আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিন্তার গভীরে...

দুই দেশপ্রেমিক বন্ধুর মাঝে একটি কাল্পনিক কথোপকথন নিয়ে শুরু করি... ১ম বন্ধু : দোস্ত, এই দেশের কোন উন্নতি হইব না। এই দেশ যারা চালায় তারা সবাই অমানুষ, দূর্নীতিবাজ। ২য় বন্ধু : হতে পারে, তবে আমরাও খুব বেশি ভাল না। ১ম বন্ধু : কি বলিস? আমাদের হাতে দেশ চালানোর ক্ষমতা দিলে দেশটাকেই বদলে দিতাম। ২য় বন্ধু: হুম।

হতে পারে... যাইহোক, তুইতো ইন্টার্নি করছিস। কিছুদিন পরেই পরিপূর্ণ ডাক্তার হবি। তুই তোর জায়গা থেকে দেশের জন্য অনেক কিছুই করতে পারবি। ১ম বন্ধু : সম্ভব না, কিছুই করা সম্ভব না। পুরা সিস্টেম টাই নষ্ট হয়ে গেছে।

এই সিস্টেম-এ কিছুই করা যাবে না। ২য় বন্ধু : কেন? ১ম বন্ধু : যেমন ধর, আমি মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে খ্যাপ মারতে যাই। কিছু ক্লিনিক আছে, যেখানে রোগীর কোন রোগ না থাকলেও নানাভাবে ক্লিনিকে আটকে রাখে। নানাভাবে টাকা বের করে রোগীর কাছ থেকে। এইসব ক্লিনিক গুলা চালায় আবার হর্তা-কর্তা ব্যক্তিরা।

এদের বিরুদ্ধে কিছু করাও সম্ভব না। ২য় বন্ধু : এইসব ক্লিনিকে না গেলেইতো পারিস। তোদের মত সবাই এইসব ক্লিনিকগুলোতে সার্ভিস না দিলেইতো হয়। ১ম বন্ধু : আরেহ তা কি সম্ভব। ডাক্তারা তাহলে পেট চালাবে কি করে? ইন্টার্নি থেকে কিংবা সরকারী হাসপাতালে কাজ করে যা পাওয়া যায় তাতে কি এই বাজারে চলা সম্ভব? ২য় বন্ধু : দোস্ত, আমারতো মনেহয়, ডাক্তাররা কিছু না করে, জাস্ট গ্রামে গিয়ে ৫০টাকা ভিজিটে রোগী দেখলেও মাসে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা কামাতে পারবে।

১ম বন্ধু : কি বলিস তুই? ৫-৬ বছর এত কষ্ট করে মেডিকেল-এ পড়লাম কি মাসে ২০হাজার টাকা কামাবো বলে? তারপর, গ্রামে থাকলে, আমার বাচ্চাকাচ্চারা ভাল স্কুল-কলেজ-এও পড়তে পারবে না। ২য় বন্ধু : কেন? ২০হাজার টাকাতে কেউ কি চাকরী করে না? কেউ কি গ্রামে থাকে না? ১ম বন্ধু : দোস্ত, এইসব নীতি কথা বলে লাভ নাই, বাস্তবতা অনেক কঠিন। আমার সহপাঠীরা সবাই অনেক টাকা কামাবে, গাড়ী-বাড়ি করবে। আমি কি এসব তাকাইয়া তাকাইয়া দেখব? ২য় বন্ধু : হুম। তোকে তাহলে কিছু প্রশ্ন করি।

আচ্ছা আমাদের দেশে একজন এমপি-র বেতন কত হবে? ১ম বন্ধু : কত আর? ৩০-৪০হাজার। ২য় বন্ধু : তুই জানিস, একজন এমপি যখন ইলেকশান-এ জিতে তখন কর্মীদের মিস্টি খাওয়াতেই তার লাখ খানেক টাকা যায়। তারপর এমপির ছেলেপুলেরাতো আর যেখানে সেখানে পড়ালিখা করতে পারে না। তারপর এমপির বউতো যে-সে জামাকাপড় পড়ে বের হতে পারে না। দামী শাড়ী-গহনা লাগবে।

