আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিয়তির পরিহাস

ইহা কঠোরভাবে একটি রাজনীতি মুক্ত ব্লগ । । Destiny বাংলায় যাকে বলে নিয়তি। এক সময় বিশ্বাস করতাম নিয়তি বলে কিছু নেই কিন্তু কালক্রমে জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলি আর ফেলে আসা দিনগুলো তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষন করে মনে হল আসলেই নিয়তি বলে কিছু একটা আছে। শেক্সপিয়ারও বলেছেন, "There's a divinity which shapes our ends, rough hew them how we will"।

আর সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে নিয়তির পরিহাস সেটাও অনুভুত হয় মাঝে মাঝে। যদিও সেগুলো কে নিয়তির নির্মম পরিহাস বলা যাবে না কিছুতেই। প্রজেক্টের কাজ শেষ, ঢাকা থেকে বাড়ি আসব বলে টিকেট কাটলাম অভিজাত বাসে। অনেক ভোর বেলা ঘুম থেকে ঊঠে নাস্তা না করে বাসে ঊঠলাম। কল্যানপুর কাউন্টারে এসে শুনলাম এই বাস নাকি যাবে না, কারণ মাত্র ৫ জন যাত্রী নিয়ে তারা যাবে না, আমাদের জন্য অন্য একটি বাসে টিকিট ম্যানেজ করে দেবে।

মেজাজটা খুব খারাপ হল, তারপরেও বাড়িতো যেতে হবে। আমাকে বলা হল সিট চয়েজ করতে, কারণ আগের বাসের সিট অনুযায়ী পাওয়া যাবে না। দেখলাম একেবারে সামনের সারি আর পিছনের দিকে ফাকা আছে। যানিনা কি মনে করে পিছনের দিকেই নিলাম (এফ সারি)। এবার বলল বাস একঘন্টা পরে ছাড়বে।

কি আর করা, অপেক্ষা করতে থাকলাম বাসে বসে। এরপর বাস ছাড়ার ঠিক আগের মূহুর্তে সানগ্লাস পরিহিত এক ললনা ঊঠল বাসে, প্রথমে চেহারা খেয়াল করিনি। কিন্তু যখন ঠিক আমার সামনের সিটে এক মুরুব্বী মহিলার পাশে সে বসতে গেল তখন তার কন্ঠ শুনে তাকে দেখে চরম ধাক্কা খেলাম। আমিও সানগ্লাস পরা ছিলাম বলে হয়ত আমাকে খেয়াল করেনি প্রথমে, তারপর বসার আগ মুহুর্তে খেয়াল করল, এবং সামনের সিটের উপর দিয়ে আমাকে দেখতে লাগল ভাল ভাবে। দুজনেই সান গ্লাস পরা বলে কেউ কারোর চোখ দেখতে পাচ্ছিনা, আমি চেহারা নির্বিকার করে তাকিয়ে আছি।

আমি শিওর, যে সেও আমাকে দেখে চরম ধাক্কা খেয়েছে আর তার সান গ্লাসে ঢাকা চোখে বিষ্ময় আর ক্রোধ দুটোই ছিল। তখন মনে হল, এটাই মনে হয় নিয়তি আর মনে পড়ল-"Destiny is not going to come to you -- you must go to it." ইয়ার ফোনটা কানে লাগিয়ে উচ্চ স্বরে গান শুনতে শুনতে দীর্ঘ ৯/১০ ঘন্টার যাত্রা শুরু করলাম। আর চার বছর আগের ফেলে আসা স্মৃতি সামনে উপবিষ্ট ললনার মাধ্যমে আরও তীব্র হয়ে চোখে ভাসতে লাগল। খুব জানতে ইচ্ছে হল, কোথায় যাচ্ছে ? এখন প্রেম করে নাকি ? নাকি বিয়ে হয়ে গেছে। দুটোই হতে পারে, এত সুন্দরী স্মার্ট মেয়েরা কখনও সিঙ্গেল থাকে না।

