আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টেলিভিশন সংক্রান্ত পারিবারিক সূত্র

সারাদিন অফিস করে এসে বাসায় ফিরে স্বামী টিভির সামনে এসে বসে। রিমোট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এ চ্যানেল ও চ্যানেলের নিউজ দেখে। যদিও সব মোটামুটি একই খবর। শুধু খবরই নয় তিনি আরো দেখেন স্পোর্টস চ্যানেল। ছুটির দিনে সারাদিন তো খেলাই চলে টিভিতে।

আর হ্যাঁ তিনি টক শোগুলোও মন দিয়ে দেখে থাকেন। এরমধ্যে স্ত্রী এসে টিভির রিমোটের দখল নিয়ে তার প্রিয় ভারতীয় ভাংলা ও হিন্দি সিরিয়াল দেখার জন্য বসলে ছোটখাট একটা যুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। স্বামী বলেন, ‘’সারাদিন তো ঘরে বসে টিভিই দেখো। সারাদিন অফিস করে এসে একটু টিভি দেখবো, সেটাও তোমার জ্বালায় পারি না। ‘’ স্ত্রী তেড়ে আসেন, ‘’কে বলেছে সারাদিন বসে টিভি দেখি? ঘরের এত কাজগুলো কে করে শুনি?’’ ছেলেমেয়েরাও টিভি দেখতে চায়।

স্পোর্টস চ্যানেল, মিউজিক চ্যানেল, মুভি চ্যানেল, ডিসকভারি চ্যানেলে, ট্রাভেল চ্যানেল টিভির শত শত চ্যানেলে ঘুরে ঘুরেও নিজের পছন্দের কিছুই যেন তারা খুঁজে পায় না। সুতরাং মোবাইল, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া আর কী করার আছে তাদের? বাসায় যদি একটা শিশু থাকে তবে তো কথাই নেই। সারাদিনই চালু থাকবে কার্টুনের চ্যানেলগুলো। রিমোটটাও তার দখলেই। রিমোট নিয়ে এই কাড়াকাড়ি দেখতে দেখতে একটা পারিবারিক সূত্র আবিষ্কার করে ফেললাম।

১ম সুত্রঃ ‘’কোন পরিবারে একাধিক চ্যানেলের সংযোগসহ একটি টিভি থাকলে, টিভির চ্যানেল সংখ্যা ও পারিবারিক অশান্তি সমানুপাতিক। ‘’ মানে যত বেশি চ্যানেল তত বেশি অশান্তি। সত্যিই টিভিতে এত চ্যানেল, কিন্তু মানসম্মত অনুষ্ঠান এর মধ্যে কয়টা? প্রায় প্রত্যেকটা টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠানের মাঝ দিয়ে প্রতি ঘণ্টায়, আধা ঘণ্টায় একই খবর বারবার প্রচার করে থাকে। এরই বা মানে কী? যেন প্রতিটা চ্যানেলই একেকটা নিউজ চ্যানেল। অনুষ্ঠান যত না, তার চেয়ে বেশি খবর।

আর খবরের চেয়েও বেশি বিজ্ঞাপণ। তাহলে ভেবে দেখুন, এতগুলো টিভির চ্যানেলে আপনার অনুষ্ঠান আপনি কি আসলেই দেখতে পান? কী আছে এই অনুষ্ঠানগুলোতে? টক শো, তারকাদের আলাপচারিতা, ফ্যাশন সম্পর্কে সচেতনতা সম্পর্কিত অনুষ্ঠান, রান্নার অনুষ্ঠান (যারা এত মন দিয়ে এ অনুষ্ঠানগুলো দেখে থাকেন, পরে ঐ রেসিপি অনুযায়ী কয়টা খাবার নিজেরা তৈরি করেন?), রিয়েলিটি শো, প্রতিভা অন্বেষণের অনুষ্ঠান ইত্যাদি। গান গাইবার প্রতিভা ছাড়া আর তেমন কোন প্রতিভা খুঁজতে দেখা যায় না এই একই ধাঁচের প্রতিভা অন্বেষণের অনুষ্ঠানগুলোতে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুন্দরীদের প্রতিভা অন্বেষণ করা হয়। কিন্তু এ অনুষ্ঠানগুলোতে নারীদেহের প্রদর্শণ ছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু দেখা যায় না।

