আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিডিয়া যেভাবে সংখ্যালঘুকে নীরব করে দেয়

আমি যে নতুন, তাই কিছু ভুল হয়ে যায় নিরবতার কুন্ডলী তত্ত্ব তত্ত্বটির প্রবক্তা নিরবতার কুন্ডলী তত্ত্বটির প্রবক্তা এলিজাবেথ নোয়েল নিউম্যান জার্মানির বার্লিনে তিনি একজন রাজনৈতিক গবেষকও। তিনি ২৫ মার্চ, ২০১০ সালে মারা যান। নিরবতার কুন্ডলী কোন বিষয়ে যখন সংখ্যাগরিষ্ট মত দেয় তখন সমাজের সংখ্যালগিষ্ঠরা তাদের মত গ্রহণযোগ্য হবে না বা সমাজ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হবে এ কারণে তারা চুপ বা নীরব হয়ে যায়। নিউম্যানের তত্ত্বানুযায়ী সংখ্যালগিষ্ট যখন চুপ বা নীরব হয়ে যায়, গণমাধ্যম সেই নীরবতাকে আরও গতিশীল করে অর্থাৎ গণমাধ্যম গণমাধ্যম সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে তুলে ধরে। ফলে সংখ্যালগিষ্ট আরও নীরব হয়ে যায়।

মিডিয়া যেভাবে ইস্যুগুলো তুলে ধরে এতে মনে করে সংখ্যাগরিষ্ট যেহেতু বিষয়টি নিয়ে এভাবে মত দিচ্ছে, এখানে আমাদের সংখ্যালগিষ্টের মত গ্রহণ করা হবে না তখন তারা চুপ হয়ে যায়। শুধু সাধারণ জনগনই নয়, মিডিয়া সংঘবদ্ধ হলে সুশীল সমাজও চুপ হয়ে যায়। যেমন- যখন মিডিয়া আবুল হোসেন বা মশিউর রহমানের পদত্যাগকে ইস্যু করে তখন এ নিয়ে সমাজের সুশীল সমাজও তাদের মুখ চালান কিন্তুযখন মিডিয়া বাণিজ্যিক কারণে গ্রামীণ ফোনের কর্মী ছাটাই কিংবা মোবাইল অপারেটরদের অধিক চার্জ নিয়ে কথা বলে না তখন সুশীল সমাজের কোন ভূমিকাও লক্ষ্য করা যায় না। সর্বোপরী নিরবতার কুন্ডলী তত্ত্বের সংজ্ঞায়নে বলা যায় যে, মিডিয়া যখন সমাজের এলিটদের স্বার্থে সংখ্যাগরিষ্টের মত হিসেবে কোন ইস্যুকে উত্থাপন করে, তখন সংখ্যালগিষ্ট যেভাবে নীরব হয়ে যায় তাই-ই নিরবতার কুন্ডলী। উদাহরণ  যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে গণমাধ্যম যখন সংখ্যাগরিষ্টের মত তুলে ধরছে, তখন সমাজে কিছু রক্ষণশীল ও ধর্মভীরু সংখ্যালগিষ্টরা এটা মানতে নারাজ হলেও মুখ খুলে বলছে না।

অর্থাৎ গণমাধ্যম তাদের নীরব করে দিচ্ছে।  নির্বাচনের সময় কোন নীতি বা আইন প্রনয়ণের সময়ে সংখ্যাগরিষ্ট এর বিরোধিতা করলেও নিজেদের মত গ্রহণ হবে না বুঝতে পেরে নীরব হয়ে যায়। এছাড়াও গ্রাম্য সালিশ বা নির্বাচনের সময়, টাউন হলগুলোর আলোচনা অনুষ্ঠানে সংখ্যাগরিষ্টরা সর্বদা নীরব থাকে। মডেলটির ভিত্তি বা নিরবতার কারণ 1/ মতামতের গতিবিধি মানুষের সাধারণত ৫টি ইন্দ্রিয় থাকে। তবে নিউম্যান মনে করেন, এ ৫টি ছাড়াও মানুষের আরও একটি ইন্দ্রিয় আছে তা হল- “quasi statistical organ” যার দ্বারা মানুষ সহজেই বুঝতে পারে নির্দিষ্ট বিষয়ে তার মতামতটি গ্রহণযোগ্য হবে কি হবে না।

অর্থাৎ মানুষ যখন এই ইন্দ্রিয়টির সাহায্যে ভবিষ্যৎদ্বানী করে বুঝতে পারে তার মতটি সংখ্যাগরিষ্টের মতামত তখন সে ঐ বিষয়ে মত প্রদান হতে বিরত থাকে, এভাবেই সে নীরব হয়ে যায়। 2/ বিচ্ছিন্নতার ভয় সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বা নির্বাসন, একাকীত্ব বা বন্দিত্ব সবচেয়ে নিষ্ঠুর শাস্তি। নিউম্যান মনে করেন, কোন বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্টের বিরোধিতা করে মত দিলে সমাজ তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। সংখ্যাগরিষ্টের অসন্তুষ্টি আর ফলস্বরূপ যে বিচ্ছিন্ন থাকার ভয় সংখ্যাগরিষ্টকে নীরব করে দেয়। সমালোচনা  সমাজে যারা কট্টরপন্থী থাকেন তারা সংখ্যালগিষ্ট হলেও মত প্রকাশে নীরব থাকেন না।

যেমন: হুমায়ুন আজাদ বা তসলিমা নাসরিন সংখ্যাগরিষ্টের বিরুদ্ধে গিয়ে নারী বা ধর্মের ব্যাখা দিয়েছেন।  নিউম্যান যখন তত্ত্বটি দিয়েছিলেন তখন আমেরিকায় ছিল স্বৈরতান্ত্রিক সরকার অন্যদিকে বর্তমানে বিশ্বের বেশীরভাগ দেশে ও আমাদের দেশেও গণতান্ত্রিক সরকার থাকায় এর প্রভাব একরকম হবে না।  মিডিয়াও সর্বদা সংখ্যাগরিষ্টের মতকে তুলে ধরে না, তারা সমাজের প্রভাবশালী, দাতাগোষ্ঠী বা মালিকানার স¦ার্থানুযায়ী মতকে উপস্থাপন করে।  বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও তত্ত্বটি পুরোপুরি সত্য না। কেননা বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোর ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ থাকে বিধায় এরা অনেক ইস্যুতেই সংখ্যাগরিষ্টের মতকে তুলে ধরতে পারে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.