আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাইকেলের সালতামামি



গাড়ী নিয়ে বিরক্তমুখে জ্যাম-এ বসে আছেন হঠাৎ দেখলেন পাশ দিয়ে সাঁই করে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে গেলো এক তরুন অথবা ছুটিরদিনে শহরের কোলাহল ছেড়ে চলে গেলেন শান্ত কোনো নদীর পাড়ে, গিয়ে দেখেন সাইকেল নিয়ে একঝাঁক ছেলেমেয়ে উপস্থিত আপনার আগেই । এটা এখন আমাদের মোটামোটি চোখ সহা দৃশ্য। ঢাকা শহরের বিখ্যাত জ্যামকে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে আমাদের এই সাইক্লিস্টের দল। এই দলে তরুন যুবা যেরকম আছে তেমনি আছেন অসংখ্য বৃদ্ধ এবং মেয়েরাও পিছিয়ে নেই কোন অংশে। রোজকার কাজে কলেজ/ভার্সিটি/অফিস যাওয়া-আসা ছাড়াও ছুটির দিনে দল বেঁধে শহরের বাইরে বেড়িয়ে আসা যায় খুব সহজে কোন প্রকার যাতায়াত খরচ ছাড়াই।



এই দুই চাকার সাইকেলের কিন্তু বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন একই রকম দেখতে হলেও সাইকেল সব কিন্তু আসলেই একরকম নয়। আজকের লিখার মুল উদ্দেশ্য হলো বিভিন্নরকম সাইকেলের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া। সাথে ফ্রী হিসেবে থাকবে সাইকেলের গিয়ার সিস্টেম এবং বিভিন্ন অংশের পরিচিতি।

সাইকেলের প্রকারভেদে যাওয়ার আগে আমরা একটু গিয়ার সিস্টেম এবং ব্রেক নিয়ে আলোচনা করে নেই তাহলে এর বেসিক ফাংশনটা বোঝা আপনাদের জন্য অনেক সহজ হবে।

প্যাডেলের উপরে যেই দাঁতওয়ালা অংশে চেইন আটকে থেকে ঘুরে সেটাকে বলা হয় ক্র্যাঙ্ক আর পিছনের চাকার সাথে যেটা থাকে সেটাকে বলে ক্যাসেট। সাধারণত ক্র্যাঙ্কে ছোট, মাঝারি এবং বড় ৩টি অপশন থাকে এবং ক্যাসেটে থাকে ৭/৮/৯/১০ টি। ক্র্যাঙ্ক এবং ক্যাসেটের সংখ্যা গুন করে সাইকেলের টোটাল স্পীড বের করা হয়। ক্র্যাঙ্কের সংখ্যা বাইডিফল্ট ৩ ধরে যদি আপনার ক্যাসেট ৮ স্পীডের হয় তাহলে সাইকেল হলো ৮*৩=২৪ স্পীডের। সামনের গিয়ার চেঞ্জ করার জন্য ক্র্যাঙ্কের সাথে ক্যাবল দিয়ে লাগানো একটা সিস্টেম থাকে যেটাকে বলা হয় ফ্রন্ট ডিরেইলার এবং পিছনের গিয়ারের জন্য থাকে রিয়ার ডিরেইলার।

ফ্রন্ট এবং রিয়ার ডিরেইলারের থেকে ক্যাবল গিয়ে ব্রেক লিভারের নিচে একরকমের সুইচের সাথে সংযুক্ত থাকে যেটাকে বলা হয় শিফটার। ক্র্যাঙ্ক, ক্যাসেট, রিয়ার-ফ্রন্ট ডিরেইলার এবং শিফটার সব মিলিয়ে হচ্ছে সাইকেলের গিয়ার সিস্টেম।


এখন আসি ব্রেকের ব্যাপারে। সাধারণত সাইকেলে ৩ ধরনের ব্রেক ইউজ করা হয় ভি ব্রেক, মেকানিকাল ডিস্ক ব্রেক এবং হাইড্রলিক ডিস্ক ব্রেক। তিন ধরনের ব্রেকের ছবি-ই আমি নিচে দিয়ে দিলাম।