আবার শিশুদের মাঝে প্রতিভা খুঁজতে গিয়ে তাদেরকে দিয়ে এমন গান গাওয়ানো হয়, এমন ভংগিতে নাচ নাচানো হয়, যা তাদের বয়স উপযোগী নয়। সেসব অনুষ্ঠানের কথা বলা হলো, এগুলোর অনেকগুলোই ভারতীয় অনুষ্ঠানগুলোর দেশীয় সংস্করণ। জানা নেই, কোন মেধাহীনেরা এমন অনুষ্ঠান তৈরি করে থাকেন। এত চ্যানেলের এত অনুষ্ঠানের মাঝে কুইজ, বিতর্ক, বিজ্ঞান বিষয়ক, সাহিত্য বিষয়ক ইত্যাদি অনুষ্ঠান কয়টা হয়? অবশেষে আপনাকে ফিরে যেতে হয় ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে। ভারতীয় অনুষ্ঠানগুলোও যে খুব মানসম্মত তা নয়।

কিছুদিন আগে কৌতুকের একটি অনুষ্ঠান খুবই জনপ্রিয় হয়েছে এদেশে, যদিও সেখানে অনেক কৌতুকই শ্লীল-অশ্লীলের ধার ধারে না। ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি কুটিল সিরিয়ালগুলো হচ্ছে মহিলাদের প্রিয় অনুষ্ঠান। বছরের পর বছর প্রতিদিন এইসব দেখে দেখে তারা নিত্যনতুন কুটনামি শিখছেন, করছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, নাটক দেখে কেউ কুটনামি শিখতে পারে কি না। প্রিয় নাটক, সিনেমার নায়ক নায়িকারা আমাদের মনে প্রভাব তো ফেলেই।

অবচেতনে আমরা তাদের অনুকরণ করি। আর দীর্ঘদিন একই ধরনের নাটক দেখতে দেখতে দর্শকদের রুচিও সেভাবেই তৈরি হয়ে যায়। ফলে এসব নাটকের দর্শকেরা তেমন কুটিলতাগুলো নিজের অবচেতনে করতেই পারেন। কোন দিন যদি একটু ধৈর্য ধরে এসব নাটক দেখতে বসেন, তবে অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনয় দেখতে পান কি না, আমাকে একটু জানাবেন। আমি তো দেখি, তারা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের সাথে তালে তাল মিলিয়ে সারাক্ষণই নানা রকম ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, চোখের এক্সপ্রশন দিচ্ছেন, কোন কারণ ছাড়াই।

কোন কাহিনী নেই, অভিনয় নেই, কিচ্ছু নেই। যাও কিছু কুটনামি দিয়ে পরিচালক ক্লাইমেক্স তৈরির অপচেষ্টা করেন, সেটাও থার্ড ক্লাস। তরকারিতে কেন এত ঝাল হলো, এই সব সিলি বিষয় নিয়ে কুটনামি আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের সাথে ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন!!! তারচেয়ে আমাদের দেশের‘’স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেস্ত’’ মার্কা বাংলা সিনেমা অনেক উন্নত মানের। রিমোট নিয়ে অশান্তির ফয়সালা করতে অনেকেই নিজের ল্যাপটপ বা পিসিতে টিভি কার্ড সংযুক্ত করে ঘরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চান। এসব দেখতে দেখতে আরেকটি পারিবারিক সূত্র আবিষ্কার করে ফেললাম।

২য় সুত্রঃ ‘’কোন পরিবারে একাধিক টিভি, টিভি কার্ড সংযুক্ত ল্যাপটপ বা পিসি থাকলে, পারিবারিক বন্ধন যন্ত্রগুলোর সংখ্যার ব্যস্তানুপাতিক হয়। ‘’ মানে যত বেশি যন্ত্র, তত কম পারিবারিক বন্ধন। কী সব ফালতু ফালতু নাটক আর অনুষ্ঠানের জন্য এতকিছু! ভালো কোন নাটক/ অনুষ্ঠান হলেও না হয় একটা কথা ছিল! এক পরিবার, এক টিভি, এক চ্যানেলের সেই দিনগুলো কোথায় চলে গেল! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।