আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রকৃতির এক রহস্য বারমুডা ট্রাইঙ্গেল

এই লেখাটি দবিতীয়বারের মত পোস্ট করা হল। এবার আরও কিছু ব্যাখ্যা ও ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি অনেক কাঁচা লেখক। তারপরও আশা করি সবার ভাল লাগবে। ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।

পৃথিবীতে মানুষের পদচারণা শুরু হয়েছিল সেই অনেক বছর আগে অর্থাৎ হোমো সেপিয়ান্সদের রাজত্ব শুরু হয়েছে বহুকাল আগে থেকেই। তারপর আর থেমে থাকে নি মানুষ। ধীরে ধীরে জয় করেছে পৃথিবীকে, রহস্য উদঘাটন করেছে প্রকৃতির। কিন্তু প্রকৃতির অনেক রহস্য এখনও অজানা রয়ে গেছে। এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে আজ পর্যন্ত মানুষের কোনো পদচিহ্ন পড়ে নি।

সেই রকম রহস্যময় জায়গাগুলোর মধ্য অন্যতম একটি “বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল”। আটলান্টিক মহাসাগরে যার অবস্থান। নাম থেকেই বোঝা যায় এর আকার ত্রিভুজের মত। কিন্তু অনেকের মতে এটি দেখতে ট্রাপিজিয়ামের মত; যা ছড়িয়ে আছে স্টেট অব ফ্লোরিডা, বাহামা, মেক্সিকো হয়ে পূর্ব দিক দিয়ে আটলান্টিক অঞ্চলজুড়ে। কিন্তু বেশিরভাগ ভু-তত্বব্বিদদের মতে এর অবস্থান পুয়ের্তো রিকো হতে বারমুডা এবং সেখান থেকে পশ্চিমে স্টেট অব ফ্লোরিডার পূর্ব উপকূল জুড়ে।

যার আকৃতি দেখতে ত্রিভুজের মতো। অনেকে এটাকে ‘Devil’s triangle’ বা ‘শয়তানের ত্রিভুজ’ বলে থাকে। কোনো অজ্ঞাত কারণে এর সীমানার মধ্য প্রবেশ করা অনেক জলযান এমনকি উড়জাহাজও হারিয়ে গেছে চিরতরে। যাদের কোনো হদীস আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় নি। বর্ণণাকৃত জায়গাটির আবস্থান মূলত জলভাগের উপরেই।

অর্থাৎ স্থলভাগের উপর যেসব অঞ্চল পড়েছে সেইসব জায়গায় কখনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। এই ত্রিভুজ সম্পর্কে প্রথম বর্ণণা দেন ক্রিস্টোফার কলোম্বাস ১৪৯২ সালে। তার বর্ণণায় এসেছে যে, তিনি দিগন্তে অদ্ভূদ আলোর নাচানাচি এবং আকাশে ধোয়া দেখতে পান। তা ছাড়া ঐ অঞ্চলের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় তার কম্পাস উল্টা পাল্টা নির্দেশনা দিচ্ছিল। তারপর ‘ফ্লাইট নাইন্টিন’ এর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে ই. ভি. ডব্লিউ জোন্স – এর ১৯৫০ সালে লেখা একটি রিপোর্টের মাধ্যমে বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের কাহিনী সবার সামনে উঠে আসে।

এর রহস্য নিয়ে অনেক আজগুবী কাহিনীও রচিত হয়েছে। এসব কাহিনী জন্ম দিয়েছে রহস্যের। আর সেই রহস্যে আজও ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষ। কেউ মনে করে সেখানে ভিন গ্রহের প্রাণী অর্থাৎ এলিয়েনদের কোনো আস্তানা রয়েছে। এলিয়েনরা বহু বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিল এবং সেখানে আস্তানা গেরেছে।

বাইরের সভ্যতা থেকে নিজেদের এলাকাকে তারা সুরক্ষিত রাখতে চায়। যার ফলে সেখানে কোনো মানুষ বা যান প্রবেশ করতে পারে না। এমনও হতে পারে সেখানে আছে ফোর্থ ডাইমেনশনাল ক্র্যাক বা চতুমাত্রার ফাটল। আমাদের পরিচিত জগৎ তিন মাত্রার – দৈর্ঘ, প্রস্থ এবং উচ্চতা। সাথে সময় যোগ করলে সেটি হবে চর্তুমাত্রা বা ফোর্থ ডাইমেনশন।

সেই ফোর্থ ডাইমেনশনে হয়তো কোনো ফাটল বিদ্যমান যার ফলে সেখানে কোনো কিছু প্রবেশ করলে তা সময়ের গহ্বরে হারিয়ে যায়। কেউ আবার মনে করে সেখানে রয়েছে এক অজানা সভ্যতা। যে সভ্যতা বহু বছর ধরে সেখানে টীকে আছে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে। সেই অজানা সভ্যতায় মানুষের প্রবেশ নিষেধ। এগুলো হল সব আজগুবে গল্প।

