আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কাঁদছে বিম্পি

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল আবার অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। পারস্পরিক বিরোধ ও অবিশ্বাস এখন দলটির মধ্যে প্রকট। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা দ্বিধাবিভক্ত। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করছেন, তারেক রহমানের উচিত এখনই বিএনপি চেয়ারপারসনের দায়িত্ব গ্রহণ করা। আবার অনেকের মতে খালেদা জিয়া এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের পদ ছেড়ে দিলে বিএনপির সর্বনাশ ছাড়া কিছুই হবে না।

তারেক রহমানও চাচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে। এর বিপরীতে খালেদা জিয়া এখনই চেয়ারপারসনের পদ ছাড়তে রাজি নন। ফলে প্রকাশ্যে না হলেও আড়ালে-আবডালে এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভাইস চেয়ারপারসনের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপির মহানগর কমিটি, কেন্দ্রীয় যুবদল কমিটি ও ছাত্রদল কমিটির পরিবর্তন এখনই চাচ্ছেন তারেক রহমান। এর বিপরীতে খালেদা জিয়া চাচ্ছেন, উপজেলা নির্বাচনের পর এ পরিবর্তন।

এ অবস্থায় বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
গত দেড় বছরে কয়েকবার জাতীয় কাউন্সিলের সময় পরিবর্তন করে চলমান জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তা করার কথা বলা হলেও আপাতত দলীয় কাউন্সিল হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দলে কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা, সিনিয়র নেতারা একে একে গ্রেপ্তার হয়ে যাওয়া ও উপজেলা নির্বাচনের শেষ দিকে এসে বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে না পেরে বিএনপি হাইকমান্ড হতাশ হয়ে পড়ছে। আর এ কারণেই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল আবার অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
দলে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতার কোন্দলের কারণে ১২ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা।

আর তার এ ঘোষণার ফলে খালেদা জিয়ার নতুন কমিটি ঘোষণার পরও ঢাকা মহানগর কমিটির দায়িত্ব নিতে কেউ রাজি হচ্ছে না। এ কারণে খালেদা জিয়া এক মাসের মধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের কথা বললেও তা আর হয়ে ওঠেনি। শিগগিরই এ কমিটি হবে বলেও বিএনপির কোনো স্তরের নেতাকর্মীরা বলতে পারছেন না।
জাতীয় কাউন্সিলের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জাঁকজমকপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে হলে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বর্তমানে তার অনুসারীদের নিয়ে দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া এবং সদস্য সচিব আবদুস সালাম, মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল ইসলাম ১৬ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে চলে যাওয়ায় এখন রাজধানীতে জাতীয় কাউন্সিলের মতো একটি কর্মযজ্ঞের সার্বিক প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়ার মতো কোনো যোগ্য নেতাকর্মীকে খুঁজে পাচ্ছে না বিএনপি হাইকমান্ড।


১২ মার্চ সাদেক হোসেন খোকা সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিলে এমনিতেই দলের একটি বড় অংশের মধ্যে হতাশা বিরাজ করে। ১২ মার্চ রাতেই আবার দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গ্রেপ্তার হন। এ কারণে দলের নেতাকর্মীরা আরও হতাশ হন। কিন্তু তারা হতাশ হলেও সিনিয়র নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপি ড. মোশাররফের গ্রেপ্তারের পর জোরালো কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি দিতে পারেনি। আর দলীয় কোন্দলের কারণেই ১৪ মার্চ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে কেউ মাঠে নামেনি।

তাই বিএনপির ডাকা এ কর্মসূচিটি এককথায় ফ্লপ হয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি পালনকালে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলায় জড়িয়ে যান বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা। এ মামলায় জামিনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম ১৬ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিনের আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এ খবর শুনে সারাদেশের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করে।

