আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন তৃণমূল নেতার উপলব্ধি..



কি করবো ? বুকে হতাশা। এক বুক হতাশা নিয়ে বিগত প্রায় ২/৩ মাস ধরে ছটফট করছি। হতাশার জন্য সাংগঠনিক কর্মকান্ডতো দূরের কথা, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত কোন কাজেও মন বসে না। মনমেজাজ সবসময় খিটখিটে থাকে। স্ত্রী সন্তানের ভালো কথাও ভালো লাগেনা।

অযথা তাদের গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নির্জন স্থানে একাকি বসে সিগারেট টানি, আর ভাবি, কি করলাম এতদিন? কত ত্যাগ স্বীকার করলাম, আল্লাহ-রাসুলের পরই সংগঠনের নেতাদের সম্মান দিলাম, তাদের কথামত জীবন বাজি রেখে সয়দাবাদ ট্রেনের বগিতে আগুন দিলাম, পাচিলায় সবজিবাহী ট্রাকে পেট্রোল বোমা মারলাম, কি লাভ হলো? নেতারা এখন আর এলাকায় আসেন না। হতাশা আর অনুশোচনা ছাড়া আর কি পেলাম? লেখাপড়া যা করেছিলাম তাতে রাজনীতি না করে সাধারণভাবে চললেও সংসার চালানোর খরচের অভাব হত না। মানসিক দুশ্চিন্তাতো পরের কথা।

প্রিয় পাঠক, আর একটু খোলাশা করে বলি, আমি বিএনপির একজন তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী। আমার নামটা নাই বা বললাম।

আমার পরিচয়টা হচ্ছে, বর্তমানে আমি ট্রেন ও বাসে অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলার ফেরারি আসামী, বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার সদানন্দপুর গ্রামে। আমি সিরাজগঞ্জ সদর থানাধীন সয়দাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির মধ্যম সারির নেতা। পেশা ছিল ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ সদর থানাধীন কড্ডার মোড়ে যানবাহন থেকে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা আদায় করা। আদায়কৃত টাকার কিছু অংশ কমিশন হিসেবে নিজে পেতাম, আর বাকী অংশ বস ও স্যারদের নিকট পাঠাতাম। তবে গত প্রায় ৫ বছর যাবৎ আমি আর ঐ পেশায় নেই।

বিএনপি ক্ষমতা হারাবার পর আমার ঐ কাজও অন্যের হাতে চলে গেছে। গত ৫ বছর সঞ্চিত টাকা, সম্পদ বিক্রি ও ধার-দেনা করে চলছি। নেতারাও কিছু কিছু দিতেন। তবে বিগত ২/৩ মাস যাবৎ আর তাও পাই না। পাবই বা কিভাবে, নেতারা এখন আর এলাকাতেই আসেন না।



যাক, সে সব কথা। অনেক আশা ছিল। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিবে, আবার ক্ষমতায় আসবে। আমিও আবার আমার আগের পেশা ফিরে পাব। কড্ডার মোড়ে আবার দাপটের সাথে কাজ করব।

টাকা রোজগার করব। ধার-দেনা পরিশোধ করব। আবার সংসারে সুখ আসবে। আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাও প্রত্যাহার হবে। আর পালিয়ে বেড়াতে হবেনা।

স্ত্রী সন্তানদের সাথে নিয়ে বাড়িতেই রাত কাটাবো। কিন্তু কিছুই হলো না। নেতারা বলছেন, “তোদের আর কি বলব, শুধুমাত্র নেত্রীর জেদ, অহংকার আর একগুয়েমীর জন্য আমরাও মন্ত্রী এমপি হতে পারলাম না’’। সে দুঃখেই হয়ত নেতারা ২/৩ মাস থেকে আর এলাকায় আসছেন না। শুনেছি ঢাকায় সুখেই আছেন তারা।

রাজনীতি আর করবেন কিনা, সে বিষয়েও নাকি চিন্তাভাবনা করছেন। তাদের তো আর টাকার অভাব নেই। মামলার জন্য আমার মতো তাদের পালিয়েও বেড়াতে হয় না। মহাবিপদ হচ্ছে আমাদের মতো তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। অভাব অনটনের মধ্যে মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

কি খাব? স্ত্রী সন্তানরা কিভাবে আছে, তাদের কি খাওয়াব? মামলার খরচ কিভাবে জোগাবো? জামিন পাওয়ার টাকা কোথা থেকে পাবো? কোন কিছুরই কূল কিনারা পাচ্ছি না। বড় নেতা ও আমাদের মত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের যে অবস্থা, তাতে করে দল আবার গুছিয়ে উঠে ৫ বছর পরে ক্ষমতায় যেতে পারবে কিনা, এর মধ্যে দলীয় নেত্রীর বয়স বাড়ার জন্য দূর্বল হয়ে পড়বে, ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ভাইয়ারও জেল/ফাঁসি হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থায় দলও ভেঙ্গে যেতে পারে । কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। চারদিকে মহাবিপদ ছাড়া আর কিছুই দেখছি না।

আর কিছু বলার বা লেখার মত মানসিক অবস্থাও আমার নেই। এরই নাম রাজনীতি, এরই নাম অর্থনীতি এবং সংসারনীতি, আর আমি হলাম তৃণমূল নেতা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.