আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতে ইসলাম ও আমেরিকা

'ইসলাম ও আমেরিকা' নামে একটা বই লিখেছিলেন বিশিষ্ট বামপন্থী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ ও লেখক গোলাম সামদানী কোরাইশী। সেখানে দেখানো হয়েছিল সাপ যেমন ব্যাঙ গিলে খায়, শিয়াল যেমন মুরগির বাচ্চা থাবা মেরে মুখে পুরে নেয়, বড় মাছ যেমন ছোট মাছ গিলে খায়, তেমনি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে পাগড়ি আচকান সমেত আমেরিকা তার থাবার মধ্যে আটকে রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্য মানে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান থেকে, সর্বপ্রকার আধুনিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন মধ্যযুগীয় রাষ্ট্র। সেখানে আমেরিকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সাপ্লাই দিয়ে সমস্ত ভূস্বামী, ভোগবিলাসী রাজা-বাদশাহদের সেবা-যত্ন করে থাকে। তার বিনিময়ে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের তেলের খনি, স্বর্ণের খনি দখল করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও স্বর্ণ বিক্রির টাকা আমেরিকার ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছে। আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান দ্বিমুখী আচরণে শিক্ষিত হয়ে চিন্তাশীল লেখক কোরাইশীর অনুকরণে কলামটির নাম দিয়েছি 'জামায়াতে ইসলাম ও আমেরিকা'। মার্কিন মহাপ্রভুরা জামায়াতে ইসলামের মতো কেটি ফ্যাসিবাদ, ধর্মান্ধ, জঙ্গি সংগঠনকে বলে কিনা 'মডারেট ইসলামী' দল। ৩০ লাখ মানুষের জীবন দিয়ে আধুনিক, সেক্যুলার দৃষ্টিতে যে রাষ্ট্রের জন্ম, যাকে বলা চলে জাতি রাষ্ট্র এবং ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র তাকেও মার্কিন মহাজনরা 'মডারেট ইসলামিক দেশ' বলে থাকেন। ভারত উপমহাদেশে এক সময় সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে রাজনীতিকে মহা জটিল করেছিল বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ, বৃটিশ সিংহ লেজ গোটানোর পর এখন মার্কিন সুদখোর মহাজনরা সমগ্র এশিয়ার রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।

তাছাড়া এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না প্রাচ্যে, মধ্যপ্রাচ্য বা সমগ্র তৃতীয় বিশ্বের কোথাও প্রগতিশীল মানবিক ভূমিকা রেখেছে মার্কিন মহাশক্তিধররা। পৃথিবী নামক গ্রহের প্রতিটি সভ্য মানুষ মনেপ্রাণে খুশি হতো যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর সুবিচার করত। বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত ইসলাম, বরাবর তারা অমানবিক জঙ্গি ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে বিএনপির প্রশ্রয় প্রাপ্ত জামায়াত ইসলামের এক ধরনের চূড়ান্ত পর্যায়ের সংঘাত লেগেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের যত সীমাবদ্ধতাই থাক না কেন যুদ্ধাপরাধের বিচারটা সম্পন্ন করার দায়িত্বটা তাদেরই নিতে হয়েছে।

এটা কত বড় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ তা আমরা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখতে পাচ্ছি। যে বাংলা ভাই ও শায়খ রহমানদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের আক্রোশ বর্তমান সরকারের ওপর, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের সমর্থকদের আক্রোশ এ সরকারের ওপর। ২১ আগস্ট ও ১৭ আগস্টের ঘটনা যারা ঘটিয়েছিল তারা অবশ্যই জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যারা এনজিওর ব্যবসা করে বছরে ১২শ' কোটি টাকা আয় করে, যাদের নিজস্ব ব্যাংক, বীমা ও বিভিন্ন লগি্ন পুঁজি তথা প্রত্যক্ষ সুদের ব্যবসা আছে, তারা সর্বশক্তি দিয়ে বর্তমান সরকারকে প্রতিরোধ করছে। তারা প্রতিটি মুহূর্তে সার্বভৌমত্ববিরোধী কার্যকলাপ করে যাচ্ছে, সেটাকে চ্যালেঞ্জ করছে, রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রত্যাখ্যান করছে।

২৮ নভেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে জামায়াত নেতা মজিবর রহমান দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে পরোক্ষভাবে হত্যার হুমকি দিয়েছে। দেশে সত্যিকার অর্থে একটা অঘোষিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। জামায়াত বাংলাদেশে এককভাবে হরতাল ডাকার স্পর্ধা দেখিয়েছে। হরতাল পালনের নামে তারা ৪ ডিসেম্বর সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে, যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এমন একটি ফ্যাসিবাদী দলের পক্ষে সুপারিশ করার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাসহ মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সচিবালয়ে গেছেন সুপারিশ করার জন্য।

