আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বান্দরবান ভ্রমনের খুটিনাটি: নীলগীরি থেকে জাদীপাই ঝরনা এবং ছবি ব্লগ: পর্ব ০৪- জাদিপাই ঝরনা

কিবোর্ড নস্ট তাই লিথতে পারি না। জাদিপাই ঝরনা জাদিপাই ঝরনা বান্দরবনের গহীন পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত। আমার দেখা অন্যসব ঝরনার সাথে জাদিপাই ঝরনার কোন তুলনা চলেনা। এই ঝরনার পানি খুব শান্ত এবং স্বচ্ছ। জাদিপাই শব্দের অর্থ কি এনিয়ে আমি ওখানকার লোকদের (পাসিং পাড়ার লোক) প্রশ্ন করলে তারা যে উত্তর দেয় তা স্পষ্ট নয়।

তারা যা বুঝালো তা হলো আগুনের শিখা (তাদের ভাষায় "জাদি")। তারা বলে প্রতিমাসে এক থেকে দুইবার পাহাড়ের কাছে আগুনের শিখা জ্বলতে দেখা যায়। কেওক্রাডং থেকে পূর্ব দিকের পাসিংপাড়া রাস্তা ধরে কিছুটা হাঁটার পর নামতে হবে নিচের দিকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম/পাড়া হিসেবে বিবেচনা করা হয় কেওক্রাডং এর কাছাকাছি পাসিং পাড়াকে। প্রায় ৩২৭০ ফুট উচ্চতার কেওক্রাডং এর পরেই প্রায় ৩০৭৫ ফুট উচ্চতায় এই পাসিং পাড়া।

আমাদের দেশের অন্য কোন পাহাড়ে এত উঁচুতে কোন গ্রাম/পাড়া/জনবসতি নেই। পাসিং পাড়ার লোকজন প্রায় সারা বছরই মেঘে ঢাকা থাকে। পাসিং পাড়া থেকে একেবারে খাড়া ৫০মিনিট নামতে নামতে সামনে পড়বে জাদিপাইপাড়া। ব্রেকফেল গাড়ির মতো তীব্র বেগে নামতে হবে। এখান থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর পাবেন সবচেয়ে বিপদজনক এবং জাদিপাই যাওয়ার শেষ অংশটুকু।

একসময় সামনে পড়বে বড় বড় গাছে ঘেরা পুরো সমতল একটা বন। যার নিচের দিকে নামলেই পাওয়া যাবে রহস্যময় জাদিপাই ঝরনা। পাহাড়ের পানি গড়িয়ে নামতে নামতে পুরো পথের অনেক অংশকেই বিপদজনকভাবে পিচ্ছিল । এর শেষের অংশটুকু এতই বিপদজনক যে, আপনাকে খুব সাবধানে নামতে হবে। একেবারে খাড়া রাস্তা, গাছ ধরে, কখনো গাছের লতা ধরে আপনাকে নামতে হবে।

দুর্গম আর চরম ঝুঁকির পথ শেষে এ যেন অন্য এক পৃথিবী। আমরা জানি পানি যখন যেখানে থাকে তখন সেখানকার রং এবং অবস্থা ধারন করে। কিন্তু এই পানি কখনো হয় বাচাঁর উপায়, আবার কখনও হয় মূত্যুর কারন। যেমন বৃষ্টির পানি কারো কাছে উপভোগ্য, আবার কারো কাছে বিরক্তকর, কারো কাছে ফসল ফলানো উপযুক্ত সময়। আবার বন্যার পানি ধ্বংস লিলা খেলে।

পুকুরের পানি দেখলে সবাই যেমন ক্লান্তি ভুলে ডুব দিতে ছুটে যায়, সাগরের পানি যেমন কৈশোরের দুরন্তপনা ছড়িয়ে দেয় সবার মাঝে, বৃষ্টির পানিতে একবার ভিজতে না পারলে বছরটাই যেমন অর্থহীন মনে হয়। আজ ঠিক তেমন এক ঝরনা দেখলাম। যার কথা লিখে বা গল্প করে বুঝানো যাবে না। যে ঝরনার প্রবেশ পথে এসে থমকে দাঁড়ায় দিনের বাতাস, আকাশসমান গাছের কাছে অনুমতি চেয়ে বেড়ায় ভোরের রোদ্দুর, যে ঝরনায় এখনো কাচের মতো স্বচ্ছ পানি আয়না হয়ে অপেক্ষা করে নতুন কারো কৌতুহলী চোখের জন্য, যে ঝরনা এখনো ইট-পাথরে ঘেরা মানুষের চোখে অদেখা এক রহস্যম ঝরনা। তা লুকিয়ে আছে নিজেকে আড়াল করে এই গহীন পাহাড়ী অরন্যে।

যার নাম ‘জাদিপাই ঝরনা’। কেওক্রাডং থেকে প্রায় ২৫০০ ফুট নীচে নেমে আমরা এখন স্বপ্নের জাদিপাই ঝরনায়। গুরু জবাই করে তার কাটাকাটির কাজ চলছে (জাদিপাই পাড়ায়) এই গুরুই আমরা দুপুরে খাবো। গুরুর মাথা পুড়ানো হচ্ছে (জাদিপাই পাড়ায়) জাদিপাই ঝরনা ঝরনার পানিতে রংধনুর খেলা (এটা দেখে আমি অনেক অবাক হয়েছি, কারন এত কাছ থেকে আর কখনও আমি রংধনু দেখিনি। বলতে পারেন রংধনু ছুয়ে দেখেছি।

ছবি ব্লগ বান্দরবান ভ্রমন এর খুটিনাটি: নীলগীরি থেকে জাদীপাই ঝরনা: পর্ব ০১- নীলগীরি বান্দরবান ভ্রমন এর খুটিনাটি: নীলগীরি থেকে জাদীপাই ঝরনা এবং ছবি ব্লগ: পর্ব ০২-বগালেক বান্দরবান ভ্রমনের খুটিনাটি: নীলগীরি থেকে জাদীপাই ঝরনা এবং ছবি ব্লগ: পর্ব ০৩-কেওক্রাডাং .............................................চলবে..  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।