আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্যময় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল

বাংলার জনগন বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। যার নামের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে রহস্য। যে রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে বছরের পর বছর তৈরি হয়েছে নতুন রহস্যের। কিন্তু রহস্য থেকে গেছে রহস্যই। রহস্য থেকে জন্ম নিয়েছে নতুন রূপকথা।

যে রূপকথার শুরুটা রোমাঞ্চকর, শেষটা করুণ। এ রূপকথার মধ্যে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, রয়েছে মানুষের অলীক বিশ্বাস। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি অঞ্চলের নাম। জাহাজ এবং বিমান চলাচলের একটি রুট এটি। কিন্তু ভয়ানক কথা এই যে, বিমান কিংবা নৌযানগুলো এ অঞ্চল দিয়ে চলাচলের সময় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়, কিংবা বলা যায় হয়েছে।

যে যানগুলো নিখোঁজ হয়েছে, অনেক চেষ্টার পরেও সেসব নৌজাহাজ বা বিমানের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। উপরন্তু যেসব বিমান ও জলযান তাদের খোঁজে বের হয়েছে, তাদের অধিকাংশই আর ফেরেনি। কিন্তু কেন? কী আছে সেখানে? কেনই বা একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে এ স্থানে? সেগুলো কি আদৌ কেনো দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কিছু? বন্ধুরা, চলো আজ এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের অপর নাম ডেভিলস ট্রায়াঙ্গল। বাংলায় যাকে বলা হয় শয়তানের ত্রিকোণ।

বিশ্বের মানচিত্রে এর অবস্থানটি লক্ষ্য করলে দেখবে এর উত্তর কোণে বারমুডা, দক্ষিণ কোণে পুয়ের্তো রিকোর সান জুয়ান এবং পশ্চিম কোণে ফ্লোরিডার মিয়ামির অবস্থান। এ তিনটি স্থানের মধ্যবর্তী অংশকে বলা হয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। আর এ অঞ্চলেই সংঘটিত হয়েছে অস্বাভাবিক বেশকিছু ঘটনা। কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাক। ৪ মার্চ, ১৯১৮।

লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জি. ডব্লিউ. ওউরলের নেতৃত্বে ৩০৯ জন নাবিকসহ ইউএসএস সাইক্লোপস নামক যুদ্ধ জাহাজ বারবাডোজ দ্বীপ থেকে যাত্রা করে। কিন্তু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে প্রবেশের কিছু সময় পর থেকে এ পর্যন্ত সে জাহাজ বা তার একজন নাবিকেরও আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সাইক্লোপসের মতো আরো দুটি মার্কিন জাহাজ নিখোঁজ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ১৯১৯ সালে ক্যারোল এ. ডিএরিং নামের পাঁচ মাস্তুলের পালের জাহাজটি একটি বালুচরে আটকে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়, কিন্তু পাওয়া যায়নি তার একজন যাত্রীকেও। ১৯৪৫ সালের পাঁচ ডিসেম্বর ফ্লাইট-১৯ নামক একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান নিখোঁজ হয় এ অঞ্চলেই।

বিমানটির খোঁজে বের হয় অন্য একটি উড়োজাহাজ। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেটিও আর ফিরে আসেনি। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি আজোর থেকে বারমুডা যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় ব্রিটিশ সাউথ এয়াওয়েজের যাত্রীবাহী বিমান জি-এএইচএন পি স্টার টাইগার। পরের বছর একই মাসে বারমুডা থেকে কিংস্টোন যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় একই কোম্পানির আরেকটি যাত্রীবাহী বিমান স্টার এরিয়েল। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে পুয়ের্তো রিকো থেকে মিয়ামি যাওয়ার পথে ৩২ জন যাত্রীসহ নিখোঁজ হয় ডগলাস ডিসি-৩ নামক বিমান।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে কী এমন আছে, যা এতগুলো দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে? কথিত আছে, এ মহাসাগরের তলদেশে ডুবে আছে আরেকটি মহাদেশ। আর সে মহাদেশেরই কোনো বিশেষ শক্তি গ্রাস করছে এ জাহাজ ও বিমানগুলোকে। অন্য একটি মতে, এ অঞ্চলে একটি বিশেষ চৌম্বকীয় শক্তির প্রভাব রয়েছে, যা দিক নির্ণায়ক যন্ত্রে ত্রুটির সৃষ্টি করে নাবিককে বিভ্রান্ত করতে পারে। তবে বিশেজ্ঞরা বলছেন, কোনো অলৌকিক শক্তির প্রভাবে নয়, বেশ কিছু কারণেই এ সব দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারা কারণ হিসেবে বলেছেন, উত্তর আটলান্টিকের একটি প্রচণ্ড শক্তিশালী স্রোতের নাম গল্ফ স্রোত।

এর গতি প্রতি সেকেন্ডে ২.৫ মিটার। যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য কোনো প্রয়োজনে বিমানকে ওয়াটার ল্যান্ডিং (জরুরি প্রয়োজনে উড়োজাহাজকে কোনো জলরাশির ওপর অবতরণ করানো) করালে এ তীব্র স্রোতের আঘাতে বিমানটি প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একইভাবে স্রোতের সঙ্গে থাকা ভাসমান বস্তুর আঘাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিমানটি। দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে এ অঞ্চলে সৃষ্ট প্রচণ্ড শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাতাসের গতিবেগ এতো দ্রুত বেড়ে যায় যে, কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ারও সুযোগ থাকে না।

১৯৮৬ সালে এমন একটি দুর্ঘটনায় ডুবে গিয়েছিলো প্রাইড অব বাল্টিমোর নামক নৌজাহাজ। বেঁচে যাওয়া একজন নাবিকের মতে, বাতাস হঠাৎ করে ঘন্টায় ২০ মাইল থেকে প্রায় ৯০ মাইলে উন্নীত হয়, যা সামলানো জাহাজটির পক্ষে একেবারেই অসম্ভব ছিল। এমন বৈজ্ঞানিক বা কাল্পনিক বিশ্বাস কোনোটিই পৌঁছাতে পারেনি রহস্যের শেষ সীমান্তে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বিশ্বের কাছে এমনই এক রহস্য, যার কোনো শেষ নেই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।