প্রস্তাব দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে সংলাপে বসার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি মার্কিন দূতাবাসের দুতিয়ালি প্রত্যাখ্যান করে দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন, চোর-ডাকাত-খুনি-স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রশ্নই ওঠে না। আন্দোলনের নামে হঠকারিতা এবং জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর করতে গিয়ে পুলিশের হাতে মার খাওয়া জামায়াতি ক্যাডারদের জন্য ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৪ ডিসেম্বর জামায়াতের ক্যাডাররা হরতাল পালনের নামে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে পুলিশ বাহিনীকে বেসামাল করে দিয়েছে। হামলার এক পর্যায়ে তারা মার্কিন দূতাবাসের গাড়ি ও হামলা করেছে।

গাড়ির চালক আহত হয়েছে। এর পরদিন ৫ তারিখের পত্রিকায় দেখলাম, জামায়াত ইসলামের পক্ষ থেকে মার্কিন দূতাবাসের কাছে বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। এমনকি ক্ষতিপূরণ দেয়ারও আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সুবোধ বালক একেই বলে। অথচ আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়িতে নিম্নস্তরের গু-াদের মতো জামায়াতিরা হামলা চালিয়েছে, তার জন্য সামান্যতম দুঃখ প্রকাশ করেনি।

আমরা জানি, সাম্রাজ্যবাদ আর সাম্প্রদায়িকতাবাদ মাসতুত ভাই; ১৯৭১ সালের ৩০ লাখ মানুষ হত্যাকারী, দু'লাখ মা-বোনের ইজ্জত হরণকারীরা মার্কিনের সমর্থন পেয়েছিল। ভেবেছিলাম ইতিহাসের উত্থান-পতনের প্রেক্ষিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দৃষ্টিভঙ্গির নূ্যনতম পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু না, তারা তাদের প্রয়োজনে লাদেন ও তালেবানদের বড় করে, আদর করে শক্তিশালী করে তুলেছিল। কম্যুনিস্ট নিধন শেষ হওয়ার পর তারাই আবার তালেবান উৎখাতের নামে আফগানিস্তানকে একটি কবরের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। পাকিস্তানকে বাধ্য করছে তালেবান উৎখাত করতে। পাকিস্তান এখন তাদের একটি চাকর রাষ্ট্র।

পাকিস্তানে এখন চলছে ড্রোন হামলা। ইরাকে তো মার্কিনিরা সম্পূর্ণ গায়ের জোরে অযৌক্তিকভাবে হামলা চালিয়ে দখল করেছে। ওখানেও কবরের নিস্তব্ধতা চলছে। মার্কিনিদের সহযোগিতায় পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, এমন নজির আছে নাকি? মিয়ানমারের মতো একটি ক্ষুদ্র, হাতের তালুর মতো রাষ্ট্রকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধমক দিলে ভয়ে চুপসে যাবে, সে রাষ্ট্রে চলছে বছরের পর বছর সামরিক শাসন। সে রাষ্ট্রের রাখাইন প্রদেশে সামরিক জান্তা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উৎখাত করছে।

সেসব তাড়া খাওয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে নানা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা- চালাচ্ছে, সরকারবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে এবং জামায়াত-বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে। গোপনে গোপনে তারা জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সশস্ত্র জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হচ্ছে। এ জঙ্গি রোহিঙ্গাদেরও সমর্থন দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিবর্গ। এ সবের তাৎপর্য কী? বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর সূক্ষ্ম ধারালো মার্কিনি আক্রোশ থাকা বিচিত্র কিছু নয়। ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের কাছেই পরাজিত হয়েছিল মার্কিন মহাশক্তি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় বসেই দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন ভিয়েতনাম ও ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনকে বাংলাদেশে দূতাবাস খোলারও ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এটা ছিল বিরল সাহসের ব্যাপার। এসব কি আর মার্কিনিরা মনে রাখেনি? বিশ্বনেতা ইয়াসির আরাফাত তো বঙ্গবন্ধুকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচয় দিতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কন্যা বলে পরিচয় দিতেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানে, শেখ হাসিনার যতই সীমাবদ্ধতা থাক, বাংলাদেশকে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর একাগ্রতার ক্ষেত্রে তার কোনো রকম উদাসীনতা বা খুঁত নেই; তাই হয়তো শেখ হাসিনা তাদের গুড বুকে নেই। মার্কিনিদের মূল টার্গেট হচ্ছে, বাংলাদেশে যদি জামায়াতসহ ইসলামী জঙ্গিদের উত্থান ঘটে তাহলে যে কোনো উছিলা ধরে তারা বজ্র হুঙ্কার দিয়ে এ দেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আখ্যা দিতে পারবে। তারা সেই সুযোগই খুঁজছে Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.