আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্প: স্বপ্নীল প‍্রেমের অকাল মৃতু‍্য




ভার্সিটির দিন গুলো ভালই কাটছিল,পুলকের|স
কালে ঘুম থেকে উঠে ক্লাশে যাওয়া,ক্লাশ
শেষে ঝুপড়িতে বন্ধুদের
সাথে আড্ডা দেওয়া|কখনো বা বন্ধুদের
সাথে বেসুরে গলায় গান গাওয়া|গানের
ফাঁকে ফাঁকে আলী ভাইয়ের দোকানের
চা এ ,চুমুক না দিলে যেন গানই জমতো না|পুলক,
লেখাপড়া পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন
সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে প্রথম থেকেই
জড়িত ছিল|পুলকের
মনে যে কখনো প্রেম,ভালবাসা নাড়া দেয়নি|
এমনটা নয়|পুলক অবশ্য
আগে কখনো প্রেমে পড়েনি|
আসলে প্রেমে পড়া হয়ে ওঠেনি...।
পুলকের ছোট বোন তিশা|এবার চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীহ্মা দিতে এসেছে|
তিশা, পুলকের আদরের একমাত্র বোন
হওয়ায়,মাঝে মাঝেই ওর সাথে মনের
কথাগুলো শেয়ার করে|তিশা ক্যাম্পাসে নতুন
আশায় ।ওকে ক্যাম্পাস
টা ঘুরেফিরে দেখাচ্ছে|কথার ফাঁকে তিশা ওর
ভাইকে বললো|
ভাইয়া,তোমার জন্য একটা মেয়ে দেখেছি|
আমার জন্য মেয়ে দেখেছিস মানে?
বুঝলাম না|
আচ্ছা,বলছি তোমাকে|
তিশা বলা শুরু করলো|
আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীহ্মা দেওয়ার
সময়|একটা মেয়েকে দেখেছি|ওর নাম লিলি|
ও আর আমি একরুমেই ছিলাম|অনেক ভাল
বন্ধুত্ব হয়েছে, আমার সাথে|
মেয়েটি অনেক ভাল,ভদ্র,নম্র এবং অনেক
সুন্দরী|তুমি যেমনটা চাও|মেয়েটার ফোন
নাম্বারও আমার কাছে আছে|
পুলক এতহ্মন ধরে,ওর বোনের কথা শুনছিল|
ওর বোনকে বললো,মেয়েটার বিজ্ঞাপন
দেওয়া বন্ধ কর,তোর ক্যাসেটাও এবার অফ
কর|
শোন,ভার্সিটিতে তিন বছর ধরে আছি|এখানেই
কোন প্রেম ভালবাসা হল না|আর
এটা তো অদেখা মেয়ে|ওসব আমার
দ্বারা হবে না|আমি একা আছি,খুব ভাল আছি|
কয়কদিনের মধ্যে তিশার পরীহ্মা শেষ
গেলে|ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়|
ভার্সিটিতে ভর্তি পরীহ্মা শেষ হয়ে গেল|
পুলক আবার ক্লাশ পরীহ্মা নয়ে ব্যাস্ত
হয়ে যায়|
কয়েকমাস পর,হঠাৎ করে একদিন মেয়েটির
কথা মনে পড়ে |তিশাকে ফোন
দিয়ে মেয়েটির কথা জিজ্ঞাসা করে, পুলক|
পরে তিশার কাছ থেকে মেয়েটির নাম্বারটাও
নেয়|এতে ওর বোন কিছুটা খুশি হয়|
পরে পুলককে বলে, ভাইয়া ,লিলির কোন
নিজস্ব ফোন নেই|এটা ওর আম্মুর নাম্বার|ও
মাঝে মাঝে এ ফোনটা ব্যাবহার করে|পুলক,ও
আচ্ছা বলে রেখে দেয়|
কিছুদিন পর,তিশা একদিন লিলির
সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেয়|পুলক এর
আগে কখনো ,এভাবে কোন মেয়ের
সাথে কথা বলেনি|তাই প্রথম দিন
কথা বলতে কেমন জানি, একটু ইতস্ত বোধ
করছিল|পরিচয় পর্বটুকু সেরেই সেদিনের মত
ফোন রেখে দেয়, পুলক |
কয়েকমাস পর আবার তাদের মধ্যে কথা হয়|
মেয়েটিও তেমন কথা বলতে পারছিল না|
কেমন জানি লাজুক লাজুক ভাব মেয়েটির|
এমনভাবে কথা বলছিল মেয়েটি,যেন এমন
