আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাধের রসমালাই

গতকাল যারা আমার বড় আপার বিয়ে খেয়েছিলেন তারা আজ হালকা-পাতলা মিষ্টি মুখ করে নেন! মানহীন মিষ্টি খেয়ে পেট খারাপ করলে দায়ী থাকবে সামু কর্তৃপ আমি নই! আর শর্ট পড়লে দায়ী থাকবেন আপনারা! কারো কাছে যদি ভালো লাগে তো এর কৃতিত্ব ষোলআনাই আমার!!! ======== সুখানুভূতি প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো মিষ্টি। শুভ কাজের সূচনা কিংবা সমাপ্তি এবং কোনো কৃতিত্ব অর্জন করলে মানুষ খুশী হয়ে গাঁটের পয়সা খরচ করে প্রিয়জনকে মিষ্টি আহার করিয়ে সুখের মাত্রা বাড়িয়ে তুলে। তবে কখনো কখনো এই সুখ-উল্লাস অন্যকে কষ্ট দেয়। এমকি কেউ কেউ মনোযাতনায় অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়ে। হিংসা থেকে নয়, সুখ-উল্লাসের অন্তরালের ঘটনা এর মূল কারণ।

এমনি একটি ঘটনা বর্তমান আওয়ামী সরকারের আগের আমলে ঘটেছিল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র লীগের এক সোনার ছেলে মিষ্টান্ন বিলিয়ে ছাত্রী ধর্ষণের 'সেঞ্চুরী' উদযাপন করেছিল। যা কারো কারো জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনেকের বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিল। আবার অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল।

১৯৮৮ সালে হঠাৎ খবর বের হলো ভারত পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এই মহা আনন্দের (!) খবর শুনে একদল বাংলাদেশী (?) 'মিষ্টি সাবার' করে খুব আয়েস করে সুখের ঢেকুর ছাড়তে শুরু করেছিল। সাথে সাথে প্রতিপক্ষকে ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছিল, মামারা সাবধান! মাত্র একটি দিয়ে নাগাসাকি আর হিরোশিমার মতো তামা বানিয়ে দিবো! বোমার জন্ম দিয়েছিল ভারত আর জন্ম উল্লাসের চাপ পড়েছিল আমাদের দেশের মিষ্টির উপর। এই মিষ্টি নিধন আর নর্তন-কুর্দন আরেক শ্রেণীর সহ্য হচ্ছিল না। হিংসার দাবানলে জ্বলে-পুড়ে ছাই হচ্ছিল।

সম্ভবত তাদের দোয়ার ফজিলতে (!) দু'দিন পর পাকিস্তান পারমাণবিক বোমা প্রসবের ঘোষণা দিয়ে দুনিয়া জুড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। পাকদের বোমা প্রসবের খবরের চাপও পড়েছিল আমাদের দেশের মিষ্টির উপর। পাক-ভারতের বোমা-মাতৃত্বের সুসংবাদ শুনে আমাদের দেশের অবুঝ পোলাপান মিষ্টি খেয়ে নৃত্য করেছিল যা ছিল মিষ্টির উপর অত্যাচারের নামান্তর। কিছুদিন আগে বর্তমান প্রধান মন্ত্রী বলেছেন, তাদের আগের আমল নাকি বাংলাদেশের জন্য ছিল সোনালী যুগ। এই হিসাবে ১৯৯৬ সাল ছিল সোনালী যুগের সূচনাকাল।

এই কথিত সোনালী যুগেই জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কুখ্যাত সোনাময় সেঞ্চুরী হয়েছিল। শুধু তাই নয় এই সোনালী যুগে ভারতের সহযোগীতায় মতিঝিলে হঠাৎ এক সোনার খনি আবিষকৃত হয়েছিল। লোভনীয় সোনা আহরণে উক্ত খনিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল এদেশের অভূক্ত যুবকেরা। 'শেয়ার মার্কেট' নামক এ সোনার খনির খ্যাতি বিদুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে। তখন আমি এক বন্ধুর সাথে শান্তিবাগে থাকতাম।

সোনার খনিতে বিনিয়োগের প্রস্তাব আসে বন্ধুর পক্ষ থেকে। প্রথমে রাজি হই নি। পরবর্তীতে 'ভয়ঙ্কর' প্রলোভনে অল্প সময়ে বড় লোক হওয়ার লোভে রাজি হয়ে যাই। মা-বাবা এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে তুলে দেই বন্ধুর হাতে। বন্ধুও গ্রামের জমি-জমা বিক্রি করে টাকা-পয়সা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মতিঝিলের সোনার খনিতে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ চত্বরে খনিটির উৎপত্তি হলেও এটি বিস্তৃতি লাভ করেছিল উত্তরে শাপলা চত্বর এবং দক্ষিণে ইত্তেফাকের মোড় পর্যন্ত। সর্ট টাইমে বড় লোক হওয়ার ধান্দায় সে সময়ে হাজার হাজার যুবক এ খনিতে পাগলের মতো ছুটাছুটি করতো। আমার বন্ধুও সেখানে সারাদিন শেয়ার নামক একটুকরা কাগজ বিক্রি করে গভীর রাতে বাসায় আসতো এবং আমার জন্য নানান লোভনীয় খাবার নিয়ে আসতো। বন্ধুর মধ্যে বড়লোকিভাব দেখে আমিও গোফে তা দিতে শুরু করেছিলাম। কিছু দিন পর বন্ধু বললো, ঢাকায় তো সুবিধা যাচ্ছে না, তাই এখন থেকে ঢাকায় শেয়ার কিনে চট্টগ্রাম নিয়ে বিক্রি করবো তাতে লাভ হবে বেশী।

