আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদেশি বিনিয়োগের খরা কেটেছে!

দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহের গতি বাড়ছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৮০ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে ৯৬ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল, সেখানে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ১৭৩ কোটি ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতির যে হালনাগাদ উপাত্ত প্রস্তুত করেছে, তা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিনিয়োগ প্রবাহের প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এই পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ দুই অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগ শত কোটি ডলারের ওপরে চলে গেছে।

আর এই প্রবণতা বজায় থাকলে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ ২০০ কোটি ডলার অতিক্রম করতে পারে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেন ভারসাম্য সারণির তথ্য থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৮৪ কোটি ডলার।
আবার বিদেশি বিনিয়োগের কাঠামো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে গত পাঁচ বছরে দেশে মোট বিদেশি বিনিয়োগের ৪৫ শতাংশ হলো নতুন পুঁজি। আর যে নতুন পুঁজি এসেছে, তার কিছু বিদ্যমান কোম্পানি এনেছে। তবে বেশির ভাগই নতুন বিনিয়োগ হওয়ার কারণে দেশে এসেছে।

মোট বিনিয়োগের ৪১ শতাংশ হলো দেশে ব্যবসারত বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চলমান আয় ও মুনাফা থেকে পুনর্বিনিয়োগ। আর ১৪ শতাংশ হলো কোম্পানিগুলোর ঋণ।
বিনিয়োগের খাত হিসেবে অগ্রাধিকারে রয়েছে বস্ত্র, ব্যাংকিং ও টেলিযোগাযোগ। যদিও পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো কোনো বছরে এর অবস্থান কিছুটা অদল-বদল হয়েছে। যেমন ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে টেলিযোগাযোগ খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ এলেও পরের দুই বছর তা হয়নি।

তবে গত অর্থবছরে আবার এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। বিপরীতে প্রথম দুই বছরে ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ যে পরিমাণ এসেছে, পরের তিন বছর তা ক্রমাগত বেড়েছে। তবে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগ গত পাঁচ বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ উল্লিখিত তিন খাতের তুলনায় তেমন বাড়েনি। ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরেই ১০ কোটি ডলারের বেশি করে বিনিয়োগ এসেছিল।

আগে-পরের বছরগুলোয় তা আবার বেশ কম ছিল।
যোগাযোগ করা হলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে বিদেশি বিনিয়োগের এই প্রবণতা অবশ্যই ইতিবাচক। এতে মনে হচ্ছে যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। এটা তাৎপর্যপূর্ণ।


আহসান মনসুর আরও বলেন, ‘তবে কোন কোন খাতে ও কোথা থেকে বিনিয়োগ আসছে, তা-ও ভালোভাবে বোঝা দরকার। বিদেশি বিনিয়োগ মূলত কয়েকটি খাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে বলে মনে হয়। আবার এমন জায়গা থেকেও বিনিয়োগ আসছে, যা বেশ বিস্ময়কর। যেমন ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড বা সিশেলস থেকে কারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে, তা একটু খতিয়ে দেখা দরকার। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় যে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের কিছু হয়তো এভাবে ফিরে আসছে।


বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও নীতি-সহায়তা দিচ্ছে। এদিক থেকে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়েও বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। যেমন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অন্যতম অপরিহার্য হলো জমি প্রাপ্তি। জমি ক্রয় ও ইজারা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক শিথিলতা আছে বলে বিনিয়োগ বোর্ড জানিয়েছে। অবশ্য বাস্তবতা পুরোপুরি তা সমর্থন করে না।

জমির অপ্রতুলতা নিয়ে দেশীয় উদ্যোক্তারাই নানামুখী সংকটের অভিযোগ করছেন। গত সপ্তাহেই মেট্রো চেম্বারের এক আলোচনায় দেশের ব্যবসায়ী নেতারা বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তাঁরা এ-ও বলেছেন যে পর্যাপ্ত জমি না পেয়ে আগ্রহী বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাধ্য হয়ে মিয়ানমার বা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
বিনিয়োগ বোর্ড জানাচ্ছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ১৭টি খাতে কর অবকাশ-সুবিধা রয়েছে, যা ২০১৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর। আর্থিক দিক থেকে বা মুনাফা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও বিধিবিধান যথেষ্ট শিথিল।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় সব উন্নত দেশে বাংলাদেশি পণ্য এখন শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা পাচ্ছে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সুবিধা নেই। ৩২টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি রয়েছে। আরও আটটি দেশের সঙ্গে তা করার প্রক্রিয়া চলছে। একইভাবে ২৮টি দেশের সঙ্গে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

আরও ২১টি দেশের সঙ্গে তা সম্পাদনের কাজ চলছে। এই চুক্তি কার্যকর থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীকে যেকোনো একটি দেশে আয়কর দিলেই চলে। বিনিয়োগের খাতও অবারিত। চারটি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। এগুলো হলো: প্রতিরক্ষা, আণবিক শক্তি, সংরক্ষিত বনভূমি এবং টাঁকশাল ও রেল।


তবে কাগজে-কলমে যত অনকূল নীতিই থাকুক না কেন, বাস্তবে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে না পারলে বা কমিয়ে আনতে না পারলে বিদেশি বিনিয়োগের গতি বাড়ানো কঠিন হবে। আর নীতিনির্ধারক থেকে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা সবাই প্রায় একবাক্যে বলছেন, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, রাজনৈতিক অবস্থা ও অস্থিরতা, আমলাতন্ত্র, যথাযথ প্রণোদনার অভাব, তথ্য ঘাটতি, সুশাসনের ঘাটতি বিদেশি বিনিয়োগের বড় অন্তরায় হয়ে আছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে যথেষ্ট লাভবান হন, তা বোঝার জন্য একটি পুরোনো অথচ প্রাসঙ্গিক তথ্য এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৯৯৭-৯৮ থেকে ২০০৬-০৭ অর্থবছর সময়কালে বা ১০ বছরে বাংলাদেশে সাড়ে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এই সময়কালে লভ্যাংশ ও মুনাফা বাবদ বাংলাদেশ থেকে মোট ২৭১ কোটি ৮০ লাখ ডলার নিজ নিজ দেশে পাঠিয়েছেন।

এর বাইরে ব্যবসা গুটিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে আরও তিন কোটি ডলার। অর্থাৎ বলা যেতে পারে যে ১০ বছরে বিদেশি বিনিয়োগের প্রায় ৬৫ শতাংশ ফেরত গেছে। অবশ্যই মুনাফা ও লভ্যাংশ প্রত্যাবাসন পুরোটাই হয়েছে নিয়মমাফিক। কারণ, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মুনাফা প্রত্যাবাসনের পূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া গেলে বোঝা যাবে বর্তমান পরিস্থিতিটা কী।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।