এসব নিয়ে অনেক লেখকও লিখেছেন কাহিনী। তাদের মধ্যে ভিনসেন্ট গডিস –এর ‘ Invisible Horizon ‘, জন ওয়ালেন্সের ‘Limbo of the lost’ , রিচার্ড উইনারের ‘Devil’s island’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। চলুন এবার আসা যাক আসল রহস্যের দিকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কার কথা - ফ্লাইট নাইন্টিন, ইউ. এস. নেভীর একটি ফ্লাইং স্কোয়াড। ইউ.এস. নাভাল ফোর্স নিয়মিত প্রশিক্ষণ করত মিয়ামি থেকে ফ্লোরিডার আকাশ সীমার মধ্যে।

একবার ফ্লাইট নাইন্টিন স্কোয়ার্ড তাদের প্রশিক্ষণ মিশন শেষ করে মিয়ামি এয়ার বেস রওনা দিয়েছিল ফ্লোরিডার উদ্দেশ্যে। আকাশ পরিস্কার ছিল এবং কোনো মেঘ ছিল না। কিন্তু একটু পরেই তারা সিগন্যাল পাঠালো যে তারা হারিয়ে গেছে। তারা নীচে কিছুই দেখতে পারছে না। সিগন্যালেও কিছুটা সমস্যা হতে লাগল।

এক সময় বার্তা পাঠানো বন্ধ হয়ে গেল। আর যোগাযোগ করা সম্ভব হল না। তারপর হঠাৎ একটি বার্তা ভেসে আসে স্কোয়াড ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে – “We don’t know where we are, water is green and there is no white”. “আমরা জানি না আমরা কোথায় আছি, পানির রঙ সবুজ এবং কোথাও কোনো সাদা নেই”। কথাটার মর্মবাণী উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। ওটাই ছিল ফ্লাইট নাইন্টিন থেকে পাঠানো শেষ বার্তা।

এরপর চিরতরে অদৃশ্য হয়ে যায় ফ্লাইট নাইন্টিন স্কোয়াড। অনেক খোজাখুজির পর তাদের ধ্বংসাবশেষও খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় নি। আরেকটি ঘটনা। একদিন সান জুয়ান থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি যাত্রীবাহী প্লেন ‘ডগ্লাস ডি. সি. – ৩’ একইভাবে হাড়িয়ে যায়। সেই প্লেনে ৩২ জন যাত্রী ছিল।

এয়ারপোর্ট থেকে ছাড়ার পর কিছুক্ষণ আকাশে উড্ডয়ন করে। তারপর হঠাৎ প্লেনের ব্ল্যাক বক্স থেকে “ও.কে.” সিগন্যাল আসা বন্ধ হয়ে যায়। তারা ককপিটের সাথে যোগাযোগ হাড়িয়ে ফেলে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর তারা বার্তা পাঠাতে সক্ষম হচ্ছিল। এমনকি সমুদ্র তীর থেকেও প্লেনটাকে দেখা যাচ্ছিল।

সবাই দেখতে পারছিল বিমানটি দিশেহারা হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে এদিক ওদিক। এভাবে ত্রিশ মিনিট এলোপাতাড়ি চক্কর দিতে দিতে সবার চোখের সামনে থেকেই হাড়িয়ে যায় বিমানটি। শুধু বিমান নয় অনেক নৌযানও হারিয়েছে এখানে। ‘মেরি সিলেস্ট’ নামের একটি জাহাজ। যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করত।

এটির রুট ছিল নিউইয়র্ক বন্দর থেকে ইউরপে। ১৯২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে যাত্রী আর মালামাল নিয়ে রওনা দিল ভেনিস থেকে নিউয়র্কের উদ্দেশ্যে। বাহামা দীপপুঞ্জ পার হল। তারপর টেলিগ্রাফে বার্তা পাঠানো বন্ধ করে দিল। যাত্রীদের স্বজনেরা নিউয়র্কের বন্দরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।

কিন্তু “মেরি সিলেস্ট” আজও বন্দরে ফেরে নি। সমুদ্র কী তবে গিলে ফেলল তাদের ? এবার রহস্য পানির নিচেও। এস.এস. স্করপিয়ন ২৭৮ একটি মার্কীন সাবমেরিন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এটি প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানিস নাবিকদের জন্য একটি ভীতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল। গভীর পানির মধ্য দিয়ে ২০-২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে ছুটে চলতে পারত।

দ্রুত শত্রুর জাহাজকে আক্রমণ করে আবার পালিয়ে আসতে পারত। বেশ কয়েকটি জাপানিস যুদ্ধজাহাজ এটি একাই ঘায়েল করে। সমুদ্রে ডেপথচার্জার ফাটিয়েও কোনো কাজ হতো না। কারণ সে তখন নেমে যেত গভীর সমুদ্রে যেখানে ডেপথচার্জারের কোনো প্রতিক্রিয়া থাকে না। আটলান্টিক মহাসাগরেও ‘নাৎসি’ সাবমেরিন আর যুদ্ধজাহাজগুলো এস.এস. স্করপিয়ন এর জন্য সামনে আগাতে পারত না।

