আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেলসন ম্যান্ডেলা

দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ তাকে আদর করে ডাকতেন 'মাদিবা'। নেলসন ম্যান্ডেলা বা মাদিবার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার মাভেজো ইউনিয়নে। আর তিনিই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর আগে তিনি অংশ নেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে।

আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিজওয়ের নেতা হিসেবে সক্রিয় অংশগ্রহণের দায়ে ১৯৬২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার তাকে গ্রেফতার করে। সক্রিয় আন্দোলন-অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ম্যান্ডেলাকে। তরুণ ম্যান্ডেলা দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী ছিলেন। এর পরও বর্ণবাদের সঙ্গে আপস করেননি তিনি। বন্দী জীবনের অধিকাংশ সময়ই তিনি ছিলেন রোবেন দ্বীপে।

অবশেষে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত হন তিনি। এর পরও তার বর্ণবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে গেছেন।

তিনি তার দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। শ্বেতাঙ্গদের কাছ থেকে সহ্য করেছেন নির্যাতন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে সেই শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নীতি গ্রহণ না করার জন্য ম্যান্ডেলা প্রশংসিত হন। বিশ্বব্যাপী একজন অসাধারণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ম্যান্ডেলা নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যরকম উচ্চতায়।

শান্তির সপক্ষে কাজ করা এবং আফ্রিকার নবজাগরণে ভূমিকা রাখার জন্য গত চার দশকে ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৯৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারও রয়েছে। ম্যান্ডেলার বাবা গাদলা হেনরি মপাকানইসা গ্রাম্য মোড়ল ছিলেন। ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরাগভাজন হওয়ার পর তারা হেনরিকে পদচ্যুত করে। তিনি তখন তার পরিবারসহ কুনু গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।

ম্যান্ডেলার বাবার মৃত্যুর পর দালিন্দ্যেবো ম্যান্ডেলাকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। সেখানেই আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠেন তিনি। আর নেতৃত্বের গুণটি পারিবারিকভাবেই তার মধ্যে প্রবেশ করে। ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ৭১ বছর বয়সে রোবেন আইল্যান্ড কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান ম্যান্ডেলা।

শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার পর ১৯৯৪ সালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ম্যান্ডেলা। দেশটির তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পর প্রচারে নামেন মরণব্যাধি এইচআইভি/এইডসের বিরুদ্ধে, যা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছিল আফ্রিকার দেশগুলোতে।

২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করা হয়। ৮৫ বছর বয়সে ২০০৪ সালে তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক সব কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাবেন জানিয়ে সে সময় তিনি বলেছিলেন, 'আমাকে ডেক না। আমি তোমাদের ডাকব। ' ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান বিশ্বের এই কিংবদন্তি নেতা।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।