এখন আমরা সাইকেলের টাইপ নিয়ে ডিটেইলস আলচনা করবো।

খুব সাধারনভাবে বললে সাইকেল মূলত দুই প্রকার।
১. মাউন্টেন বাইক এবং
২. রোড বাইক

১. মাউন্টেন বাইকঃ ঢাকার রাস্তায় অহরহ যেসব সাইকেল চলতে দেখা যায় তাঁর মধ্যে বেশিরভাগ-ই মাউন্টেন বাইক। এগুলোর সাধারণত হ্যান্ডেলবারের নিচে একরকমের সাসপেনসন থাকে যাকে সাইকেলের ভাষায় বলা হয় “ফর্ক”। উঁচু-নিচু বা এবড়ো-থেবড়ো রাস্তায় চলার সময় ম্যাক্সিমাম ঝাঁকি এই ফর্ক হজম করে ফেলে।

মাউন্টেন বাইকের আর একটি বিশেষত্ব হলো এর টায়ার। সাধারণত ২” থেকে শুরু করে ২.১”/২.২”/২.২৫”/২.৩” পর্যন্ত হতে পাড়ে এর টায়ারের সাইজ। কেউ কেউ আবার স্পীড একটু বেশি পাবার জন্য ১.৭৫” সাইজের টায়ার-ও ব্যাবহার করেন। একে বলা হয় স্লিক টায়ার। এখন কিন্তু আপনি ঢাকার রাস্তায় কোন সাইকেল দেখলেই খুব সহজে বলে দিতে পারবেন সেটা মাউন্টেন বাইক কিনা।



এই সিম্পল মাউন্টেন বাইক আবার দুই রকমের হয়।
ক) হার্ডটেইল মাউন্টেন বাইক এবং
খ) ফুল সাস্পেনশন মাউন্টেন বাইক
হার্ডটেইল দেখে আপনারা নিশ্চয় চিন্তা করছেন সাইকেলের আবার লেজ আসলো কোথা থেকে এবং সেটা আবার শক্ত হয় কিভাবে। নিচের ছবি দেখলেই ব্যাপারটা একদম ক্লিয়ার হয়ে যাবে।


রেগুলার বিভিন্ন স্থানে কমিউট করা এবং হাল্কা অফরোড বা ক্রস কান্ট্রির জন্য হার্ডটেইল যথেষ্ট। ফুল সাস্পেনশন ব্যাবহার করা হয় এক্সট্রিম অফরোড অথবা ডাউনহিলের ক্ষেত্রে।

নরমালি হার্ডটেইল থেকে ফুল সাস্পেনশন বাইকের দাম অনেক অনেক বেশি হয়।

২. রোড বাইকঃ রোড বাইক শব্দটা নতুন শোনালেও রেসিং সাইকেল বললে আপনারা বুঝতে পারবেন আমি কোন ধরনের বাইকের কথা বলতে চাচ্ছি। ড্রপবার হ্যান্ডেলওয়ালা চিকন টায়ারের স্লিম সাইকেলগুলোকেই বলা হয় রোড বাইক। এসব বাইক কে খুব সহজেই আলাদা করা যায় এর ফ্রেম এবং টায়ারের সাইজ দেখে। এগুলোর ফ্রেম জিওমেট্রি নরমাল মাউন্টেন বাইক থেকে একেবারেই আলাদা এবং টায়ারের মাপ হয় 700c।

রোড বাইক ডিজাইন করা হয় মেইনলি স্পীডের কথা মাথায় রেখে এবং স্মুথ রাস্তায় চালানোর জন্য। রোড বাইকেরও বিভিন্ন টাইপ আছে তবে সে ব্যাপারে আজ আর না প্যাঁচাই। বিরক্তিকর পোস্ট পড়তে পড়তে এতক্ষণে আপনারা গালাগাল শুরু করেছেন সেটা বুঝতে পারছি।


এসব ছাড়াও আরো নানারকম সাইকেল আছে যেমন BMX, হাইব্রিড, কমিউটার, টেন্ডেম, ফিক্সি, ট্রয়াথলন, ফোল্ডিং বাইক ইত্যাদি ইত্যাদি। সবগুলো টাইপ নিয়ে আর একদিন বিশাল বড় করে প্যাঁচানোর ইচ্ছা আছে।

ততদিন অপেক্ষায় থাকুন আর উপরের যে কোন একটি পছন্দ করে আজ থেকেই স্টার্ট করুন সাইক্লিং। সুস্থ থাকুন, সতেজ থাকুন, সবুজে বাঁচুন এবং ঢাকার বিখ্যাত (কুখ্যাত) জ্যামকে দেখান বৃদ্ধাঙ্গুলি। হ্যাপি সাইক্লিং।
 ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.