ছে... যুদ্ধ অপরাধীদের বাচানর জন্য নাকি ওরা মানুষ পুড়িয়ে মারছে... বিদেশ গিয়ে বিদেশীদের পা চেটে বেড়াচ্ছে..... মাথা ঘুরাচ্ছে...এক্ষুণি হয়ত বমি হবে... ছিঃ ছিঃ ...বিরোধী দলের এত অধঃপতন... বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা... ঘুম আসছেনা... সংখ্যালঘু হয়ে থাকার অনেক সুবিধা...নাহ...আজ রাতে কোনোমতেই স্বপ্ন টপ্ন দেখা যাবে না... ক্রমশঃ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.