মহোনীয় কন্ঠ,পুলক এর
আগে কখনো শোনেনি|মেয়েটির
সাথে যতই কথা বলছিল,ততই তার ভাল লাগছিল|
একসময় পুলক মেয়েটিকে অনুরোধ
করে,তার সাথে কথা বলার জন্য|কিন্তু,মেয়
েটি রাজি হচ্ছিল না|মেয়েটি বার বার
বলছিল,সে কথা বলতে পারবে না|কারন তার
কোন নিজস্ব ফোন নেই|এটা তার আম্মুর
ফোন|পুলকের অনুরোধ,মেয়েটি একসময়
ফেলতে পারে না|মেয়েটি রাজি হয়ে যায়|
তবে এটাও বলে,
সে দিনে কথা বলতে পারবে না|
তবে রাতে কথা বলার জন্য চেষ্টা করবে|এই
বলে দুজনে সেদিনের মত ফোন
রেখে দেয়|
মাঝে মাঝে লিলির সাথে পুলকের কথা হয়|পুলক
বুঝতে পারে,মেয়েটির প্রতি সে মানসিক
ভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে|এদিকে লিলির ও
একই অবস্থা|আগে মাঝে মাঝে লিলির
সাথে কথা হতো|এখন প্রায়
প্রতিরাতেই,কথা হয়|একদিন
কথা না বলতে পারলে দুজনরই মন খারাপ থাকে|
তাদের মাঝে কথা না হলও,কেউ
কাউকে একমুহ্নর্ত ভুলে থাকতে পারে না|
কথা বলতে বলতে,তারা কখন দুজন
দুজনকে ভালবেসে ফেলে|
এটা তারে কেউই বুঝতে পারে না|
এভাবেই চলছিল ভালবাসার রঙিন দিনগুলি|
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে,
ভর্তি পরীহ্মা দেওয়ার সময়|আবার তিশার
সাথে লিলির দেখা হয়|তখন লিলি তার কিছু
ছবি তিশাকে দেয়|তিশাও তার ভাইয়ার কিছু
ছবি লিলিকে দেয়|পুলক যেদিন লিলির
ছবি দেখে|সেদিন সে আরও অবাক হয়ে যায়|
লিলি এত সুন্দর হতে পারে,এটা তার কল্পনাও ছিল
না|এদিকে লিলিরও একই অবস্থা|ছবি পাওয়ার পর
থেকে,লিলি সারাদিন ছবি গুলো চোখের
সামনে নিয়ে থাকে|আর
ভাবে কবে দেখা হবে তাদের| আর গুন গূন
করে গান গাইতো| অবশ্য লিলি খুব ভাল গান
গাইতে পারতো|লিলির কন্ঠ ছিল মিষ্টি প্রকৃতির|
যেটা পুলকের সবচেয়ে বেশী ভাল
লাগতো|লিলির কন্ঠে একটু গান শোনার
জন্য,পুলক সবসময় ব্যাকুল হয়ে থাকতো|আর
লিলিও গান শোনাতে খুব ভালবাসতো|পুলক
কখনো গান
শুনতে চাইলে,লিলি কখনো না করতো না|
লিলি ছিল, কিছুটা সহজ সরল প্রকৃতির মেয়ে|
বাইরের জগৎ সর্ম্পকে তার ধারনা একটু কম ছিল|
বাবা মার আদরের সন্তান হওয়ায়,সবার কাছে প্রিয়
পাত্র ছিল| সে সহজ সরল ভাবে সবাইকে বিশ্বাস
করতো|বাড়িতে ভাইবোনদের সাথে সবসময়
দুষ্টিমীতে মেতে থাকতো |লিলির
মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকতো|তার সহজ
সরলতা যে, তা জীবনে একদিন ঘন অন্ধকার
হয়ে দেখা দেবে|
লিলি কখনো এটা বুঝতে পারেনি|কোন একদিন
কথার ফাঁকে লিলি তার ভালবাসার কথা, সহজসরল
ভাবে তার আম্মুকে বলে দেয়|এটাও
বলে যে, ছেলেটার
সাথে এখনো দেখা হয়নি|তবে ছেলেটার
ছবি তার কাছে আছে|পুলক সর্ম্পকে,তার
মা সবকিছু জেনে নেয়
এবং ছবি গুলো দেখে|
লিলিকে বলে, ছেলেটাকে অপছন্দ হওয়ার
তেমন কিছু নেই|তবে তোমাকে এত দুর
বিয়ে দিব
না এবং ছেলেটা এখনো লেখাপড়া করছে|
আমরা এতদিন অপেহ্মা করতে পারবো না|
তোমার জন্য পাত্র
দেখা হচ্ছে,ছেলে পছন্দ হলে,
তোমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হবে|এ
