আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে

কিন্তু এর সুফল অর্থনীতিতে খুব একটা পড়বে না- বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং জায়েদ বখত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে  (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

২০১২-১৩ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল দ্বিগুণেরও বেশি; ৩৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

এই সময়ে ঘাটতি কমেছে ৫৮ দশমিক ২৮ শতাংশ।

পণ্য আমদানিতে ব্যয়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেশি আসায় ঘাটতি কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমদানি ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি রপ্তানি আয় বেড়ে যদি বাণিজ্য ঘাটতি কমত- তাহলে দেশের অর্থনীতির জন্য ভাল হত। কিন্তু আমদানি ব্যয় কমার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমায় তার সুফল অর্থনীতিতে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। ”

আরেক অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমদানি কমায় শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যার প্রভাব পড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। ইতিমধ্যেই তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে বাজেটে ঘোষিত ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যে অর্জিত হবে না- সেটা এখন নিশ্চিত। ”

ফরাসউদ্দিন বলেন, “সাধারণত: কোন দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কম থাকা ভাল। কিন্তু আমাদের মত আমদানি নির্ভর দেশে হঠাৎ করে আমদানি কমা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।

“এ কথা ঠিক যে, বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমেছে। কিন্তু একইসঙ্গে শিল্প খাতের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য আমদানিও কমেছে।

“মূলত: দেশে বিনিয়োগ থমকে থাকার কারণে এ সব খাতে আমদানি বাড়ছে না। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বেশ কিছু দিন ধরে দেশে যে অস্থিরতা চলছিল, তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যার প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। ”

এ পরিস্থিতিতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য ফরাসউদ্দিনের পরামর্শ, বিনিয়োগ সহায়ক আমদানি আকর্ষণ করতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

আর মনোযোগ দিতে হবে দেশি-বিদেশি উভয় বিনিয়োগের দিকেই।

জায়েদ বখত বলেন, “আপাতত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো বলেই মনে হচ্ছে। সংশয় হচ্ছে এ অবস্থা কতোদিন থাকবে। যদি দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকে তাহলে অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে হয়তো আমদানি বাড়বে। তখন হয়তো এ অবস্থা আর থাকবে না।

জায়েদ বখত বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি বেশ ভাল। ছয় মাসের হিসাবে (ডিসেম্বর পর্যন্ত) ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রেমিটেন্সের গতি কিছুটা ধীর হলেও জানুয়ারি থেকে তা বাড়তে শুরু করেছে।

“সে কারণেই বলছি, বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও আমাদের অর্থনীতির জন্য স্বস্তি বয়ে আনছে না। যদি স্বাভাবিক আমদানির সঙ্গে রপ্তানিও বাড়ত তাহলে ভালো বলা যেত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেন ভারসাম্য সারণীর তথ্য পর‌্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানি খাতে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) মোট এক হাজার ৬০৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয় হয়েছে।

আর পণ্য রপ্তানি থেকে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) আয় হয়েছে এক হাজার ৪৫১ কোটি ১০ লাখ ডলার। এই হিসাবে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সামগ্রিক ঘাটতি হয়েছে ১৫৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মোট এক হাজার ৬০৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল।

এর বিপরীতে একই সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ এক হাজার ২৩৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করেছি।

ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

২০১২-১৩ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭০১ কোটি ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৯৩২ কোটি ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে বরাবরই পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল।

প্রায় প্রতি বছরই এই ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছিল।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৮৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৪৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়।

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার কারণে খাদ্য পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৩ কোটি ডলারে।

তবে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তা ৪৭১ কোটি ডলারে নেমে আসে।

২০০৯-১০ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫১৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এরপর থেকে প্রতি বছরই ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছিল।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।