আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুজব থেকে সাবধান!!! জেনে নিন গুজব বা রটনা কিভাবে তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পরে।

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। “এই নিয়েছে ঐ নিল যা:! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে। ” গুজবের নগরী ঢাকা, আজাবের নগরী ঢাকা, সুযোগসন্ধানীর ঢাকা। এক শ্রেণীর লোক আছে যারা সুযোগের সন্ধানে থাকে, ঘর পোড়ার মাঝে আলু পোড়া দিয়ে কইয়ের তেলে কৈ ভাজার তালে থাকে। কিংবা বলা যায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকারী।

এদের কোন নীতি নেই, ধর্ম নেই। ঢাকা শহর, টাকার শহর। আকাশে বাতাসে শুধু টাকার ওড়াওড়ি। এই টাকার সন্ধানেই লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় ছোটে। গ্রামের লাঙ্গল বলদ ছুড়ে দিয়ে রিক্সার হ্যান্ডেল ঘোরায়, কেউ বা কুড়ে ঘর ছেড়ে টাকা ধরার ধান্দায় ওঠে বস্তির ছাপরা ঘরে।

এদের কেউ সত্যি সত্যি সৎ পথে থেকে টাকার সন্ধান পায়, আবার কেউ কেউ টাকা ধরতে অন্ধকারে পা বাড়ায়, অধিকাংশের কাছেই টাকা অধরাই থেকে যায়। গত ক’দিন ঢাকায় একের পর এক দূর্যোগের খবরে দেশাবাসী ভরকে গেছে, অজানা আতংকে কাটছে জীবন। কোন কিছুতেই আজ আর বিশ্বাস নেই। যে বাড়ীতে বসবাস, সে বাড়ী যে আজই ভেঙ্গে পড়বে না, তার নিশ্চয়তা নেই, যে বাসে চড়ে অফিসে যাই সে বাসে যে আগুন লেগে ভষ্মীভূত হয়ে যাবে না তার নিশ্চয়তা নেই। যে পানি পান করছি তা খেয়ে আজ যে মহামারী ছড়িয়ে পড়বে না তার নিশ্চয়তা নেই।

মোট কথা আস্থা রাখার এখন আর কোন স্থান নেই। তবুও জীবন থেমে থাকে না। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধেও জীবন থেকে থাকেনি, অনেকেই বিয়ে করেছেন, সন্তান জন্ম দিয়েছেন। আসলে জীবনটাই তো এক অসমাপ্ত সংগ্রামের নাম, যার শুরু আছে শেষ নেই। তাই যত বিপদ আপদই আসুক না কেন, জীবন ঠিকই চলতে থাকে।

হুট করেই সব কিছু বদলানো যাবে না, ধীরে ধীরে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ঘর বাড়ী, যানবাহন ইত্যাদি বদলাতে হবে। ততদিন তো আর বসে থাকা যাবে না, সতকর্তার সাথেই চলতে হবে। কিন্তু এক শ্রেণীর লোক আছে যাদের কাজ এ দূর্যোগের মাঝে আতংক ছড়ানো। কিছু লোক আছে যারা মানষিক বিকারগ্রস্থ, যারা গুজব ছড়িয়ে আনন্দ পায়। আবার কেউ কেউ গুজব ছড়ায় অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে।

এ মুহুর্তে ঢাকা মহানগরীতে আগুন লাগার গুজব ছড়িয়ে কিংবা বিল্ডিং হেলে পড়ার গুজব ছড়িয়ে এক শ্রেণীর লোক অসদ উদ্দেশ্য পূরণে সচেষ্ট হবে। এদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। বিল্ডিং ধ্বসে পড়ছে, এমন গুজব শুনলে কোন কিছুর বাছ-বিচার না করেই অনেকে হুড়োহুড়ি ছুটোছুটি করবে, দরজা জানালা খোলা রেখে নেমে আসবে রাস্তায়। আর এমন সুযোগে মূল্যবান টাকা পয়সা, অলংকার ডাকাতির মহোৎসবে নামবে ওরা। আর কে না জানে আগুনে যত না মানুষ মারা যায় তার চেয়ে বেশী মারা যায় আগুন থেকে বাঁচতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে।

বিগত সিডরের সময় এমন কিছু নরপিশাচদের সন্ধান মেলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। প্রতিদিনই মহা বিপদ সংকেতের খবর আসতো বিভিন্ন গ্রামে মোবাইলের মাধ্যমে। বিদ্যুত বিপর্যয়ের কারণে লোকজনের পক্ষে রেড়িও টিভি শোনার সুযোগ ছিলনা বিধায়, মোবাইলই ছিল ভরসা। একেকটি গ্রামে ভয়ংকর জলোচ্ছাসের গুজব ছড়িয়ে লোকজনকে ঘরের বাইরে এনে বেশ কিছু ডাকাতি এমনকি হত্যাকান্ডও ঘটেছে সে সময়। মোটকথা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে দাড়িয়েছিল মানুষরূপী হায়েনাসৃষ্ট বিপর্যয়গুলো।

