আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশুলিয়া ট্রাজেডি কোন পথে ?

কথায় আছে পেটে থাকলে, পিঠে সয়। কিন্তু পিঠে আর সইল কই ? পেটের আগুন নেভাতে গিয়ে কুচক্রি মহলের দেয়া ক্ষোভের আগুনে পুড়ে আঙ্গার হতে হল শত শত তরতাজা প্রাণকে। আশুলিয়া ট্রাজেডির কথা বলছি। গত শনিবার রাতে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন ফ্যাশনে সর্বগ্রাসি আগুনে পোষাকশিল্পে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদিও বলা হয়েছে এই দূর্ঘটনায় ১১১ জন শ্রমিক মারা গেছে।

প্রকৃত পক্ষে প্রাণহানির সংখ্যা দুই শতাধিক হবে। কারণ, লাশগুলো পুড়ে এমন অবস্থা হয়েছিল যে, কোন কোন দেহে কঙ্কাল ছাড়া আর কিছুই পায়নি উদ্ধারকারীরা। এমতাবস্থায়, একটি প‌্যাকেটে দু তিনটা লাশের হাড়-হাড্ডি ঢুকানো হয়েছে বলে অনেকের ধারনা। এখনও অনেক শ্রমিক নিখোজ আছে। যাদের কে হণ্যে হয়ে খুজছে তাদের স্বজনরা।

প্রিয়জনের পথপানে এখনো চেয়ে আছে অনেক স্বজন। এরা কোন মন্ত্রী/মিনিষ্টার নয়। নয় কোন আমলা, শিল্পপতি,ব্যবসায়ী। এরা খেটে খাওয়া সাধারণ মেহনতি মানুষ। এরা জীবন সংগ্রামে জয়ী বীর।

যাদের সম্মান জানাতে শেখেনি এদেশের শিল্পপতি/ব্যবসায়ী সমাজ। নাম মাত্র মজুরী দিয়ে যাদের ঘাম ঝরানো শ্রম দ্বারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে এদেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি, স্বনামধন্য ব্যাক্তিরা। যাদের হঁাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমে বৈদেশিক মুদ্রার দ্বারা মজবুত হয়েছে এদেশের অর্থনীতির ভীত। আজ তাদের একি বেহাল দশা। কি পেল তারা এই দেশ, এই রাষ্ট্রের কাছে ? পেয়েছে।

অন্তত ৫৫ জন হতভাগা এক খন্ড করে ভূমি পেয়েছে এদেশের মানচিত্রে জুরাইন নামক কবরস্থানে। সাড়ে তিন হাত আয়তনের একটি করে মাটির ঘর। এরা এমনই হতভাগা যে, মা, বাবা, ভাই-বোন সহ অসংখ্য আত্তিয় স্বজন থাকতেও বেওয়ারিশ হিসেবেই শেষ বিদায় নিয়ে পরপারে চলে যেতে হল তাদের। এক খন্ড করে হলেও সবারই জন্মস্থান ভিটেবাড়ী ছিল কিন্তু, সেখানেও শেষ ঘুমটা ঘুমানো হল না তাদের। এর চেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা আর কি হতে পারে ।

কোথা থেকে এই আগুনের সুত্রপাত । কিভাবে এই অগ্নিকান্ড ঘটল। কারা ঘটাল, কারাই বা এর হোতা, এর পেছনে কাদের ইন্ধন রয়েছে। রাঘব বোয়ালরা কি আইনের মুখোমুখি হবে ? অনুসন্ধানী মন জানতে চায় এসব তথ্য। কতটুকুই বা জানতে পারবো আমরা।

পূর্ব অভিঙ্গতা হতে বলতে পারি, এর জন্য তদন্ত কমিটি হবে (যা ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে)। দূর্ঘটনা বন্ধে নিতিমালা হবে। সুষ্ঠু তদন্ত হবে। যারা দোষী তাদের বিচার হবে, ব্যস.............সব হবে। এই হবে হবের মধ্যেই সময়ের দেলাচলে সবই পরিকল্পনার রঙ্গিন মোড়কে মুড়িয়ে লাল ফিতাবন্দি করে রাখা হবে।

অন্তত এটুকু এদেশের সাধারণ মানুষরাও বুঝে। প্রমান হিসেবে বলতে পারি পূরাণ ঢাকার নিমতলি ট্রাজেডির কথা। যে ক্ষত এখনও শুকায়নি নিমতলির মানুষর। আগুনের লেলিহান শিখায় বিয়েবাড়িতে শতাধিক প্রাণহানী ঘটেছিল। আমরা সবাই জানি, ওই অগ্নিকান্ডে আগুন এত বিধ্বংশী হয়ে উঠেছিল নিমতলীর অলিতে গলিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কেমিক্যাল ফ্যাক্টরী গুলোর জন্য।

ঘটনার পরপরই সরকারী ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল কেমিক্যাল গুদাম গুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু, সরকারী িনর্দেশ অমান্য করে এখনও নিমতলীতে অবস্থান করছে সেই অবৈধ কেমিক্যাল গুদাম গুলো। আশুলিয়া ট্রাজেডিরও যে এমন অবস্থা হবে না, এই নিশ্চয়তা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে কে দেবে ? কে দেবে নিরাপত্তা গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক কে ? যারা নিজের জীবন মুনাফা লোভী কিছু মানুষের হাতে সপে দিয়ে প্রতিদিন ঢুকছে গার্মেন্টস নামক অগ্নি-কুন্ডে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.