কত স্বপ্ন, কত সুখের কথা শুনিয়েছিল একদিন এই মেয়ে। ওর কত হাসি কান্নার সাক্ষী আমি। আমাকে নিয়েই ও ঘর বাধতে চেয়েছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তার সেই অনুভুতিতে ঘুন ধরে ছিল। একদিনের ঝগড়াই আমাদের মধ্যে শেষ কথা ছিল।

সে আমার পরিবারের একজনকে "F.....C" শব্দ দিয়ে গালি দিয়েছিল, সেই দিন থেকেই আমি সম্পর্কের ইতি টেনেছিলাম। পরবর্তীতে তার অনেক চেষ্টা আর সরি মেইলও, মেসেজ আমার সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে পারিনি। হয়ত তার মত ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া এযুগের তথাকথিত স্মার্টদের কাছে ইংলিশ গালি ডালভাতের মত। এইতো সেদিন একজন বলল "গো টু হেল"। কিন্তু এইসব গালিগুলো কেন যেন আমার কাছে অনেক সিরিয়াস।

এত দেশ ঘুরে, ইংলিশ মেডিয়াম এর বিদেশী বড় ডিগ্রি ধারন করেও কেন জানি এদের মত স্মার্ট হতে পারলাম না। আফসুস ঘন্টা দুয়েক পরেই , আমার ঠিক সামনের সিটের মহিলা বমি করা শুরু করলেন। মহিলা তার পাশের মেয়েটিকে রিকোয়েস্ট করছেন আমার পাশে এসে বসার জন্য, কারন আমার পাশের সিটটা খালি। উনি একটু শুতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু ললনা কোন ভাবেই রাজী হচ্ছে না, আর বলছে উনি যেন এসে আমার পাশে বসেন।

মহিলার করুন অনুরোধে তার মন গলছে না। আমি জানি না নিয়তি কি খেলা খেলছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম কি হতে যাচ্ছে-যে ওর শেষ পর্যন্ত আমার পাশে এসেই বসতে হবে। অনেক চেষ্টা করেও না পেরে সে রাজী হল কিন্তু শর্ত সে জানালার সাইডে বসবে। সুপারভাইজার এসে আমাকে অনুরোধ করল। ওই মহিলার দিকে তাকিয়ে মেনে নিলাম গম্ভির মুখে।

অবশেষে আবার আমরা সেই দুজন অনেক বছর পর, পাশা পাশি বসে আছি। কিন্তু সেই আগের মধুর সম্পর্কটা আর নেই। হয়ত এখন সে আর আমার মঙ্গল কামনা করেনা। জেমসের একটা গানের কথা মনে পড়ল, "আজকে যাকে বন্ধু ভাবিস, সে কখন শত্রু হয়/ বন্ধু চেনা, শত্রু চেনার আছে কি কোন উপায় ??" ভালো করে খেয়াল করলাম, আগের থেকেও মনে হয় স্লিম হয়েছে- কোন কথা না বলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আর আমিও নিয়তির প্রতি মুচকি হেসে, গান শুনতে শুনতে রওনা দিলাম।

এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়ল। তার সেই ভারী ঘন চুলগুলো, মুখের এক পাশে এসে পড়েছে। কি নির্মল সে দৃশ্য, এই ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। একটাই তো জীবন, কি দরকার শত্রুতা পূষে রেখে। যেমন Freedom of Speech Writing Out Loud বইতে ERIC HARVEY বলছেন যে Destiny will show when it's time." হয়ত নিয়তি চেয়েছিল ঠিক এই সময় তাকে আমার পাশে বসাতে, যেন আমরা পূর্বের সমস্ত রাগ অনুরাগ ভুলে যেতে পারি।

তারপরের টুকু আর গল্পের নামের সাথে মিল না থাকায় সংযুক্ত করা হল না (বিঃদ্রঃ এই কাহিনীর সাথে বাস্তবের মিল নাই বললেই চলে। আর ছবিটি অবশ্যই বরাবরের মত গুগল থেকে পাওয়া। )  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।