আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাধের রুয়েট লাইফটা আমার

একটি বোর্ড ভাইভার আত্নকাহিনীঃ গুটি গুটি পায়ে, সন্তর্পণে ভাইভা রুমে ঢুকলুম… তার আগেই বলে নেই, আমার পূর্বে ২০ জন ব্যাক্তি মেন্টাল এ্যসল্ট এর শিকার হয়ে দু;খ ভারাক্রান্ত মন প্রস্থান করেছে… আমার মাঝামাঝি রোল থাকায় আমার ভাইভার সময়ে সব বারই দেখছি স্যার দের মেজাজ কেমন যেন খিটখিটে থাকে। (হয়ত আমার আগে যেসব ব্রিলিয়ান ছাত্রদের ভাইভা স্যাররা নেন, তাদের কোনভাবেই কোন কোশ্চেনে আটকাতে পারেন না দেখে!!!) এবার ও ব্যাতিক্রম হইলো না। যাক, সে অনেক কথা। আসল কাহিনীতে আসি। রুমে ঢুকলুম, আমি, চকো(সুজয়) এবং হুকস (হুমায়ুন কবির)।

টার্গেট ছিল টুক টুক করে যেয়ে টপাক করে শোভন স্যার এর সামনে বসে পড়বো। কিন্তু না, তা হল না। যেয়ে বসলুম ইন্সট্রুমেন্টশন স্যার এর সামনে। প্রথমে কানের পর্দায় আঘাত হানলো এ্লভিডিটি শব্দটি। বললুম মালটা কি জিনিস!! এরপর স্যার জিজ্ঞাসা করলেন “তো বাছা চিত্র খানা এঁকে ফেল দেখি…”… লে হালুয়া!! তা কি আমার মনে আছে নাকি।

কোন মতে বললুম, “স্যার পড়ছিলাম তো, কিন্তু ফিগার(!!) তো মনে নাই” এরপরের প্রশ্ন, “কি থেকে কোশ্চেন করলে পারবা??”… এককথায় উত্তর, “স্যার ইন্সট্রুমেন্টশন বাদে বাকি যা কিছু ধরেন না কেনো…” {স্যার নিজেই ঐ সাবজেক্টের, আর স্যার রে শুনাইলামডা কি!!} নেক্সট কশ্চেন, “মাইক্রোপ্রসেসর পড়ছো??” … উত্তর, “জি স্যার”… তো বলো দেখি “মাইক্রোপ্রসেসর আর সিপিইউ এর কি ব্যবধান??” উত্তর বলার পর স্যার এর মুখের এক্সপ্রেশন দেখ বুঝলাম স্যার আমাকে আটকাতে পারেননি!! স্যারঃ হুমম… আচ্ছা বলো দেখি সিপিইউ এর ভিতর ঠান্ডা রাখা হয় কি দিয়ে?? আমিঃ স্যার কুলিং ফ্যান। কালো রঙ এর। তিন চারটা থাকে। (হাসির ইমো) স্যারঃ (ভিলেনি হাসি দিয়ে) এখন বলো দেখি কম্পিউটার যখন সুইচ দেয়া হয় তখন অন হয় কি করে?? (মানে ইণ্টারাপ্ট রুটিন গুলোর কাজ আর কি ) আমিঃ স্যার সুইচ দিলাম, পাওয়ার সাপ্লাই থেকে কারেন্ট সিপিইউ তে গেলো আর অন হয়ে গেল। !!! স্যারঃ গাধা!! এই শিখছো?? আচ্ছা বলো mother board এর ভিতর কি কি জিনিস থাকে আর কি কি সার্কিট আছে? আর কি কি চিপ এবং পার্টস আছে??? এদের কাজ কি?? কোনটা মাইক্রোপ্রসেসর?? কয়টা আছে?? ইন্টেলের কিনা?? থাকলে মডেল দেখে কি বুঝো?? আর এর কাজের হেল্পএর জন্য সাপ্লি্মেন্টারী কি কি চিপ, রম, র‍্যাম, হ্যান ত্যান প্যান প্যান লাগানো আছে??? এর এড্রেস বাস, ডাটা বাস কিভাবে হিসাব করবা?? ইন্টারনাল মে্মরী হিসাব করে বলো?? কয় পদের মে্মরী আছে?? ক্যাসি মেমরী, এক্সিকিউশন মেমরী ইত্যাদি সব বলো { ততক্ষনে স্যার একটা ডেস্কটপ পিসির মাদারর্বোড পাশে খুলে রাখছে} {পাঠক বিশ্বাস করেন এইগুলাই স্যার ধরছে … একসাথে প্রায় ১৮টার মত কোশ্চেন!! স্যার প্রশ্ন জিগায় আর আমি কাউন্ট করি।

