আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্পদের পাহাড় প্রার্থীদের

এমপি-মন্ত্রীদের চেয়ে পিছিয়ে নেই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্র্থীরা। তাদেরও রয়েছে অঢেল ধনসম্পদ। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নামে-বেনামে রয়েছে সম্পদের পাহাড়। অনেকেরই নিজের চেয়ে স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামেই বেশি সম্পদ রয়েছে। বেশির ভাগ চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিনিয়োগ রয়েছে শেয়ারবাজারে।

প্রথম ধাপের ৯৮টি উপজেলা নির্বাচনে ৪৩২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে শতাধিকই কোটিপতি। এমনকি অধিকাংশ প্রার্থীর ঢাকায় ফ্ল্যাট-বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে। প্রথম ধাপে তফসিল ঘোষিত ৯৮ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা ৪৩২, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫১৩ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩২৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামা থেকে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট ফকির মো. মাজহারুল ইসলাম তার হলফনামায় সম্পদের বিবরণীতে নিজের নামের চেয়ে স্ত্রীর নামেই সম্পদ বেশি দেখিয়েছেন। তার কাছে নগদ রয়েছে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৬৯৩ টাকা।

কিন্তু স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার ১৪ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ২ লাখ টাকা। এ ছাড়া নিজের নামে বন্ড ও অন্যান্য খাতে কোনো অর্থ না থাকলেও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫১ হাজার ৯২২ টাকা। নিজের নামে স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ২০ ভরি থাকলেও স্ত্রীর নামে রয়েছে ৫০ ভরি। নিজের নামে আধাপাকা দুটি বাড়ি থাকলেও ধানমন্ডিতে স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে।

এ উপজেলার অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান ও তার স্ত্রীর নামেও রয়েছে অঢেল সম্পদ। তার নামে কৃষি জমি রয়েছে প্রায় ৫ একর। এ ছাড়া ২.৫ কাঠা, ৪.৫ কাঠা ও ৩০ শতাংশ অকৃষি জমিও দেখানো হয়েছে। তার মূল্য প্রায় ৩২ লাখ টাকা। আর তার স্ত্রীর নামে ২.৫ কাঠা, ৬ কাঠা, ৩৫ শতাংশসহ আরও কিছু অকৃষি জমি দেখানো হয়েছে।

তার মূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া নিজের নামে একটি টিনশেড ঘর, ৯৬০ বর্গফুটের অফিস স্পেস, দুটি অ্যাপার্টমেন্ট (মূল্য ৩৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫২০ টাকা), দোকান রয়েছে একটি। অন্যদিকে তার স্ত্রীর নামে ১২ লাখ টাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। তার নিজের নামে প্রায় ১১ লাখ টাকা নগদ রয়েছে। স্ত্রীর নামে নগদ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৩৫ লাখ ও স্ত্রীর নামে ১১ লাখ টাকা। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা অন্যান্য আমানতের পরিমাণ নিজের নামে ৪১ লাখ ৫০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ৯০ লাখ টাকা রয়েছে। এ উপজেলার অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুর রহমান ইসির হলফনামায় পেশায় নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এ খাত থেকে তার বার্ষিক আয় প্রায় ৩১ লাখ টাকা। নগদ টাকা রয়েছে নিজের নামে ৫০ হাজার।

বন্ড ও অন্যান্য খাতে রয়েছে নিজের নামে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা। আর স্ত্রীর নামে রয়েছে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। মূল্যবান ধাতু নিজের নামে রয়েছে ২০ ভরি আর স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মজিবুর রহমান লেবু হলফনামায় নিজেকে ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তার বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকা।

নগদ টাকা রয়েছে ১৩ লাখ। ২০ তোলা স্বর্ণ রয়েছে। এ ছাড়া অকৃষি জমি রয়েছে ১০৯ শতাংশ; যার মূল্য সাড়ে ৮ লাখ টাকা।

অন্য প্রার্থী মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন হলফনামায় পেশার বিবরণীতে পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। তার নিজের নামে নগদ টাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ।

স্ত্রীর নামে প্রায় ১০ লাখ টাকা। শেয়ারে নিজের নামে রয়েছে প্রায় ৪৭ লাখ টাকা। আর স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৫ লাখ টাকা। নিজের নামে রয়েছে একটি প্রাইভেট কার, তবে স্ত্রীর নামে রয়েছে জিপ গাড়ি একটি। নিজের নামে স্বর্ণ রয়েছে ৫ ভরি আর স্ত্রীর নামে ২৫ ভরি।

নিজের নামে কৃষি জমি রয়েছে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা পরিমাণের। স্ত্রীর নামে অকৃষি জমি রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকার। নিজের নামে আবাসিক ভবন বা দালান রয়েছে ১৬ লাখ টাকার আর স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার। এ ছাড়া বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট নিজের নামে না থাকলেও স্ত্রীর নামে রয়েছে, যার মূল্য ৫৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। অন্যদিকে যৌথ মালিকানায়ও তার বেশকিছু সম্পদ রয়েছে।

অন্য প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ইসির হলফনামায় পেশায় শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৮০ টাকা। নগদ টাকা নিজের নামে ৪০ হাজার, স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার। স্বর্ণ নিজের নামে ২০ ভরি। স্ত্রীর নামে ১০ ভরি।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম ইসির হলফনামায় নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করেছেন। তার নিজের কাছে নগদ টাকা আছে ৫ লাখ। ট্রাক রয়েছে চারটি, যার মূল্য ৮৩ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৫ ভরি স্বর্ণ। অন্য প্রার্থী মোশাররফ হুসাইনের কাছে নগদ টাকা আছে প্রায় ৩ লাখ।

তিনি নিজেকে ঠিকাদার হিসেবে উল্লেখ করলেও আয়ের উৎসে উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাতার আয় ছাড়া অন্য কোনো আয় দেখাননি। অন্য প্রার্থী এ এফ এম আমিনুল হকের বার্ষিক আয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তার নামে নগদ টাকা রয়েছে ১১ লাখ আর স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৯ লাখ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে নিজের ২ লাখ ও স্ত্রীর ২ লাখ টাকা। নিজের নামে প্রায় ৫৩ লাখ টাকার চার ও পাঁচ তলাবিশিষ্ট দুটি ক্লিনিক ভবন রয়েছে।

এ উপজেলার অন্য প্রার্থী জাকির হোসেন সরকারের নামে নগদ টাকা রয়েছে প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ। স্ত্রীর নামে প্রায় ২৪ লাখ। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে রয়েছে ৯ কোটি ২২ লাখ টাকার বেশি আর স্ত্রীর নামে ৫০ লাখ। নিজের নামে প্রায় ৮ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। স্ত্রীর নামেও কোটি টাকার বেশি শেয়ারে বিনিয়োগ আছে।

নিজের নামে প্রায় ৪৮ লাখ টাকার আবাসিক ভবন বা দালান রয়েছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে নির্বাচন হবে ৯৮ উপজেলায়। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৩২ জন। এর মধ্যে শতাধিক উপজেলা প্রার্থী চেয়ারম্যান কোটিপতি। বাকিদেরও সম্পদ কম নেই।

বলা চলে বিগত দশম সংসদ নির্বাচনে ইসিতে দেওয়া এমপি-মন্ত্রীদের যেসব হলফনামা প্রকাশিত হয়েছে তাতে তাদের সম্পদের একটি বিবরণী জনগণের কাছে প্রকাশ পেয়েছে। দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও এমপি-মন্ত্রীদের চেয়ে কম সম্পদের অধিকারী নন।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.