প্রথম প্রথম হলোও তাই। চট্টগ্রাম থেকে আসার পথে সে কুমিল্লা থেকে রসমালাই নিয়ে আসতো। গভীর রাতে দু'বন্ধু মিলে রসমালাই খেতে খেতে স্বপ্নের জাল বুনতাম। বন্ধুর ঠোটের কোণে লেগে থাকতো হাসির ঢেউ! সেই তৃপ্তির হাসি দেখে আমার হৃদয়ে লাগতো সুখের দোলা! পক্ষকাল পর বন্ধু আর রসমালাই আনতো না। কথাও বলতো কম।

রাতে ঘুমাতো না। চিৎ হয়ে শুয়ে শুধু চেয়ে থাকতো উপরের দিকে। রাত পোহালে বুক ভরা আশা নিয়ে আবারো সে চলে যেতো মতিঝিলে আর আমি রসমালাইয়ের আশা নিয়ে দোয়া করতাম শেয়ার বাজারটা যেন চাঙ্গা হয়। কিন্তু দিন শেষে রসমালাইয়ের আর দেখা পেতাম না। বরং বাসায় ফিরে সে বিড় বিড় করে বলতো শাইন পুকুরটা সর্বনাশ করে দিল।

এ বিষয়ে জ্ঞান কম থাকায় আমি ভাবতাম বন্ধু বুঝি পুকুরে পড়ে গিয়েছিল! মাঝে মাঝে সে চট্টগ্রামেই দু'তিন দিন থেকে যেতো। যখন ফিরে আসতো তখন আর তার মুখের দিকে তাকানো যেতো না। শুকনা মুখটা দেখে মনে হতো কত কাল মাছ-ভাতের সাথে দেখা নেই তার! কষ্টের দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে একদিন বললো, চট্টগ্রামেও লস খেলাম। আমি বললাম, শেয়ার যা আছে তা বেচে দিয়ে মার্কেট থেকে বেরিয়ে এসো। গত কয়মাস রসমালাই যা খেয়েছি তাতে বাকী জীবন আর মিষ্টি না খেলেও চলৰে।

কিন্তু আশাবাদী বন্ধু আশা ছাড়তে নারাজ। নেশাখোরের মতো প্রতিদিন চলে যেতো মতিঝিলে আর রাতে ফিরে আসতো হতাশার ঝুলি সমৃদ্ধ করে। শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাকের মোড় পর্যন্ত যখন মৃতু্যশোকে প্রেতপুরী তখন বন্ধুর ঘোর কাটে। বড়লোক হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে শেয়ারের সার্টিফিকেট গুলো ছিড়ে রাস্তায় ছুড়ে মারে। সেই সোনালী যুগের রসমালাইয়ের কথা মনে হলে আজো আমার মুখটা পাতলা পানিতে ভরে উঠে! তখন একটা খবর বাতাসে ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, শেয়ার মার্কেট থেকে ভারতীয় চতুর বণিকেরা সুকৌশলে টাকাগুলো তাদের দেশে নিয়ে গেছে।

এই টাকা দিয়ে ভবিষ্যতে কোনো একসময় ভারত যখন মঙ্গল গ্রহে আনবিক চুলি্ল বানিয়ে মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করবে তখন আমরা যারা শেয়ার বাজারে গিয়ে দু'দিনে ফকীর হয়ে গেছি তারাই খুশীতে নেচে-গেয়ে মিষ্টি খেয়ে মিষ্টির ঘাটতি ফেলে দিবো বাংলাদেশে! ছিয়ান্নবইয়ের সেই সোনা মিয়ারা মইন-ফখরুলের বিশেষ রহমতে আবারো বাংলার মসনদে সমাসীন। যথারীতি ছিয়ান্নবইয়ের অভিজ্ঞতায় এবারও সোনার খনি খুলে দিল মতিঝিলে। আবারো বাংলার অভুক্ত যুবকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়লো একলাফে বড়লোক হওয়ার আশায়। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। বালি কে দিল তাও তদন্তে বেরিয়ে আসে কিন্তু আমাদের অর্থমন্ত্রী 'মালের বাপ' লজ্জায় সেসব ভাসুরদের নাম বলতে পারছেন না! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।