এরপরে তো আরো অনেক কশ্চেন ধরছে তা আমার নিজের ই মনে নাই} কিছু কিছু প্রশ্ন কইলাম, কিছু ঘুজুমুজু কইরা গুলাইয়া কইলাম, কিছু এড়ায় গেলাম, কিছু প্রশ্নের উত্তর স্যার এর মাথার উপর দিয়া থ্রো করলাম যাতে স্যার ঐগুলা আর না জিগায় !!! আসল বিটলামি শুরু হইলো এইবারঃ……… এরপর স্যার আসলেন একটা মাইক্রোপ্রসেসর এর ভিতরের ডিজাইন নিয়া!! {মেজাজ খারাপ হইতাছে যে এত কি কশ্চেন জিগায়… কিছুই তো পারি না… ধুর মিয়া} ৮০৮৬ মাইক্রো দিয়া শুরু করলেন, ৮০৮৫, ৪০০৪, ৮০৮৮, কোর আই-৩, আই-৫, সেলেরন কোনডাই জিগাইতে বাদ দেন নাই। (৮০৮৬ বাদে কিচ্ছু পারি নাই, কারন অন্য কিছু তো পড়ানো ও হয়নি, ৮০৮৬ দিয়েই তো রিসেন্ট মাইক্রো ফ্যামিলির শুরু, ৮০৮৬ ই পাঠ্যপুস্তকেরর, বাকি গুলো সারা বাংলাদেশে আর কোথাও পড়ানো হয় কিনা আমার জানা নাই, তারপরেও স্যার ক্যান জিগাইলো!! আজাইরা পেইন আর কি) এরপর কইলেন, “তোমারে আমি ৮ বিট ডাটা_বাস এর একটা মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইন করতে কইলাম… হিসাব করে বল দেখি, এর এড্রেস বাস কত বিট এর হতে পারে?? এর সেগমেন্টঃঅফসেট, লজিকাল এড্রেস, ফিজিকাল এড্রেস কিভাবে হিসাব করে কত হইতে পারে … এর ভিতরের পিন ডিজাইন কিরকম হতে পারে... ইত্যাদি ইত্যাদি... ” (মানে একটা কম্পলিট মাইক্রোপ্রসেসর এর ডিজাইন করা!!! আদৌ সম্ভব কি এই স্বল্প জ্ঞান নিয়ে!! ৮০৮৬ এর সব ফিচারই জানি না এখনো, আর এখনি মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইন!! পুরাই অফটপিকে কোপটা দিলেন … হয়ত কইছিলাম যে “ইন্সট্রুমেন্টেশন বাদে আর যা জিগাবেন তাই পারুম”, তাই হয়ত সুজুগ বুইঝা এই ফাপড়ডা লিয়া লিলেন!!!) ততক্ষনে পাশের স্যার বুঝলেন যে আমার উপর দিয়া কি সিডর ঝড় যাইতাছে। ইতিমধ্যে চকোসাহেব, আর হুকস বহুত আগে রুম ছেড়ে প্রস্থান করেছেন। ইন্সট্রুমেন্টেশন স্যার এর করা কোশ্চেন গুলো ওখানেই ইস্তফা দিয়ে ডাটাবেজ কোশ্চেন এন্সার করতে লেগে গেলুম!!! সারসংক্ষেপেঃ আজকের অনুভূতি হইলো, আমি কোনদিন ইন্টেলের যব এপ্লাই করতে পারবো কিনা জানি না, তবে আজকে মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইনের যে প্রশ্ন গুলো শুনলাম তাই হয়তো ওই কোম্পানিগুলো গবেষনা করে, ওরাই এই নিয়ে হয়ত কাজ করে, এইটা ওদেরই ব্যাপার মনে হয়… একটা রিয়েল যব ইন্টারভিউ তে মনে হয় কোনদিন এত নাস্তানাবুদ করা হয়না। যাই হোক, জয়তু রুয়েট, জয়তু বোর্ড ভাইভা, জয়তু আমাদের ইঞ্জিনি্যারিং লাইফ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।