আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোমের নিরো কি আসলেই বাঁশি বাজিয়েছিলো?

I’m only an every-day sort of man “রোম যখন পুড়ছিলো, নিরো নাকি বাঁশি বাজাচ্ছিলো। ” যা নিজের চোখে দেখিনা, তা অনেক সময়ই বিশ্বাস করিনা। তাই নিরো কি সত্যিই বাঁশি বাজাচ্ছিলো কিনা তা একদম হলপ করে বলতে পারছিনা। সে তো আর বঙ্গদেশীয় না। বঙ্গদেশীয় সন্তান না হলে ব্যাপারটা তো সত্য নাও হতে পারে।

রোমের ঘটনায় বঙ্গদেশীয়দের সম্পর্ক কি? বিপদের সময় শুধুমাত্র বঙ্গদেশীয়রাই বাঁশি বাজাতে পারে। শুধু যে বাঁশিই বাজায় তা কিন্তু না, তারা বাঁশি বাজানোর প্রতিযোগিতাও করে। সাভারে যখন ভবন ধ্বসে হাজার হাজার শ্রমিক চাপা পড়ে আছে তখন দেশের সরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, “হরতাল সমর্থনকারীদের দেয়াল ধরে নাড়া-চাড়া করার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ” বঙ্গদেশে নতুন করে বাঁশি বাজানো তিনিই শুরু করলেন। অসুস্থ রাজনীতির বাঁশি।

ভবন মালিক সোহেল রানা যখন পলাতক সাভার এর সংসদ সদস্য মুরাদ জং তার বাঁশি তে সুর দিলেন, “ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই”। তাদের যে সম্পর্কের ছবি সাভারের দেয়ালে দেয়ালে ছাপানো, ফেসবুক, ব্লগের যুগে যে তার বাঁশির সুর যে বড় বেখাপ্পা সেটা তিনি বুঝলেন না। ও আমিতো ভুলেই গেলাম অন্য দলগুলোর রাজনীতিবীদদের কথা। রাজনীতি করে চুলপাকানো নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর কাছে ভবন ধ্বসে পড়ার আরেক থিওরী ছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকলে এ ধরণের ঘটনা নাকি ঘটত না। নাড়া-চাড়া থিওরীর গালে এই থিওরী একটা ডাইরেক্ট চপোটাঘাত।

মওদুদ আহমেদ তিনি বিজ্ঞ মানুষ, চিন্তা ভাবনা করেই বললেন সেনাবাহিনীর তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। সবকিছুতে গরিমসি। উদ্ধার চলছে ধীর গতিতে। ঊনারা ব্যাপক গতিশীল মানুষ, 3G যুগের মানুষ। তাই দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া চটপট এসে ছবি তুলে চলে যান! সাভারের মানুষের শরীরগুলো তখন পচতে শুরু করেছে! হতভাগ্য মানুষগুলো মৃত্যুর পরও সৎকারও যখন ভাগ্যে জুটেনি তখনও তাদের লাশের উপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি চললো।

নতুন উজানো হেফাজতীদের মাওলানা রুহী ঘোষনা দিলেন আল্লাহর গজব ছিলো সরকারের প্রতি। কিন্তু গজবে সরকারের কেউ তো মরলো না? রানা তো পালিয়ে গেসে? এইটা কোন ধরনের গজব ছিলো? যাইহোক একটু আগেও পত্রিকায় দেখলাম, আরো গজবের কথা তারা বলে রেখেছেন। নারী সমাজকে মাঠে নামালে আরো গজব নেমে আসবে। গজব কি আরো ভবন ধ্বসের রূপ ধরে নাকি ঊনাদের হাত ধরে আসবে বুঝতে পারতেসিনা। এতটুকুই দোয়া, মানুষের প্রানহানি যাতে না হয় বিশেষ করে গরীব খেটে খাওয়া মানুষদের।

এতো বড় বাঁশি বাজার প্রতিযোগিতা, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী চুপ থাকবেন কেন? কিনলেন একটা বাঁশি বলে দিলেন তার বাণি সুরে সুরে, রানাকে বিদেশে পাঠিয়ে সরকার গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। ঊনার বাঁশির সুর একদম সঠিক হয়ে গিয়েছিলো প্রায়, কিন্তু রানা গ্রেফতার হলো। বঙ্গবীর সাহেব কি বাঁশি বাজান তাই এখন দেখার, সরকারও রানা কে নিয়ে কোন সুর তোলে তাও শোনার বিষয়। বাঁশি বাজানোর প্রতিযোগিতা শুধু রাজনীতিবীদদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলোনা। মিডিয়া কর্মীরাও ছিলেন প্রতিযোগিতায়।

মুন্নি সাহা তার বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষনিকের চিন্তা-প্রসুত বিজ্ঞ মতামত দিচ্ছিলেন। ছোটখাটো রিপোর্টাররা তখন টিভি তে লাইভ এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিয়্যু নিচ্ছেলিন তখনও আটকে থাকা মানুষগুলোর। এক্সক্লুসিভ রিপোর্টের ভীড়ে হারিয়ে যায় মানবতা। উপরে যাদের কথাই বললাম, সবাই হয়তো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। ২/৪ টা খোঁড়া যুক্তিও দাঁড় করাতে পারবেন তাদের বক্তব্যকে সমর্থন করানোর জন্যে।

সবই তাদের কাছে শেষ পর্যন্ত ভোটের রাজনীতি। নিরো কে একা দোষ দিয়ে কি হবে? আমার মনে হয়না নিরো বাঁশি বাজিয়েছিলো। অথবা নিরো নিজেই বাঙ্গালী ছিলো। ওই যুগে কোন ফাঁক গলে হয়তোবা চলে গিয়েছিলো রোমে। বাঙ্গালী কি কি করতে পারে তা বোঝা মুশকিল।

কিছু মানুষের বাঁশি বাজানো দেখলাম আবার মানুষের মানবতাও দেখলাম, ক্লান্তিহীন পরিশ্রমও দেখেছি সাভারে। সাধারণ মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা না থাকলে আটকে পড়া মানুষগুলোর আর্তনাদ ঢাকা পড়ে যেত নানা দিকের নানা সুরের বাঁশির আওয়াজে। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে, সবাইকে পেরিয়ে চ্যানেল আই আর প্রথম আলো ডুগডুগি বাজিয়েছে প্রানভরে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.