আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকার যত অত্যাচারী বিদায় ততই নির্মম

বিএনপির ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণাদানকারী দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের দমননীতির সমালোচনা করে বলেছেন, যে সরকার যত অত্যাচারী হয়, তার বিদায়ও তত নির্মম হয়। ভোটারবিহীন নির্বাচনের এই 'দখলদার' সরকারকেও ক্ষমতা থেকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। যা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। তার আগে দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে একত্রে বসে আন্দোলনের নতুন কৌশল গ্রহণ করে মাঠে নামতে হবে।

সাংগঠনিক সব দুর্বলতা কাটিয়ে আন্দোলনমুখী কমিটি দিতে হবে। আর সংশ্লিষ্ট সব নেতাকে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে রাজনৈতিকসুলভ আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল গুলশানের নিজ বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাদেক হোসেন খোকা এ কথা বলেন। তিনিও চান দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো যতদ্রুত সম্ভব পুনর্গঠনের মাধ্যমে উপযোগী সাংগঠনিক গতি লাভ করুক। এ ব্যাপারে তিনি দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনাও করেছেন বলে জানিয়েছেন।

সাম্প্রতিক আন্দোলনে দলের ব্যর্থতা-সফলতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলনে সাফল্য বা ব্যর্থতার বিষয়টি আপেক্ষিক। কোনো রকমের ভোট ছাড়াই ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত ঘোষণার পর গত ৫ জানুয়ারি সরকার যে ১৪৭টি আসনে প্রহসনের নির্বাচন করেছে তা দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষই প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা চায় গ্রহণযোগ্য নতুন জাতীয় নির্বাচন। এই যে অধিকাংশ মানুষই ভোটকেন্দ্রে যায়নি সেটিও আন্দোলনের সফলতা। তবে অনেকে আশা করেছিলেন যে, রাজধানী ঢাকায় রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটে যাবে।

কিন্তু সেই পরিস্থিতি ছিল না। কারণ এই সরকার গণতন্ত্রের লেবাসে চরম স্বেচ্ছাচারী ভূমিকা পালন করছে। অতীতে ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধেও আমরা আন্দোলন করেছি। হরতাল ডেকে রাজপথে মিছিল নিয়ে বের হতে পেরেছি। কিন্তু এ সরকারের শাসনামলে তাও সম্ভব নয়।

নেতা-কর্মীদের রাজপথে নামামাত্রই সরাসরি গুলি করে দিচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ অনেক সিনিয়র নেতা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের বর্বরোচিত হামলা ও আড়াই ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের কথা কে না জানে? দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে পর্যন্তও ময়লার গাড়ি ভাঙচুরের মতো হাস্যকর মামলা দিয়ে বেশ কয়েকবার জেলে পুরা হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, পাকিস্তানি সরকারের চেয়েও অনেক বেশি অত্যাচারী ও অসহিষ্ণু ক্ষমতাসীন দল। আর ঢাকা শহরটাকে তো একটা মিনি ক্যান্টনমেন্ট বানিয়ে রেখেছে এই সরকার।

পুলিশ, র্যাব, আর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দিয়ে একেবারে ঘেরাও করে রেখেছে। দুইটা ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ওয়ারি থানাতেই শুধু পুলিশের উপ-পরিদর্শকের সংখ্যা হলো ৩৯ জন। আর অন্যান্য পদে তো আছেই। একজন কর্মী একটি কাশি দিলেও সেটি গুনে রাখা হয়। তারপরও হাজার হাজার নেতা-কর্মী রয়েছেন কারাগারে।

ঢাকাসহ সারা দেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের অপহরণ, গুম ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিশ্ব ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের উদ্বেগ প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় যে কোনো গণতান্ত্রিক দলের জন্য রাজপথের আন্দোলন ছিল নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিকূল।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ভুলত্রুটি যে একেবারেই নেই, তা নয়। মহানগরীর প্রায় অর্ধেক থানাতেই কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব হয়নি।

তারও কারণ রয়েছে। এমন অনেক প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন- তারা চান সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে তাদের নির্বাচনী এলাকায় নিজ নিজ অনুগত লোকদের দিয়ে থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করতে। ফলে সেসব এলাকায় কমিটি পুনর্গঠনের কাজটিও যেমন সম্ভব হয় না, তেমনি দোটানায় পড়া নেতা-কর্মীদের হতাশার কারণে আন্দোলনেও তেমন রেজাল্ট আসে না। সেজন্যে সবাইকে ব্যক্তিকরণ বাদ দিয়ে দল ও গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে অধীনস্থ সব নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে রাজনৈতিকসুলভ আচরণ করতে হবে।

কমিটি গঠন কিংবা মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র থেকে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। সর্বোপরি আন্দোলন আর নির্বাচনকে কিছুতেই এক করে ফেলা যাবে না। আন্দোলনকেই একমাত্র এজেন্ডা হিসেবে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। কারণ আন্দোলনে সফলতা আসলে নির্বাচনের ফসল এমনিতেই ঘরে আসবে। যেমন এসেছিল ১৯৯১ সালে।

সে নির্বাচনে অনেক আসনে বিএনপির প্রার্থী পর্যন্তও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু নির্বাচনের ফসল ঠিকই ঘরে এসেছে। এমনকি আজকের প্রধানমন্ত্রী ও শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা নিজেও পর্যন্ত পুরনো ঢাকার একটি আসনে পরাজিত হয়েছিলেন। কারণ সে সময় বিএনপির 'পলিটিকস'-টা সঠিক ছিল।

দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে।

সিনিয়র রাজনীতিকদের এতটুকু সম্মান পর্যন্তও দিচ্ছে না। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে খোকা বলেন, এটা সরকারের মহা অন্যায় হয়েছে। একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় তাকে বাসায় পুলিশ নিয়ে গিয়ে দুদক কর্মকর্তারা ধরে নিয়ে এসেছে। তার মতো একজন সিনিয়র ও প্রজ্ঞাবান নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠককে গায়ের পোশাক পরিবর্তনের জন্য এক মিনিট সময় পর্যন্তও দেওয়া হয়নি। এটা চরম অমানবিক ও গর্হিত কাজ।

তিনি বলেন, এসব করে তেমন কোনো লাভ হয় না কোনো সরকারেরই।

কবে নাগাদ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন প্রশ্নের জবাবে খোকা বলেন, দিন-তারিখ ঠিক করে কখনো আন্দোলন হয় না। তাছাড়া বিএনপি কোনো বিপ্লবী পার্টি নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক পার্টি। তবে শিক্ষাঙ্গনগুলো থেকেই প্রথমে এ আন্দোলনকে আরও গতিশীল করে তুলতে হবে। তারপর সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমে জনসম্পৃক্ততা ঘটাতে হবে।

আর সরকারের পতন কখন হবে তা বলা যায় না। এ প্রসঙ্গে তিনি আইয়ুব খান সরকারের উদাহরণ টেনে বলেন, ১৯৫৮ সালে ক্ষমতায় আসার দশ বছর পর ১৯৬৮ সালে সারা দেশে সব বিরোধী দল যখন সরকারবিরোধী আন্দোলন করছিল, আইয়ুব খান তখন তার সরকারের উন্নয়নের দশ বছর পূর্তি পালন করছিলেন। তখনো তিনি জানতেন না যে, তার পরের বছরই তার সরকারের পতন হবে এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে সমূলে উৎখাত হবে তারা। কাজেই এই সরকারও কখন যাবে কেউ বলতে পারে না। তবে ক্ষমতা থেকে তাদের যেতেই হবে সেটি দিবালোকের মতোই অমোঘ সত্য।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.