এ কারণে এই ৩ নেতাকে কারাবন্দি করার প্রতিবাদে বিএনপি সারাদেশে যে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছিল তাও সফল করতে পারেনি দলটি।
১৬ মার্চ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় দফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক কম উপজেলায় বিজয়ের কারণেও বিএনপির
সর্বস্তরে হতাশা নেমে আসে। আগের ২ দফায় আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি অনেক বেশি উপজেলায় বিজয়ী হলেও তৃতীয় দফায় এসে বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ হয়। ৮১টি উপজেলার মধ্যে যেখানে আওয়ামী লীগ ৪০টিতে বিজয়ী হয় সেখানে বিএনপি বিজয়ী হয় ৩০টিতে। এসব কারণে শুধু সাধারণ নেতাকর্মী নয় বিএনপি হাইকমান্ডের মধ্যেও হতাশা ভর করেছে।

আর এসব কারণেই বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল করার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলের ৪র্থ জাতীয় কাউন্সিল করে বিএনপি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে ৩ বছর পর পর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় কাউন্সিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুসারে দেড় বছর আগেই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার সময় পার হয়ে গেছে। তবে বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচন কমিশন থেকে দফায় দফায় সময় চেয়ে নিয়েছে বিএনপি।


প্রথমবারের মতো ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিএনপি। তখন দলের একটি অংশ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে জাতীয় কাউন্সিল করতে খালেদা জিয়ার কাছে প্রস্তাব দেয়। তবে খালেদা জিয়া এ প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে কিছুই বলেননি। তবে দলের কিছু নেতা দলের হাইকমান্ডের কাছে প্রস্তাব দেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসলে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে কাউন্সিল করার ক্ষেত্রে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। এ পরিস্থিতিতে তখন আর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হয়নি।

তবে নির্বাচন কমিশনের চাপে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আরও ২ দফা জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেয় বিএনপি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে করতে পারেনি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর দলের নাজুক অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আবার জাতীয় কাউন্সিলের উদ্যোগ নেয় বিএনপি হাইকমান্ড। এ জন্য সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটি আমেজ সৃষ্টি করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার কৌশল নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ থাকায় তারা এখন আন্দোলনে শরিক হতে নারাজ।

এ অবস্থাটি বুঝতে পেরে উপজেলা নির্বাচনের পর জাতীয় কাউন্সিল করতে আবারও নির্বাচন কমিশন থেকে সময় নেয় দলটি।
এবারের জাতীয় কাউন্সিলের পর পদ-পদবি দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগে থেকেই নেতাদের অতীত কর্মকা- নিয়ে ফাইল ওয়ার্ক করছেন। বিগত দিনে বিএনপির যে সকল কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলনে ঝুঁকি নেননি উপরন্তু পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়িয়েছেন এবারের জাতীয় কাউন্সিলের পর তাদের পদ-পদবির ব্যাপারে দলীয় হাইকমান্ড সতর্ক থাকবেন। সেই সঙ্গে যারা ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন এবং যারা জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন তাদের পুরস্কৃত করার বিষয়টিও দলের উচ্চপর্যায়ের বিবেচনাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যেই দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ বিষয়টি আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া বিএনপির এবারের জাতীয় কাউন্সিলে একজন মহাসচিব নির্বাচন করার কথা রয়েছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার পর ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব রেখে দলের ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই বছর ৬ এপ্রিল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তিনি ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে মির্জা ফখরুল পালিয়ে যান। এ বিষয়টিকে দলের নেতাকর্মীরা ভালো চোখে দেখেননি। তাই এবারের জাতীয় কাউন্সিলে তাকে ভারমুক্ত মহাসচিব করা হবে না অন্য কাউকে এ পদে আনা হবে তা নিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। দেড় দশক পর ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল। এর আগে ১৯৯৩ সালের ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে খোলা জায়গায় তাঁবু টাঙিয়ে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করা হয়।

কাউন্সিল বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. মাহবুবুর রহমান (অব.) বলেন, জাতীয় কাউন্সিল করার বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। এখন উপজেলা নির্বাচন চলছে। উপজেলা নির্বাচনের পর পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে জাতীয় কাউন্সিল করা হবে। তবে সরকার যেভাবে সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করছে এবং যেভাবে উপজেলা নির্বাচনে অনিয়ম করা হচ্ছে তাতে বিএনপি জাতীয় কাউন্সিল করতে পারবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.