তাই সবাইকে অনুরোধ, হুট করে যে কোন গুজবে কান দেবেন না। যে কোন খবর শুনলে প্রথম অন্তত একটি মিনিট ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, ছোট্ট শিশুদেরকে বিপদের খবর না দিয়ে সহজভাবে বিল্ডিংএর বাইরে আনুন, আর অবশ্যই বাসার নারীদেরকে আতংকিত করে তুলবেন না। তাহলে হয়তো অনেককেই সজ্ঞাহীন অবস্থায় ঘাড়ে করে ঘরের বাইরে আনতে হতে পারে, যা ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই গুজবের অংকটা “ইয়াকভ পেরেলমান” এর মূল লেখা থেকে অনূবাদ করা হলো। ভাবানুবাদ করা হয়েছে লেখাটি ভালো না লাগলে দয়া করে ইয়কভ পেরেলমানকে দোষারূপ করবেন না সব দ্বায়ভার অনূবাদকারীর।

উল্লেখ্য পেরেলমান যখন এই লেখাটি লিখেছিলেন তখন মিডিয়ার এত প্রভাব ছিলো না ; দয়া করে কেউ মিডিয়াকে টেনে আনবেন না। গুজব, ঘটনা বা রটনা যে কতো তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে তা আমরা সবাই জানি। একটা ঘটনা বা র্দুঘটনা হয়তো সরাসরি চোখে দেখেছে মাত্র কয়েক জন। অথবা বানোয়াট কোনো কথাও হতে পারে। কিন্তু দু’এক ঘন্টার মধ্যে লোকের মুখে মুখে রটিয়ে পড়ে সারা শহরে।

এর অসাধারণ গতি দেখলে অবাক হতে হয়। কেউ কি ভেবে দেখেছেন এত দ্রুত কিভাবে ছড়িয়ে পরে। কিন্তু সমস্ত ব্যাপারটা অংকের সাহায্যে দেখলে দেখা যাবে এর ভিতর তেমন কোনো চমক লাগানো ব্যাপার নেই। আসুন অংকের মাধ্যমে ব্যাপারটি দেখি রাজধানী থেকে একটা চমকপ্রদ খবর নিয়ে একজন লোক তার নিজের শহরে এলো। ধরুন সেই শহরে ৫০,০০০(পঞ্চাশ হাজার) লোক বাস করে।

সে নিজ শহরে এসে তিনজন মাত্র লোককে কথাটি বললো। মনে করুন তাতে তার সময় লাগলো ১৫মিনিট। তাহলে, লোকটি পৌঁছাবার ১৫মিনিট পরে, ধরা যাক ৮ টা ১৫ মিনিটে খবরটা জানলো মাত্র চারজন। সে নিজে আর স্থানীয় তিনজন বাসিন্দা। এই তিনজনের প্রত্যেকেই অন্য তিনজনকে খবরটা বলতে বেরিয়ে গেলো।

এতে লাগলো আরও ১৫মিনিট। তাহলে আধাঘন্টা বাদে, ৪+(৩x৩)=১৩ জন লোকের ভেতর সংবাদটা জানাজানি হয়ে গেলো। শেষ যে নয়জন কথাটা জেনেছিলো, তারা আবার তিনজন করে বন্ধু বান্ধবকে ঘটনাটা জানালো। সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটে খবরটা জানলো : ১৩+(৩x৯)=৪০ জন বাসিন্দা। চমকপ্রদ গুজবটি যদি এভাবে ছড়াতে থাকে, অর্থাৎ শোনবার ১৫ মিনিটের ভেতর প্রত্যেকেই যদি আর তিনজনকে খবরটা বল, তাহলে ফলাফলটা এমন দেখাবে।

সকাল ৯টার সময় খবরটা জানবে ৪০+(৩x২৭)=১২১ জন সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে খবরটা জানবে ১২১+(৩x৮১)=৩৬৪ সকাল ৯টা ৩০মিনিটে খবরটা জানবে ৩৬৪+(৩x২৪৩)=১০৯৩ জন। তার মানে দাঁড়াচ্ছে দের ঘন্টার ব্যাবধানে খবরটা জানাজানি হবে প্রায় ১১০০জনের মধ্যে। ৫০,০০০ জনের শহরে অবশ্য ১১০০জনকে তেমন বেশী মনে হচ্ছে না। কেউ কেউ ভাবতে পারেন সমস্ত শহরে গুজবটি জানতে সময় লাগবে। দেখা যাক পরবর্তি ধাপগুলো।

সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে খবরটা জানবে ১০৯৩+(৩x৭২৯)=৩২৮০ সকাল ১০টা নাগাদ খবরটা জানবে ৩২৮০+(৩x২১৮৭)=৯৮৪১ সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে খবরটা জানবে ৯৮৪১+(৩x৬৫৬১)=২৯,৫২৪ (শহরের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশী মানুষ) দেখা যাচ্ছে সকাল ৮টার সময় যে খবরটি জানতো একজন সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে খবরটা শহরের সবাই জেনে যাবে। খবরটা ছড়ানোর সংখাগুলোর দিকে একটু নজর দিলে দেখা যাচ্ছে- ১+৩+(৩x৩)+(৩ x ৩ x ৩)+(৩ x ৩ x ৩ x ৩)+ ……এভাবে...............  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।