আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রণাঙ্গনের দিনগুলিঃ নলুয়া ও তেলিয়াপাড়ায় এ্যামবুশ

Never lose hope...., Never Stop Expedition.... আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন একেকটা অসামান্য বীরত্বের অমরগাথা। তেলিয়াপাড়া ও চুনারুঘাটের মধ্যবর্তী স্থানের একটি চা বাগানের নাম নলুয়া। চুনারুঘাট থানাধীন এই বাগানে মুক্তিবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন সংঘটিত হয় ১৪ মে তারিখে। মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় মাত্র ১৩ জন। নেতৃত্বে রয়েছেন হাতকাটা সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান।

একাত্তরের এই দুর্ধর্ষ ক্যাপ্টেনের একটি হাত কাটা ছিল। যাই হোক, ফিরে যাই আবার নলুয়া চা বাগানে। শহর থেকে বেশ দূরে রাস্তার দু’পাশে এই চা বাগানটি। মাঝের নির্জন রাস্তা চলে গেছে সিলেট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে ঢাকা অভিমুখে। হবিগঞ্জ মহকুমার শায়েস্তাগঞ্জ থানার কয়েক মাইল পূর্বে বাগানের ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তাটি একটি গিরিসংকটের মধ্যে অবস্থিত।

উত্তাল একাত্তরে হাতকাটা সাব-সেক্টরটি ৩নং সেক্টরভুক্ত ছিল। পূর্বাহ্ণে মতিউর রহমান তাঁর দলবল নিয়ে বাগানের ভিতর একটি সুবিধাজনক স্থানে শক্তিশালী মাইন স্থাপন করেন। তারপর ওঁত পেতে বসে থাকেন রাস্তার দু’পাশে পাক বাহিনীর কনভয়ের জন্য। দুপুরে সিলেটের দিক থেকে একটি বিশাল পাকিস্তানি বাহিনী অগ্রসর হতে থাকে। এক সময় তারা ঢুকে পড়ে এ্যামবুশের ভেতরে।

মুহূর্তে বিস্ফোরিত হয় মাইন। বিকট শব্দ করে উল্টে পড়ে সামরিক যান। এক এক করে চোখের পলকে ধ্বংস হল ৩টি গাড়ি। বিকল হয় আরও দু’টি। বিকল হয়ে যাওয়া গাড়ি থেকে নামতে চেষ্টা করা পাকিস্তানি সৈন্যদের ওপর একযোগে গর্জে উঠলো মুক্তিযোদ্ধাদের সবকটা অস্ত্র।

ব্যস, একে একে খতম ৬৫জন খানসেনা। সফল অপারেশন শেষে ক্যাপ্টেন মতিউর তাঁর ট্রুপস্ নিয়ে নিরাপদে কেটে পড়েন। ফিরে আসেন আপন আশ্রয়স্থলে। নলুয়া বাগানে মুক্তিবাহিনীর হাতে প্রচণ্ড মার খাবার পর পাকবাহিনীর শক্তিসামর্থ্য কিছুটা কমে আসে। তাই চুনারুঘাট থেকে তাদের আরও সৈন্য সংগ্রহ করে আনতে হয়।

পুনর্গঠিত হয় তাদের বাহিনী। পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে তারা আবার রওনা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া অভিমুখে। কিন্তু ভাগ্য যে আজও তাদের সাথে নেই। ১৬ মে তেলিয়াপাড়া অতিক্রম করে যাবার সময় এবার তারা পড়ে ক্যাপ্টেন মতিনের ফাঁদে। সিমনা সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন আব্দুল মতিন তাঁর দলবল নিয়ে একযোগে আক্রমণ করে খতম করেন ৪০জন পাকসেনা আর ধ্বংস করেন একটি সামরিক কনভয়।

আর এভাবেই একের পর এক দুর্ধর্ষ অপারেশেনের দ্বারা গঠিত হয়েছিলো ২৬৬ দিনের সেই রণাঙ্গনের দিনগুলি। হাতকাটা সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান সিমনা সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন আব্দুল মতিন সূত্রঃ ১. বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস – সেক্টর তিন ২. সিলেটের যুদ্ধকথা - তাজুল মোহাম্মদ রণাঙ্গনের দিনগুলিঃ মনতলার যুদ্ধ (১৫- ২১ জুন ’৭১) রণাঙ্গনের দিনগুলিঃ তেলিয়াপাড়ায় গেরিলা আক্রমণ রণাঙ্গনের দিনগুলিঃ অপারেশন জাতিসংঘ গ্যারেজ রণাঙ্গনের দিনগুলিঃ আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক অপারেশন  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.