আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানাডায় ৭০ দিন - ১৮ তম পর্ব

আমার বাবা (তারেক-উল আলম) গত বছর কেনাডা বেড়াতে এসেছিলেন। কেনাডা থেকে দেশে ফিরে একটা বই লিখেছেন – ‘কানাডায় ৭০ দিন’। আজ পড়ুন এর ১৮ তম পর্বঃ লন্ডনে রবীন্দ্রনাথ কানাডার বাঙালি সমাজ পরস্পরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো একটা রেওয়াজে পরিণত করেছে। তদুপরি বাংলাদেশ থেকে কারো কোন আত্মীয় বিশেষ করে বাবা- মা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী বেড়াতে এসেছেন জানতে পারলে তো কথাই নেই, বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে। এখানে সবাই যে একে অন্যের আপন, একান্ত আত্মীয় ! বিদেশে না এলে এ ব্যাপারটি বোঝার উপায় নেই।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ দুপুরে নুরুন নবীর বাসায় আমাদের নিমন্ত্রণ। নুরুন নবী শুভর বন্ধু এবং সহকর্মী। ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে চলে যাচ্ছে আলবার্টা ইউনিভার্সিটিতে-- পিএইচডি করতে। দাওয়াত না নিলে মনে কষ্ট পাবে। আমাদের সাথে টিটু দম্পতিও ছিলো।

টিটু বুয়েটের শিক্ষক। ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক। খাওয়া দাওয়ার পর আমরা সবাই গেলাম ডানডাস স্ট্রীটে। সেখানে লন্ডন পাবলিক লাইব্রেরী হলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জম্ম বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত উৎসবে। আজ লন্ডন নিবাসী বাংলাদেশী এবং ভারতীয়রা রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করবে, শ্রদ্ধা নিবেদন করবে তার অমর সৃষ্টির মাধ্যমে--তার কবিতায়, গানে, নাটকে।

কাবুলিওয়ালা মঞ্চায়ন হবে। বাংলা, হিন্দী এবং ইংরেজী--এই তিন ভাষায় শ্রদ্ধা নিবেদন হচ্ছে। মূলতঃ ভারতীয়রাই উদ্যোক্তা। দর্শক অধিকাংশই ভারতীয় এবং বাংলাদেশি। কানাডিয়ান দর্শক শ্রোতাও রয়েছে কিছু।

লন্ডন পাবলিক লাইব্রেরীর Wolf Performance Hall। হল পূর্ণ দর্শক। আমরা দোতলার মাঝামাঝি স্থানে আসন নিলাম। ধ্রুব-র দুই মাস বয়স--সেও দর্শক হয়ে গেলো তার জীবনের প্রথম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ! তাও রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা নিবেদনে ! দাদির কোলে বসে ধ্রুব। পাশে শুভ ও লুসি।

অন্যপাশে টিটু দম্পতি। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে ঘন্টা খানেক পূর্বেই। আমরা দেরীতে আসায় অনুষ্ঠানের বেশ কিছু অংশ মিস করেছি। এখন গান হচ্ছে। ‘ঘরেতে ভ্রমর এলো গুন গুনিয়ে,’ গাইছে ত্রিনা চক্রবর্তী--ভারতীয় গায়িকা।

তার মোহনীয় কন্ঠের সুরে হলে নেই পিন পতনের শব্দ। সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছে। এরপর একে একে ‘আমি চিনিগো চিনি তোমারে’ ‘সাথী মোর রজনী, পুরানো সেই দিনের কথা, ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে’ ইত্যাদি বহ শ্রুত ঠাকুরের জনপ্রিয় গানসমূহ। এসব গান যতোই শুনি ততোই ভালো লাগে, ততোই মুগ্ধ হই। মনে হয় প্রতিবারই নতুন শুনছি।

রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির আবেদন বাঙালি হৃদয়ে চির শাশ্বত, চিরজাগ্রত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি হৃদয়ে চির অমর। বিরতির পর ‘কাবুলিওয়ালা’ মঞ্চায়ন হলো ইংরেজী ভাষায় অনুদিত হয়ে। পরিচালনায় ছিলেন নীলা চঞ্চলকার। বাবার ভূমিকায় অজয় মাইশুর, শিশু মিনির ভূমিকায় পূর্নিমা এবং রহমানের ভূমিকায় সাইলেন্দ্ররের অভিনয় দর্শক মুগ্ধ করেছে।

এরপর আবার ত্রিনা চক্রবর্তীর কন্ঠে, ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি’ গানটি। লন্ডন ড্রিমসের শিল্পীদের ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারা’ গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য সবাইকে মুগ্ধ করেছে। এরপর ‘ পরান চাই চক্ষু না চাই,’ গানের সঙ্গে শিল্পী ভিলোরী এবং ‘আনন্দ ধারা বহিছে ভূবনে’, ‘ওরে গৃহবাসি’ গানের সাথে সমবেত নাচ দর্শক শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়েছে। কিছুক্ষনের জন্যে আমরা ভুলে গেলাম আমরা বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে ! একটি ভিনদেশের রঙ্গমঞ্চে আমরা রবীন্দ্রনাথকে দেখছি, তার সৃষ্টিকে দেখছি ! যেখানে বাংলাদেশি থাকবে, যেখানে বাঙালি থাকবে, যেখানে ভারতীয়রা থাকবে সেখানে রবীন্দ্রনাথ থাকবে ! রবীন্দ্রনাথ মানুষের হৃদয়ের মাঝে, মানুষের আত্মার মাঝে ! শিল্পীরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন রাজ্যের। বাংলাদেশের ও দুই চারজন ছিলো।

এরা প্রায় সবাই কানাডার ইমিগ্র্যান্ট--লন্ডনে বসবাসকারি। পরিশেষে ভারত, বাংলাদেশ এবং কানাডার জাতীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হলো। উল্লেখ্য, ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রচয়িতা কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরম আনন্দ এবং প্রশান্তিতে বাসায় ফিরলাম। (ক্রমশ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।