আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডায়াবেটিস রোগীদের হাঁটা বা ব্যায়াম করা জরুরী কেন?


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীদের ৩টি “D” অর্থাৎ Discipline,Diet & Drug-এর গন্ডির মধ্যে বাস করতে হয় আমৃত্যু। -এর মধ্যে আবার পহেলা নম্বরে আছে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা। চিকিৎসকের নিকট যাওয়া মাত্রই নিরবিচ্ছিন্নভাবে উপদেশরূপী যে আদেশটি নির্দেশিত হবে তা হলো “নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করবেন”। “কুঁড়ে বাঙ্গালী”-আমরা আমাদের এ সহজাত বৈশিষ্ট্যের খোলস থেকে এখনো পুরোপুরি বের হতে পারিনি। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করা এখনও আমাদের দৈনন্দিন অত্যাবশকীয় কাজের তালিকায় স্থায়ীভাবে ঠাঁই পাইনি।

এক্ষেত্রে আমাদের মা-বোনদের অবস্থা আরও বেহাল। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন তা আপনাদের সামনে তুলে ধরতেই এ আর্টিকেলটি লেখা।

ডায়াবেটিস কীঃগ্লুকোজ হলো আমাদের দেহের প্রধান শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য। শর্করাজাতীয় খাবার যেমন ভাত,রুটি,চিড়া,মুড়ি...ইত্যাদি হজমের পর গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়ে রক্তে যায়। রক্তে প্রবেশ করা মাত্রই হরমোন ইনসুলিন দেহের বিভিন্ন কোষে এই গ্লুকোজকে ঢুকিয়ে দেয়।

কিন্তু কোন কারণে প্রয়োজনের তুলনায় কম ইনসুলিন নিঃসৃত হলে কিংবা কোষের উপর ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস পেলে রক্তে ক্ষতিকর মাত্রায় গ্লুকোজ জমতে থাকে। রক্ত হয়ে যায় গ্লুকোজের শরবত। এটাই ডায়াবেটিস।


ডায়াবেটিক রোগীদের হাঁটা/ব্যায়াম করা জরুরী কেন?ইনসুলিনের সাহায্য ছাড়া গ্লুকোজ রক্ত থেকে মাংসপেশীর কোষে প্রবেশ করতে পারে না। পুরুষের শরীরের মোট ওজনের ৪২%-ই মাংস আর নারীর ক্ষেত্রে সেটা ৩৬%।

অর্থাৎ মাংসপেশীর কোষই হলো ওজন ভিত্তিতে দেহের সবচেয়ে বেশী কোষগুচ্ছ। একারণেই ডায়াবেটিস হলে আর কোন উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক দূর্বলতা থাকবেই। মাংসপেশীর কোষের আবার গ্লুকোজ জমিয়ে রাখার ক্ষমতাও বেশী। এরা নিজ ওজনের প্রায় ৬%-৮% পর্যন্ত গ্লুকোজ জমিয়ে রাখতে পারে যা এককথায় বিশাল গুদাম। মজার ব্যাপার হলো ব্যায়ামরত অবস্থায় মাংসপেশীর কোষ ইনসুলিনের সাহায্য ছাড়াই সরাসরি রক্ত থেকে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে

ফলে একদিকে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় আর অন্যদিকে মাংসপেশীর কোষগুলো পর্যাপ্ত গ্লুকোজ পেয়ে পূর্ণ শক্তিতে সবল হয়ে উঠে। বাচ্চারা বেশী নড়চড়া করে বলে বড়দের তুলনায় তাদের ইনসুলিন কম লাগে(ওজন ভিত্তিতে)। আরেকটি মজার তথ্য দিই;আমাদের শরীরের একটা অঙ্গ আছে যার মাংসপেশী ২৪ ঘন্টাই ব্যায়াম করে আর সেটা হলো হার্ট বা হৃদপিন্ড(প্রতি মিনিটে গড়ে ৭২বার সংকুচিত ও ৭২বার প্রসারিত হয়)। যেহেতু এটা সারাক্ষণ ব্যায়াম করে সেহেতু হৃদপিন্ডের মাংসপেশীর কোষে গ্লুকোজ ঢোকার জন্য ইনসুলিন লাগে না।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।

