আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন রাজিয়া খানম।

এএম আমির এইচ

কোথায় যাব। একাত্তরে দেশমাতৃকার টানে অকাতরে জীবন বিসর্জন দেয়াই কি ছিল স্বামীর অপরাধ? মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এভাবে একজন শহীদ পরিবারকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে- এর চেয়ে আর দুর্ভাগ্য কী হতে পারে? ভূমিদস্যুদের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার শক্তি কী প্রশাসনের নেই?
এভাবেই বলছিলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলী আহম্মদ খানের স্ত্রী রাজিয়া খানম।

অনেক লড়াই করে কলাপাড়া সদরের ৭ শতাংশ জমিতে একটি ছোট্টঘর করে বসবাস করছেন তিনি। তাঁর ওপর নজর পড়েছে পৌর মেয়রসহ কয়েকজন প্রভাবশালীর। ছলে-বলে-কৌশলে তাঁকে ভিটেছাড়া করার অপচেষ্টার মুখে অসহায় হয়ে পড়েছেন রাজিয়া খানম।

তাঁকে বার বার হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে -
"যত বড় শহীদের পরিবার হোন, কোন লাভ হবে না। এ ভিটে ছাড়তে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ থাকলেও কাজ হবে না। প্রয়োজনে নদীর চরে গিয়ে থাকেন। এখানে থাকা যাবে না।

"

উপর্যুপরি হুমকির মুখে এখন অসহায় এই পরিবার দিশেহারা। স্থানীয় সচেতন সমাজ তাঁর পক্ষে অবস্থান নিলেও প্রভাবশালী মহল তাঁকে অবিলম্বে ভিটে ছাড়ার জন্য চাপ দিয়ে দিচ্ছে।

একাত্তর সালে স্বামী আলী আহম্মদ খান ছিলেন আনসার সদস্য। নববিবাহিত জীবন তখন রাজিয়া খানমের। মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন আলী আহম্মদ ।

রাজিয়া খানমকে একা ঘরে ফেলেই তিনি চলে যান রণাঙ্গনে। যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক মাস পর ২৬ এপ্রিল পটুয়াখালী শহরের পাকবাহিনীর সঙ্গে হয় সম্মুখ সমর। সে যুদ্ধে আলী আহম্মদ খান বেশ বীরত্বের সঙ্গেই লড়াই করছিলেন। এ সময় পাকসেনাদের গুলিতে শাহাদত বরণ করতে হয় তাঁকে। সে খবর যখন আসে তখন রাজিয়া খানমের মাথায় যেন আসমান ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম।

তিনি তখন এক মাসের অন্তঃসত্ত্বা। জীবনের এমন এক কঠিন সময়ে তিনি এক কন্যা সন্তানের মা হন।
তার পরের ইতিহাস আরও অমানবিক।

মুক্তিযুদ্ধের পর দীর্ঘদিন চরম দুর্দশায় জীবন কাটাতে হয়েছে রাজিয়াকে। গ্রামের বাড়ি আরামগঞ্জে।

কোনক্রমে খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে। এ অবস্থায় কিছুটা আশার আলো দেখা দেয় ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসায়। এমন চরম অসহায়ত্ব দেখে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম তাঁকে ১৯৯৯ সালে কলাপাড়ায় একখন্ড -খাস জমিতে মাথা গোজার ঠাঁই করে দেন। কলাপাড়া সদরের খেপুপাড়া মৌজার ৬৪৩ ও ৬৪৪ দাগের মোট ৩ একর ৭৯ শতাংশ খাস জমি থেকে মাত্র ৭ শতাংশ জমি দেয়া হয় রাজিয়া খানমকে। এ জমিটুকু স্থায়ীভাবে তাঁকে বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করলে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

এর পর স্থানীয় প্রশাসনের ভূমি ও অন্যান্য বিভাগ জমিটুকু রাজিয়া খানমের নামে বন্দোবস্ত দেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। তিনি সেই থেকে আজ পর্যন্ত এক কন্যা নিয়ে ওই জমিতে একটা ঘর করে কোনক্রমে জীবন কাটাচ্ছেন। তবে তিনি পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন থেকে জমিটি বন্দোবস্ত নেয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এমনকি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুল্লাহ রানা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এবিএম তাজুল ইসলামের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও তা কার্যকর করা হয়নি। উল্টো স্থানীয় পৌর মেয়র রাকিবুল আহসান ও ক্যাডার বাহিনী রাাজিয়া খানমকে ভিটে ছাড়ার হুমকি দিতে থাকেন।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও মন্ত্রী-এমপির সুপারিশ থাকার কথা উল্লেখ করলে তাঁকে আরও কঠোর হুমকি দেয়া হয়। কারও কোন নির্দেশ কাজে আসবে না বলে শাসানো হয় তাঁকে। এমনকি শহর ছেড়ে নদীর চরে গিয়ে ঘর করার জন্য চাপ দেয়া হয় রাজিয়াকে। এ অবস্থায় রাজিয়া খানম পটুয়াখালী যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি দেওয়ানী মোকদ্দমা করেন। যার নং-৬/২০১৪।

কিন্তু তার পরও তাঁর স্বস্তি নেই। ক্যাডাররা তাঁকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ওই খাস জমির ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এক মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানকে। পাশের কিছুটা দখল করে দোতলা ঘর করেছে জসীম নামের এক প্রভাবশালী। এ ছাড়া ওই জমিরই ৭৫ শতাংশ জমি দেয়া হয়েছে কলাপাড়া বেসরকারী মহিলা কলেজকে।

রাজিয়ার প্রশ্ন- একই দাগ থেকে দুইজনকে অনায়াসে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর এত বছর ধরে ভোগদখল করার পরও কেন তাঁকে উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। তিনি এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন কার কাছে বিচার চাইবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.