১৯৪২ সালে ৩রা জুন কয়েকটি জাপানিস মালবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দেয় এস.এস. স্করপিয়ন। জাপানিস ডেস্ট্রয়ারগুলো থেকে অনেকগুলো ডেপথচার্জার ছোড়া হয় কিন্তু তাকে ঘায়েল করা সম্ভব হয় নি। অবশ্য পানির নিচে বিস্ফোরণে প্রচন্ড আলোড়নের ফলে তার ট্রান্সমিটারটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সন্ধ্যার দিকে মিড ওয়ে ঘাটিতে ফিরে এলো। মেরামত শেষে ১৩ অক্টোবর আবার পার্ল হার্বার থেকে যাত্রা শুরু করে।

একটি জাপানিস জাহাজ তারা করতে করতে ট্রাইএঙ্গেল সীমানার মধ্যে ঢুকে পরে। এরপর আর খোঁজ মেলে নি এস.এস. স্করপিয়নের। তবে কী সে জাপানিস বা নাৎসি নেভীর শিকার হয়েছে ? কিন্তু জাপানি অথবা নাৎসি বাহিনী কোনো কিছু ধ্বংস করলে তা গর্বের সাথে স্বীকার করে। অথচ তারা এ ব্যাপারে ছিল নিশ্চুপ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নাৎসি এবং জাপানিস নেভীর রেকর্ড চেক করা হয়।

সেখানে এস.এস. স্করপিয়ন ২৭৮ ঘায়েল করার কোনো কথা রেকর্ড ছিল না। মজার কথা এই যে স্করপিয়ন যে জাপানিজ জাহাজটি তাড়া করতে করতে গুম হয়েছিল সেই জাহাজটিও আর পাওয়া যায় নি এবং হারানোর তারিখটিও ছিল ১৩ অক্টোবর ১৯৪২। এরপর আরও দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে। কিন্তু তাদের কারণ বিশ্লেষণ করে কোনো উপযুক্ত ব্যাখ্যা দাড় করানো সম্ভব হয় নি। যদিও ১৯৭৫ সালে লরেন্স ডেভিড কুসচে ‘বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল মিস্ট্রি সলভড’ নামে একটি বই বের করেছিলেন।

যেখানে তিনি বলেছেন যে, এই রহস্যকে লেখকরা জিইয়ে রেখেছেন কিছু মনগড়া কাহিনীর উপর ভিত্তি করে। তিনি এর কিছু ব্যাখ্যাও দাড় করান। যদিও তার ব্যাখ্যাগুলো সর্বস্মম্মতভাবে গৃহীত হয় নি কিন্তু তিনি এই রহস্যকে ঘিরে যে বাণিজ্য শুরু হয়েছিল তার মুখোশ খুলে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। কি ? ব্যাপারটা এখনও ভূতুড়ে মনে হচ্ছে ? বিজ্ঞানীরা এই ভূতুড়ে কাহিনীগুলো বিশ্লেষণ করে মোটামুটি একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করেছেন। যেমন – মিথেন হাইড্রেড সেলভে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ মিথেন গ্যাস অনেক সময় বুদবুদ আকারে বেরিয়ে আসে।

বাতাসের বুদবুদ পানির প্লবতা কমিয়ে দেয়। যার ফলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই জাহাজ ডুবে যায়। আরও একটি কারণ হতে পারে ‘গলফ স্ট্রিম’। এটি হল স্টেট অব ফ্লোরিডা থেকে উত্তর আটলান্টিকের দিকে প্রবাহিত হওয়া একটি উষ্ণ সমুদ্র স্রোত যা যে কোনো ভাসমান বস্তুকে তার বলের বিরুদ্ধে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে স্রোতের অভিমুখে। কিন্তু উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার কোনো ব্যাখ্যা এখনও দেয়া সম্ভব নি।

আর তা ছাড়া ওই এলাকার পানিতে একটি বিশেষ প্রজাতির ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে তার পরিমাণ পানিতে এতই বেড়ে যায় যে একটি পানির অণুর মধ্যে প্রায় এক কোটি ভাইরাস বিদ্যমান থাকে। ধারনা করা হয় কোনো সামুদ্রিক শ্যাওলা থেকে হয়তো এরকম ভাইরাস উৎপন্ন হয়। এটা একটা অস্বাভাবিকতা বটে তবে দুর্ঘটনার সাথে এর সম্পর্ক কী সেটা বের করা যায় নি। ব্যাখ্যাগুলোর মধ্যে অনেকটা যৌক্তিকতা আছে কিন্তু রহস্য পুরোপুরি খোলে নি।

আর রহস্য যত গভীরই হোক না কেন অযৌক্তিক কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষের জ্ঞান ও প্রযুক্তি হয়তো বা এখনও সেই পর্যায়ে পৌছায় নি বারমুডা ট্রাইএঙ্গেলের রহস্য উদঘাটন করার জন্য। কিন্তু তাই বলে কখনও হবে না এটা বলাও তো ঠিক না। একদিন না একদিন আমরা অবশ্যই পারব এই রহস্যের ইতি টানতে। কারণ মানুষ কখনও হার মানে না।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।