আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফাগুনের কবি ফররুখ আহমদ

একদিন সব শুন্য হবে

ফাল্গুনে শুরু হয় গুনগুনানি
ভোমরাটা গায় গান ঘুমভাঙানি
একঝাক পাখি এসে ঐকতানে
গান গায় এক সাথে ভোর
বিহানে...

ছোটবেলায় পড়া সেই ফাগুনের ছড়ার কবি ফররুখ আহমদ । ইসলামী রেঁনেসার কবি হিসেবেই তিনি পরিচিত । কখনো তিনি ঝিরিঝিরি মাতাল হাওয়ায় নিশিবকের মত ভেসে বেড়ান প্রকৃতির রুপে ...
গেয়ে উঠেন ..

বিষটি এল কাশ বনে
জাগল সাড়া ঘাস বনে,
বকের সারি কোথা রে
লুকিয়ে গেল বাঁশ বনে।
নদীতে নাই খেয়া যে,
ডাকল দূরে দেয়া যে,
কোন সে বনের আড়ালে
ফুটল আবার কেয়া যে।
গাঁয়ের নামটি হাটখোলা,
বিষটি বাদল দেয় দোলা,
রাখাল ছেলে মেঘ দেখে,
যায় দাঁড়িয়ে পথ-ভোলা।


মেঘের আঁধার মন টানে,
যায় সে ছুটে কোন খানে,
আউশ ধানের মাঠ ছেড়ে
আমন ধানের দেশ পানে।

আবার কখনো ডেকে ডেকে যান ঘুমন্ত জাতির কান্ডারীদের..

রাত পোহাবার কত
দেরি পাঞ্জেরি?
এখনো তোমার আসমান
ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলাল
এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড়
টানি ভুলে;
অসীম
কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।
রাত পোহাবার কত
দেরি পাঞ্জেরি?
দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষে
কোন দরিয়ার
কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি
এসে?
এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর
বা’ব
তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের
তুফান-শ্রান্ত খা’ব
অস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায়
জীবনের জয়ভেরী।
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড়
টানি ভুলে;
সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি।
রাত পোহাবার কত
দেরি পাঞ্জেরি?

কবি ফররুখ আহমদ খুব
সহজ সরল জীবনযাপন করতেন।


তাঁর পোশাক পরিচ্ছদের মধ্যে ছিল
মধ্যে দুটো পায়জামা,
দুটো পাঞ্জাবি, একটি গেঞ্জি,
একটি শেরওয়ানি, এক
জোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল
ইত্যাদি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত
ধার্মিক। তিনি সব সময় পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজ আদায় করতেন। ইচ্ছাকৃত
ভাবে কখনো নামাজ
কাযা করেননি। নিজের
অবস্থানে শক্ত
থাকা স্পষ্টভাষী ব্যক্তিত্ববান
ফররুখকে সহ্য
করতে হয়েছে তদানীন্তন মুজিব
সরকারের অত্যাচারের স্টীম
রোলার।


মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ফররুখের
চাকরী কেড়ে নেয়া হয়।
বিনা চিকিৎসায় মারা যায়
ফররুখের মেয়ে। বিষয়টি নিয়ে আহমদ
ছফার একটি হৃদয়স্পর্শী প্রবন্ধ আছে।
তৎকালীন গণকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত
হয়েছিল এটি।
মুজিব সরকারের
কোপানলে পড়ে ফররুখের শেষ জীবন
কাটে আর্থিক দৈন্যতা ও
নানা নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে।



কাব্যগ্রন্থ

সাত সাগরের মাঝি
(ডিসেম্বর, ১৯৪৪)
সিরাজাম
মুনীরা (সেপ্টেম্বর, ১৯৫২)
নৌফেল ও হাতেম (জুন,
১৯৬১)
মুহূর্তের কবিতা (সেপ্টেম্বর,
১৯৬৩)
ধোলাই কাব্য (জানুয়ারি,
১৯৬৩)
হাতেম তায়ী (মে, ১৯৬৬)
নতুন লেখা (১৯৬৯)
কাফেলা (অগাস্ট, ১৯৮০)
হাবিদা মরুর
কাহিনী (সেপ্টেম্বর, ১৯৮১)
সিন্দাবাদ (অক্টোবর, ১৯৮৩)
দিলরুবা (ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪)

শিশুতোষ গ্রন্থ

পাখির বাসা (১৯৬৫)
হরফের ছড়া (১৯৭০)
চাঁদের আসর (১৯৭০)
ছড়ার আসর (১৯৭০)
ফুলের জলসা (ডিসেম্বর,
১৯৮৫)

পুরস্কার

১৯৬০ সালে ফররুখ আহমদ
বাংলা একাডেমী পুরস্কার
লাভ করেন । কবি ফররুখ আহমদ
১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক
"প্রাইড অব পারফরমেন্স" এবং
১৯৬৬ সালে পান
আদমজী পুরস্কার ও
ইউনেস্কো পুরস্কার । ১৯৭৭ ও
১৯৮০ সালে তাঁকে যথাক্রমে মরণোত্তর একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।