দামী গাড়ী লাগবে... তার স্ট্যাটাস বজায় রাখতে আরো নানা কিছু লাগবে তার... এখন এতো টাকা কিভাবে সে জোগাড় করবে? নিশ্চয়ই দূর্নীতি করে? ১ম বন্ধু : হা, কিন্তু তুই এসব কথা কেনো বলছিস? ২য় বন্ধু: বললাম এই কারনে যে, তুই বলেছিস “এই দেশ যারা চালায় তারা সবাই অমানুষ, দূর্নীতিবাজ”। আমি শুধু বলতে চাই, তোর আর আমার মতো মানুষরাই দেশটা চালাচ্ছে। আমরা সুযোগ পেলেই অন্যের দোষ দেই, কিন্তু আমরা নিজেরাই দোষের উর্দ্ধে না। যে যার সুযোগ মতো স্বার্থস্বিদ্ধি করছে,কিন্তু দোষ দিচ্ছে সিস্টেমকে। ১ম বন্ধু : তুই উল্টা-পাল্টা তুলনা আনছিস... ...এমপি মিনিস্টারের সাথে কি সাধারন মানুষের তুলনা হয়?... ... ... … … … এটি ছিল একটি কাল্পনিক কথোপকথন।

এখানকার চরিত্র, তথ্য ও সংখ্যাগুলো আমার মনগড়া। কিন্তু হয়তো আমি যে ব্যাপারটিকে তুলে আনতে চেয়েছি সেটি অসত্য নয়। আমাদের অনেকের মনেই দেশপ্রেমের অন্ত নেই। দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছার কমতি নেই। আমরা অনেকেই চাই দেশটাকে বদলে দিতে, নষ্ট সিস্টেমকে লাইন-এ আনতে।

... কিন্তু মনের অজান্তে অন্যায়কে আকঁড়ে ধরে আমরা সেই নষ্ট সিস্টেম-এর অংশ হয়ে যাই। অতঃপর সেই সিস্টেমকেই দোষারোপ করতে থাকি। এই চক্র চলছেই,আর চলতেই থাকবে যতদিন না আমরা আত্ম-উপলব্ধি করব। আমাদের ছোট ছোট অন্যায় জমাট বেধেঁই আমাদের পুরো সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। আমরাই ঘুষ দিয়ে পুলিশ বা কাস্টমসে চাকরি জোগাড় করি, ঘুষ খেয়ে বড়লোক হবার আশায়।

আমরাই আমাদের বাচ্চাদের ডোনেশন বা সুপারিশ এর মাধ্যমে ভাল স্কুল-কলেজে ভর্তি করাই, স্ট্যাটাস বাড়াবার আশায়। ...কয়জন বাড়িওয়ালা বকেয়া বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিল ঠিক-ঠাকভাবে পরিশোধ করেন? কয়জন শিক্ষক ক্লাস-এ ভাল ভাবে পড়ান? কয়জন প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ রেখেছেন? আর কয়জনই-বা প্রাইভেট পড়ানো থেকে আয় করা টাকার আয়কর দেন? ... আমরা কয়জন ট্রাফিক রূল মানি? আমরা কয়জন যত্রতত্র ময়লা-থুতু ফেলি না? ... একজন এসে আমাদের এই দেশটাকে বদলে দিবে না, দেশটা তখনই বদলাবে যখন দেশের মানুষগুলো বদলাবে... যখন আমরা ছোটখাট স্বার্থের কথা ভুলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াঁব সেদিনই অন্যায় নিশ্চিন্ন হবে। হয়তো এসব বলে ফেলা সহজ, আর করে দেখানো ততটাই কঠিন। তবু একজন দুজন করে শুরু করতে হবে, হয়তো হঠাৎ করে কোন পরিবর্তন আসবে না, হয়তো অনেক ছাড় দিতে হবে... তবু বিবেকের কাছে পরিশুদ্ধ থাকা যাবে... হয়তো একদিন আমাদের নষ্ট সিস্টেমটা বদলাবে...। [ আমার এই লিখা কাউকে ছোট করতে বা কারো দোষ আড়াল করতে নয়।

এটি শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের মূল্যবোধ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত চিন্তার বহিঃপ্রকাশমাত্র] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।