আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আন্দোলনে অনীহা বিএনপির

আন্দোলন ও জাতীয় কাউন্সিল দুটোতেই চরম অনীহা বিএনপির বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতার। তাদের দৃষ্টি শুধু বড় বড় পদ-পদবির দিকে। ৫ জানুয়ারির বর্জনকৃত জাতীয় নির্বাচনের তিন মাস পার হয়ে গেলেও কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি না দেওয়ায় নিরাশ হয়ে পড়ছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। হতাশা তাদের পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। ঢাকাভিত্তিক কেন্দ্রীয় নেতারা যারা ৫ জানুয়ারির আগে ও পরের আন্দোলনে আত্দগোপনে নিরাপদে ছিলেন, পদ-পদবি হারানোর ভয়ে এ মুহূর্তে তারা একেবারেই চাচ্ছেন না দলের কোনো কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হোক।

এমনকি জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকার বিরুদ্ধেও তাদের অবস্থান। কারণ কাউন্সিল কিংবা নির্বাহী কমিটির সভা- যা-ই হোক না কেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সামনেই তুলাধোনার আশঙ্কা করছেন এসব নেতা। নির্ঘাত তৃণমূলের তোপের মুখে পড়বেন তারা। এদিকে ঘরে-বাইরে বাধা-বিপত্তির পরও এবার দলের জাতীয় কাউন্সিলের আয়োজন করতে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। মে-র প্রথমার্ধেই কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে।

দু-চার দিনের মধ্যেই স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে কাউন্সিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। ইতোমধ্যে স্থায়ী কমিটির সব সদস্যকে ঢাকায় অবস্থানের নোটিসও দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ভিত্তিক একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বাধার কারণেই এত দিন আটকে আছে দলের জাতীয় কাউন্সিল। কারণ কাউন্সিল হলেই তছনছ হয়ে যেতে পারে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাদের সাজানো বাগান।

পাশাপাশি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরো 'সেট-আপ'-এরও খোল নলচে পাল্টে যেতে পারে।

এদিকে যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান গুলশান কার্যালয়ের এ সিন্ডিকেটের ওপর দারুণ ক্ষুব্ধ। তিনি বেশ কয়েকবার তাদের সতর্ক করে দেওয়ার পরও কাজ বা সংশোধিত না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিশেষ একজন কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছিলেন। তবে জিয়া পরিবারের বিভিন্ন স্তরের আত্দীয়স্বজনের মাধ্যমে চেয়ারপারসনকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে এ কর্মকর্তা তার পদটি এখনো অাঁকড়ে ধরে আছেন। কিন্তু তার জন্য চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং থেকে শুরু করে দলের কোনো পর্যায়ের নেতাই ঠিকমত কাজকর্ম করতে পারছেন না বলে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে- ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ঠিক আগে আগে রাজধানীর বাইরে দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন চলাকালে কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই ২৯ ডিসেম্বর 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচি দিয়ে পুরো আন্দোলনটি ঝুলিয়ে দেন তিনি। ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচি দলের স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মী কিংবা সমর্থক এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করেন না বলে জানা গেছে। চেয়ারপারসনকে দিয়ে উত্তাল আন্দোলনে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দেওয়ার মতো এমন কর্মসূচি ঘোষণার পেছনে গুলশান কার্যালয়ভিত্তিক কতিপয় নেতা ও কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত অঘোষিত এ সিন্ডিকেটই দায়ী বলে মনে করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তাদের ধারণা, জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলে গুলশান কার্যালয়ের এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিটকে পড়তে পারেন আর তাই কাউন্সিল যাতে না হয় সে জন্য সবরকমের চেষ্টা-তদবিরই করে যাচ্ছে এ সিন্ডিকেট। এ লক্ষ্যে তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন বলে দলের ভেতরে কানাঘুষা রয়েছে।



কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলের এত বড় বিপর্যয় তথা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কঠিন দুঃসময়ে তাদের কোনো খোঁজখবর না রাখা এবং দায়িত্বে অবহেলার কারণে নিশ্চিত তোপের মুখে পড়বেন ঢাকাভিত্তিক কেন্দ্রীয় নেতারা। এসব দিক বিবেচনা করেই তাদেরও অবস্থান জাতীয় কাউন্সিল কিংবা দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার বিপক্ষে। এর ফলে একতরফা জাতীয় নির্বাচন-পরবর্তী দীর্ঘ তিন মাস পার হতে চললেও এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কাউন্সিল দূরের কথা, একটি মূল্যায়ন সভা পর্যন্তও করতে পারেনি বিএনপি। জানা গেছে, সারা দেশে ৪০ হাজারেরও বেশি মামলা দেওয়া হয়েছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে। অসংখ্য নেতা-কর্মী জেলে আছেন, আন্দোলনে নিহত হওয়া ছাড়াও অপহরণ, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

নিখোঁজ রয়েছেন দুই শতাধিক। আর আন্দোলনে হাত-পা কিংবা নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়েছেন অসংখ্য। কিন্তু তাদের স্বজন কিংবা পরিবারের সদস্যদের দেখার কেউ নেই। তবে গত সপ্তাহ থেকে রাজধানী ঢাকায় গুম-হত্যাসহ এ ধরনের ভুক্তভোগী কর্মী-নেতার স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া শুরু করেছেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। তিনি দরিদ্র পরিবারের নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার আশ্বাসও দিচ্ছেন।



একটি সূত্র জানায়, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে যতদ্রুত সম্ভব দলের পুনর্গঠন চাচ্ছেন। কিন্তু চেয়ারপারসন কর্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার পরোক্ষ বাধার কারণেই তা সম্ভব হচ্ছে না। এসব কর্মকর্তার অব্যাহত বাণিজ্যের কারণে শুধু তাদের অনুমোদন ছাড়া দলের সর্বস্তরের যে কোনো নেতা-কর্মীর গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশাধিকার নেই। এর ফলে চেয়ারপারসন কার্যালয় এখন কার্যত নেতা-কর্মী শূন্য হয়ে থাকে। জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে এসে অবশেষে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় কোনোরকমের সাক্ষাৎ ছাড়াই।

আর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি কিংবা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটি, এমনকি স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও পর্যন্ত অনেক সময় দেখা না করেই ফিরে যেতে হয়। অথচ এর চেয়ে অনেক অ-গুরুত্বপূর্ণ লোকজনকেও নানা বিনিময়ের মাধ্যমে চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ারও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, 'কী আর বলব ভাই, এ ধরনের লজ্জার সম্মুখীন আমাদেরও হতে হয়! এ জন্য ম্যাডাম না ডাকলে পারতপক্ষে তার অফিসে পা মাড়াতে চাই না। কিছু দিন আগেও আপনারা দেখেছেন এবং পত্রপত্রিকায়ও ফলাও করে ছাপা হয়েছে যে স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও পর্যন্ত বৈঠকে বসার আগে দোতলায় শরীর তল্লাশি শেষে মোবাইল ফোন রেখে দেওয়া হতো। এই যদি হয় গুলশান অফিসে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অবস্থা, তাহলে নির্বাহী কমিটি কিংবা অন্য পর্যায়ের নেতাদের অবস্থা কী হবে তা বুঝতেই পারছেন।

' তবে একটি বিষয় পরিষ্কার যে চেয়ারপারসনকে ধীরে ধীরে এরা (গুলশান কার্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্যরা) গণবিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন। চেয়ারপারসনের অফিস এখন প্রায় জনশূন্য। বাণিজ্য কিংবা সুযোগ-সুবিধা নেই তো, সেখানে লোকজন বা নেতা-কর্মীদের প্রবেশাধিকার নেই। কতিপয় নেতা-কর্মীর পছন্দের লোকজন ছাড়া বাকি সবারই প্রবেশ নিষিদ্ধ।
- See more at: Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.