আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজির জন্য...

মাগুরার আদর্শ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের ৩০৪ নম্বর কক্ষে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের ভাই বিমলেন্দু শিকদারের মেয়ে। এ কারণে ওই কক্ষে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। বিমলেন্দু শিকদারের পছন্দের শিক্ষকদের ওই কক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তাঁর মেয়ের গৃহশিক্ষক পর্যন্ত রয়েছেন। ওই শিক্ষকেরা তাঁর মেয়েকে প্রশ্নের উত্তর বলে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।


৮ এপ্রিল ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পরীক্ষার্থী বলে, ‘মন্ত্রীর ভাতিজিকে স্যার উত্তর বলে দিচ্ছিলেন। ওই সব দেখে জানা উত্তরও ভুলে গেছি। পরীক্ষায় মন বসাতে পারিনি। এ ছাড়া বাইরে থেকে লোকজন এসে মন্ত্রীর ভাতিজিকে উত্তর বলে দিয়ে যান। ’ ওই কক্ষের আরও অনেক পরীক্ষার্থী একই অভিযোগ করে।


কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা-২ আসনের সাংসদ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের ভাতিজি মাগুরা হোসেন শহীদ সোহ্্রাওয়ার্দী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। মাগুরার আদর্শ ডিগ্রি কলেজকে ওই কলেজের পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র করা হয়েছে। কলেজের তৃতীয় তলার ৩০৪ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছে প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজি। ৩ এপ্রিল পরীক্ষা শুরুর দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় ওই কক্ষে দায়িত্ব পালন করেন প্রতিমন্ত্রীর বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত শালিখার সিংড়া বিহারী লাল কলেজের শিক্ষক দুলাল চন্দ্র শিকদার ও আদর্শ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক সাধন কুমার ঘোষ। সাধন কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে পরীক্ষার খাতা জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

৬ এপ্রিল বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার দিন ওই কক্ষে দায়িত্ব পালন করেন বিহারী লাল কলেজের শিক্ষক রাজ শেখর ভৌমিক ও হাজিপুর সম্মিলনী কলেজের চন্দনা রানী বিশ্বাস। ৮ এপ্রিল ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষার দিন বিহারী লাল কলেজের শিক্ষক রিনা রানী সিংহ ও বাবুখালী কলেজের শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসকে ওই কক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সুভাষ চন্দ্র প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজির গৃহশিক্ষকও।
শালিখার সিংড়া বিহারী লাল শিকদার ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিমলেন্দু শিকদার। তাঁর আরেক ভাই বিবেকানন্দ শিকদার ওই কলেজের অধ্যক্ষ।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়ম ভেঙে বিহারী লাল শিকদার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকদের আদর্শ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের ৩০৪ নম্বর কক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্য কক্ষগুলোতে এক দিনও ওই কলেজের শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে কেন্দ্রসচিব আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সূর্যকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা ভালো পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে কিছু সুপারিশের চাপ থাকে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না।

মন্ত্রীর ভাই বিমল শিকদার আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি তাঁর মেয়ে যে কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছে, সেখানে বিহারী লাল কলেজের শিক্ষকদের ডিউটি দিতে বলেন আমাকে। পরিচিত শিক্ষক থাকলে মেয়েটি পরীক্ষা দিতে সাহস পাবে এ জন্য। অন্য কোনো কিছু নয়। তবে আজ (গতকাল) ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেট এসে শিক্ষক পরিবর্তন করে দিয়েছেন।


কেন্দ্রের হল সুপার অরবিন্দু কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘কেন্দ্রসচিব ও আমি মিলেই কোন শিক্ষক কোথায় ডিউটি করবেন, তা ঠিক করি। তবে অনেক ক্ষেত্রে কিছু বলা বা করার থাকে না। ’
এ ব্যাপারে প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয় থেকে বিমলেন্দু শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এগুলো ফালতু অভিযোগ। আমার মেয়ে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। তার কারও কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।

’ ৩০৪ নম্বর কক্ষে বিহারী লাল শিকদার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি রেগে যান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মাসুদ আহমেদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ওই কক্ষের দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকদের পরিবর্তন করা হয়েছে। দুজন ম্যাজিস্ট্রেটকে ওই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.