অধিকাংশ ডায়াবেটিক রোগীর দেহে কম নয় বরং প্রয়োজনের তুলনায় বেশীই ইনসুলিন নিঃসৃত হয়;কিন্তু কোষগুলোর ইনসুলিনের প্রতি আসক্তি কম থাকায় তা ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এটাকেই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বলে। মজার ব্যাপার হলো ব্যায়াম করার সময় কোষের এই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে যায়। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যায়াম/হাঁটাহাঁটি করা কতটা জরুরী।

কখন ও কতক্ষণ ব্যায়াম করবেনঃপ্রতিদিন সকালে ৩০মি. ও সন্ধ্যায় ৩০মি. ব্যায়াম করাই যথেষ্ঠ।

শুরুতে ৫মি. করে তারপর আস্তে আস্তে সময় বাড়িয়ে ৩০মিনিটে যাবেন। শারীরবৃত্তীয় ছন্দে প্রতিদিন সকাল ৫-৮টার মধ্যে সবচেয়ে বেশী এবং সন্ধ্যার সময় আরেকবার(তবে সকালের চেয়ে কম) অর্থাৎ দু’বার সর্বোচ্চ মাত্রায় ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। এজন্যই ডায়াবেটিক রোগীদের ঔষধ হিসাবে যখন ইনসুলিন দেওয়া হয় তখন মোট ডোজের দুই তৃতীয়াংশ সকালে ও এক তৃতীয়াংশ সন্ধ্যায় নিতে বলা হয়। আমাদেরও এই শারীরবৃত্তীয় ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যায়াম করা উচিৎ।

কী ধরণের ব্যায়াম করতে হবেঃফ্রী হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা এরোবিক এক্সারসাইজ বলতে যেসব ব্যায়াম বলতে যেগুলোকে বোঝায় সেগুলোই করতে হবে।

যেমন হাঁটা(ধীরলয়ে গল্প করতে করতে বা তসবী টিপতে টিপতে হাঁটলে হবে না। হাঁটাটা একটু দ্রুতলয়ের হতে হবে। যেমন মনে করুন আপনার সামনে বেশ খানিকটা দূরে আপনার পরিচিত একজন হেঁটে যাচ্ছে। দূরত্বের কারণে সে আপনার ডাক শুনতে পাচ্ছে না। এমতবস্থায় আপনাকে যতটা দ্রুত হাঁটতে হবে ঠিক ডায়াবেটিসের জন্যও সেরকম দ্রুতলয়ে হাঁটতে হবে),সাইকেল চালানো,সাঁতার কাটা...ইত্যাদি।



সাবধানঃ১)হার্টের রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যায়াম করবেন না ২)ভুলেও ভারী ব্যায়াম বা রেজিস্ট্যান্ট এক্সারসাইজ(যেমন ভার উত্তোলন) করতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হবে। এ ধরণের ব্যায়ামের সময় প্রচুর পরিমাণে স্ট্রেস হরমোন অ্যাড্রেনালিন বের হয় যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ৩)এ আর্টিকেলটি কেবলমাত্র সচেতনা সৃষ্টির জন্য লেখা। রোগ নির্ণয়,চিকিৎসা বা উপদেশের জন্য নয়। এসব বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।



দুঃসাহসঃআমি বাংলা সাহিত্যের খুব দূর্বল ছাত্র। ৫বছর আগে রেজিস্ট্রেশন করলেও মাত্র গত ১মাস থেকে ব্লগে লেখালেখি করছি। ব্লগের প্রায় ৪০% ই কবি ও কবিতার দখলে। তাদের সাথে থাকতে থাকতে সঙ্গদোষে আমারও মধ্যে কেমন জানি একটা ভাব চলে এসেছে। সাহস করে কটা লাইন লিখে ফেললাম-

যে বেশী নড়ে না
ডায়াবেটিস তারে ছাড়ে না
শুয়ে বসে কাটালে জীবন
তার হবে অকাল মরণ।



30mins’ walk twice a day
Keeps many diseases away
Move for health
Health is your real wealth.


আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।

রেফারেন্সঃ
*Lecture-16,byDr.DeborahMowswitz,ColumbiaUniversity, New York,USA.
*WIKIPEDIA.।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.