আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজয় দিবসের ভাবনা

থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি। আমাদের ছোট বেলাটা কেটেছিল বাঙলাদেশ স্বাধীন হবার কয়েক বছরের ভেতরে। সে যে কেমন দিন ছিল, যাদের সেই দিনগুলিতে থাকার সুযোগ হয় নাই, তারা জানতেও পারবে না। আজকে যারা ব্লগে দুই-তিনটা ব্লগ লেখে আর মুক্তিযোদ্ধাদের সমান তালে গালি দেয় ভারতীয় দালাল বলে, তাদের আসলেই সেই দুঃসহ দিনগুলোতে বসবাস করে আসা উচিত বলে আমি মনে করি। আর আজকে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের কেউই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক সেনা বা তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নির্যাতিত হয় নাই।

যদি তাদের কেউ না কেউ সেই নির্যাতনের শিকার হত, তাহলে আজকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের তারা জন্য গলা ফাটিয়ে দিত। বলতে খারাপ লাগছে, এই পিশাচগুলোকে রক্ষা করার জন্য কিছু লোক ঊঠে পড়ে লেগেছে এখন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মানুষ নামের পিশাচগুলো তাদের ভুল আজও স্বীকার করে নাই। একদল লোক সে সময় আমাদের কানে কানে বলত মুক্তিযুদ্ধ আর মুষ্ঠিযুদ্ধ – এই দুইটা শব্দ। স্কুলে যেতাম, তখন কিছু কিছু বড় ভাইয়েরা আমাদের এই সব কথা বলত।

বুঝতাম না কিছুই। উলটা মজাই লাগত। কেননা সে সময়ে মোহাম্মদ আলী বলে এক কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ বক্সিং-এ দুনিয়া জোড়া খ্যাতি লাভ করেছে। সেই মোহাম্মদ আলী যা খেলতেন, তার বাংলা নাম ছিল “মুষ্টিযুদ্ধ”। সেই সময়টা কিন্তু পচাত্তরের করুণ অধ্যায়ের কয়েক বছর পরের কথা।

সে সময়ে খান এ সবুর নামের এক লোকের নামে অনেক খারাপ খারাপ কথা শুনতাম – লোকটা না কি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানুষ মেরেছে, মানুষের উপরে অত্যাচার করেছে, লুটপাট করেছে, ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিয়েছে ইত্যাদি। সেই সাথে আরো অনেকের নাম শোনা যেত। আরেকটা নাম শুনতাম! সেই লোক নাকি এমনই বাঙলাদেশ বিরোধী ছিল যে সে দেশ স্বাধীনের পরে এই দেশ থেকেই পালিয়ে গিয়েছিল। তার নাম না কি গোলাম আযম! বহুদিন পর্যন্ত তার বাঙলাদেশে ঢোকা নিষেধ ছিল। এরশাদ সাহেবের শাসন আমলে মনে হয় এই লোকটা পাকিস্তান থেকে এ দেশে আসে, তাও টুরিস্ট ভিসায়।

বেশিদিন থাকতে পারে নাই, চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। সেই লোকটা বিদেশে থাকবার সময়ে জামাতের নায়েবে আমীর ছিল আব্বাস আলি খান। আমার জ্ঞানের সীমা অতটুকুই ছিল যে আমি ভাবতাম জামাত নামের দলটির প্রধানকে বোধহয় নায়েবে আমীর বলে। সেই সময়ে শুনেছি নিযামি-কামরুজ্জামান-কাদের মোল্লা-সাকা ইত্যাদি লোকদের নামে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন কীর্তির কথা। এরা নাকি ১৪ ডিসেম্বর বিশিষ্ট কিছু লোকদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল।

সবই শোনা কথা। তবে অনেক লোক যে সব কথা বার বার বলে, তার থেকে কিছু না কিছু সত্য বলে ধরে নেওয়া যায়। আমার মনে সে সময় থেকেই এই লোকগুলোর প্রতি একটা ঘেন্না ধরে আছে। এর কিছু দিন পরে একটা বই পড়ি, যেটার নাম ছিল "মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়"। আমাদের সেই ছোট বেলায় শোনা একটা কথা এখনও খুব মনে পড়ে।

কোন বিপ্লব বা মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশ শত্রুমুক্ত হলে দেশ বিরোধীদের ধরে ধরে মেরে ফেলা হয়। কিন্তু কানের ভেতরে ফিস ফিস করে মুক্তিযুদ্ধকে-মুষ্ঠিযুদ্ধ-বলনেওয়ালারা বলত যে সেই রকমের [বিপ্লব বা মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশ শত্রুমুক্ত হলে ] ঘটনার পরে মুক্তিযোদ্ধাদের মেরে ফেলা হয়। আমার কাছে সেই সময়ের ক্ষুদ্র জ্ঞানে এই কথাটা পছন্দ হত না। যারা দেশের জন্য জান বাজি রাখল, তাদের কেন মেরে ফেলা হবে? আসলে "খলের ছলের অভাব হয় না"। আল্লাহর কাছে সেই ছোট বেলা থেকেই বলতাম, আল্লাহ এই সব খারাপ লোকেরা যেন আমাদের দেশে না থাকতে পারে।

তাদের তুমি শাস্তি দিয়ো। জানি না পিশাচদের কোন সাজা হবে কি না। কিন্তু বাংলার মানুষের অভিশাপ থেকে তারা বাঁচতে পারবে না। সেই অভিশাপ তাদের পরকালেও ধাওয়া করবে। আজকে যারা এই পিশাচদের পক্ষে কথা বলে, তাদের জন্য আসলেই আমার দুঃখ হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.