কথা বলে ওর আম্মু চলে যায়|
সেদিন রাতে কথা বলার সময় লিলি অনেক
কান্নাকাটি করে|লিলি সবকিছু
পুলককে খুলে বলে ।পুলক
তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে এবং বলে,
তার আব্বু আম্মুকে বোঝানোর জন্য|
পুলকের কথামত,লিলি সবকিছু তার
আম্মুকে বোঝায়|কিন্তু তাতে কোন লাভ
হয়না|
হঠাৎ করে,লিলিকে না জানিয়ে, ওর বাবা মা একদিন
পাত্র পহ্ম নিয়ে আসে|লিলি তাদের সামনে যায়
না|পরিস্থিতি যখন আয়ত্বের
বাইরে চলে যাচ্ছিল|তখন ওর আব্বু
গিয়ে,ওকে বোঝায়। মা, দেখলেই
তো বিয়ে হয়না|লোকজন চলে আসছে|
তুমি আমদের সম্মানটুকু রহ্মা কর|
সেদিন লিলি ওর বাবার মুখের
দিকে চেয়ে,পাত্র পহ্মের সামনে যায়|পাত্র
পহ্ম লিলিকে পছন্দ করে ফেলে|
পাত্র ব্যাংকে চাকুরী করে, তাই লিলির
বাবা মা পাত্রকে হাতছাড়া করতে চায় নি|
বিয়েটা মোটামুটি,সেদিন তারা ঠিক
করে ফেলে|
সেদিন রাতে,লিলির সাথে পুলকের কথা হয়|সব
ঘটনা পুলককে খুলে বলে এবং কান্না করতে থাকে |
লিলি, পুলককে কিছু একটা করার জন্য বলে|পুলক
লিলিকে বোঝানোর চেষ্টা করে|কিছু
একটা করবে বলে, আশ্বাস দিয়ে,লিলিকে শান্ত
করে|
পুলকের এখনো লেখাপড়া শেষ হয়নি|
সে কি করবে,কিছু ভেবে পায় না|সব
ঘটনা পুলকের ছোটবোন
তিশাকে খুলে বলে|তিশা তার বাবা মার
সাথে যোগাযোগ করে|ছেলের মুখের
দিকে চেয়ে, পুলকের বাবা মা। লিলির বাবা মার
সাথে কথা বলতে রাজি হয়ে যায়|এদিকে তিশাও
লিলির আব্বু আম্মুর সাথে যোগাযোগ করে|
কিন্তু,লিলির বাবা মা এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চায় না|
তারা তাদের
মেয়েকে যেখানে খুশি,সেখানে বিয়ে দেবে|
এ বিষয় কথা বলতে তিশাকে নিষেধ
করে দেয়|
লিলিকে দেখার এক সপ্তাহের মধ্যে,সেই
পাত্রের সাথে লিলির বিয়ে হয়ে যায়|এর
মধ্যে পুলকের সাথে লিলির আর
যোগাযোগ হয়নি।
বিয়ের আগের রাতে শেষবারের
মত,পুলকের সাথে লিলির বাবা মার কথা হয়|
পুলক,লিলির বাবা মাকে বোঝানোর
চেষ্টা করে|কিন্তু তাতে কোন লাভ হয় না|
পুলক কথা বলে যতটুকু বুঝতে পারে|লিলির
বাবা মা, বিয়েতে লিলির কোন মতামত নেওয়ার
চেষ্টা করে নি|লিলি আপ্রান চেষ্টা করেও তার
বাবা মাকে বোঝাতে পারনি| লিলি সমাজ
সংসার,পরিবার,বাবা মা র হেরে যায় |
আসলে আমাদের দেশের
মেয়েরা,ইচ্ছে থাকলেও সবকিছু
করতে পারে না|আজও
তারা বন্দী শিকলে বাধা,চার দেয়ালের মাঝে|
যেখানে তাদের ভালবাসার কোন মুল্য হয় না|
লিলির বিয়ে হয়ে যায়|হয়তো,লিলি হাসি মুখই
থাকবে|
কিন্তু,তার হ্নদয়, প্রথম যে মানুষটিকে ভাল
বেসেছিল|
তাকে কি সে কখনো ভুলতে পারবে?
পুলকও হয়তো,তাকে ভুলতে পারবে না|
কিন্তু, জীবনতো কারও জন্য
থেমে থাকে না|
শুধু,এই দুটি মানুষের হ্নদয়ের মাঝে, সারাজীবন
নিভু নিভু করে যে দহন হবে।
সেটা হয়তো,কি কেউ
কখনো বুঝতে পারবে না| কেউ বোঝার
চেষ্টাও করবে না . . . . .

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।